গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : জামায়াত ইসলামী বাদে বিএনপি বা অন্য যে কোনও দল থেকে এসে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করা যাবে। তবে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তাদের বড় পদ দেওয়া হবে না। এই শর্তে আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়ার সুযোগ রয়েছে মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বাসী অন্য দলের নেতা-কর্মীদের। আর আওয়ামী লীগের নীