পুলিশ পরিদর্শকের নেতৃত্বে ডাকাতি, সাউন্ড করলে শেষ করে দেব
গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : ঢাকা মহানগর পুলিশের পরিদর্শক পদমর্যাদার একজন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ডাকাতি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় ডাকাতির মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে ওই পুলিশ কর্মকর্তা এখন কারাগারে আছেন।
তেজগাঁও থানা-পুলিশ ঢাকার আদালতকে জানিয়েছে, ডাকাতি মামলার এক নম্বর আসামি হলেন হুমায়ুন কবির (৩৭)। তিনি পুলিশের অ্যান্টি টেররিজম ইউনিটের একজন পরিদর্শক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) বিপ্লব কুমার সরকার মঙ্গলবার বলেন, ডাকাতির মামলায় কাউন্টার টেররিজমের পরিদর্শক হুমায়ুন কবিরকে গ্রেপ্তার করা হয়। আদালতের আদেশ তিনি কারাগারে আছেন।
তবে পুলিশ কর্মকর্তা হুমায়ুন কবিরের আইনজীবী লিখিতভাবে আদালতের কাছে দাবি করেছেন, ডাকাতির ঘটনার সঙ্গে হুমায়ুন কবির জড়িত নন। তাঁকে ষড়যন্ত্র করে এ মামলায় জড়িত করা হয়েছে। হুমায়ুন কবীর গত ২৭ ফেব্রুয়ারি গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন।
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি রাতে ডাকাতির কবল পড়েন বাংলাদেশ ফিল্ম প্রডাকশনের সহকারী ব্যবস্থাপক শাহজাহান সরকার। ডাকাত দলের সদস্যরা শাহজাহানকে মারধর করে তাঁর মোটরসাইকেল কেড়ে নেয়। একই সঙ্গে এটিএম কার্ডের গোপন পিন নম্বর এবং বিকাশের গোপন পিন নম্বর জেনে নেয় ডাকাতরা। এ ঘটনায় শাহজাহান সরকার বাদী হয়ে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা করেন।
মামলায় শাহজাহান সরকার অভিযোগ করেন, সেদিন রাত ১২ টা ১০ মিনিটে নিজের মোটরসাইকেলে করে পুলিশ প্লাজা থেকে মহাখালীর উদ্দেশ্যে রওনা হন। রাত ১২ টা ১৫ মিনিটে লিংক রোডের শান্তা ওয়েস্টার্ন টাওয়ারের সামনে আসলে এক লোক তাঁকে থামার জন্য নির্দেশ দেন। তাঁর বয়স ছিল ৩০ কিংবা ৩৫ বছর। শাহজাহান তখন দাঁড়ান। সেখান থেকে পাঁচ গজ দূরে দাঁড়ানো সাদা রঙের প্রাইভেটকার থেকে তিনজন লোক নেমে আসেন। এর মধ্যে একজনের বয়স ৩৫ কিংবা ৩৬ বছর। তাঁর গায়ের রং শ্যামলা। মাথার চুল ছোট। কোমরে ওয়ারলেস সেট ছিল। একটা কার্ড দেখিয়ে বলেন, তিনি পুলিশের লোক। ক্রাইমের স্পেশাল অফিসার। তখন ওই লোকটি তাঁর দুই সহযোগীকে নির্দেশ দেন, শাহজাহানের দেহ তল্লাশি করার জন্য।
মামলায় আরও বলা হয়, শাহজাহানের কাছে থাকা জাতীয় পরিচয়পত্র, ব্যাংকের এটিএম কার্ড, নগদ সাড়ে আট হাজার টাকা, একটি মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়। তখন শাহজাহানকে প্রাইভেট কারে তোলার চেষ্টা করা হয়। ভুক্তভোগী শাহজাহান বাধা দেন। তখন ডাকাত দলের সদস্যরা মারধর করে তাঁকে প্রাইভেট কারে তোলে। পরে শাহজাহানের কাছে এটিএম কার্ডের গোপন নম্বর চায়। না দিতে চাইলে লাঠি দিয়ে মারধর করে। একপর্যায়ে বাধ্য হয়ে এটিএম কার্ডের পিন নম্বর বলে দেন শাহজাহান। পরে ডাকাতরা মহাখালীর ডাচ বাংলার এটিএম বুথে যায়। ডাকাত দলের একজন সদস্য সেখানে ঢুকে আবার গাড়ির কাছে আসে। শাহজাহানকে বলে, কার্ড বুথে আটকে গেছে। তখন ডাকাত দলের সদস্যরা মারধর করে শাহজাহানের বিকাশ নম্বরের গোপন পিন নম্বর নিয়ে নেয়। তখন প্রাইভেটকারটি হাতিরঝিলে আসে। বিকাশ নম্বর থেকে আড়াই হাজার টাকা নিয়ে নেয়।
হাতিরঝিলে গাড়ি থেকে নামিয়ে ডাকাত দলের সদস্যরা শাহজাহানকে হুমকি দিয়ে বলে, ‘সোজামতো বাড়ি যাবি। কোথাও কোনো সাউন্ড করবি না। সাউন্ড করলে তোকে শেষ করে দেব। রাত বাজে তখন ২টা ৩০ মিনিট।’
শাহজাহান সরকার বলেন, ডাকাত দলের সদস্যরা মোটরসাইকেল নিয়ে চলে যায়। পুলিশ পরিচয় দিয়ে ডাকাতি করে। ডাকাত দলের সদস্যদের বয়স ২৫ থেকে ৩৮ বছরের মধ্যে।
এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে হুমায়ুন কবির ও মহরম নামের দুজন আসামিকে গ্রেপ্তার করে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকার আদালতে হাজির করে পুলিশ। ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটনের জন্য সাত দিন রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তেজগাঁও থানার পরিদর্শক মোহাম্মদ রাশেদুজ্জামান। আদালতকে পুলিশ প্রতিবেদন দিয়ে বলেছে, মামলার এক নম্বর আসামি হুমায়ুন কবির কাউন্টার টেররিজম ইউনিটে কর্মরত পুলিশ পরিদর্শক বলে জানা যায়।
এক নম্বর আসামি হুমায়ুন কবিরের কাছ থেকে জব্দ করা মোবাইল বিকাশ নম্বর-এ ট্রানজেকশন (স্থানান্তর) করা। বিকাশের মোবাইল সেট, ড্রাইভিং লাইসেন্স হুমায়ুন কবিরের কাছ থেকে জব্দ করা হয়। আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে অপরাধের ঘটনার কথা স্বীকার করলেও বাদীর লুণ্ঠিত মালামাল ও সহযোগী অপরাপর আসামিদের কথা এড়িয়ে যায়। আদালত সেদিন হুমায়ুন কবির ও মহরমকে এক দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দেন।
ডাকাতির ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে কাউছার ও মনিরুজ্জামান আরও দুজনকে আসামিকে গ্রেপ্তার করে গত ১ মার্চ ঢাকার আদালতে হাজির করে পুলিশ। সেদিন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক মোহাম্মদ রাশেদুজ্জামান আদালতকে এক প্রতিবেদন দিয়ে জানান, আসামি মহরমের তথ্য ও দেখানো মতে বাদী শাহজাহানের লুণ্ঠন করা মোটরসাইকেল কাউছারের হেফাজত থেকে উদ্ধার করা হয়। মনিরুজ্জামানের কাছে বাদীর মুঠোফোন জব্দ করা হয়। আদালত সেদিন কাউছার ও মনিরুজ্জামানের এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। গত ৩ মার্চ ডাকাতির ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে ঢাকার আদালতে জবানবন্দি দেন আসামি কাউছার ও মনিরুজ্জামান।
তদন্ত কর্মকর্তা তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার পরিদর্শক মোহাম্মদ রাশেদুজ্জামান বলেন, ডাকাতির মামলায় হুমায়ুন কবিরসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁরা এখন কারাগারে আছেন।
সূত্র: প্রথম আলো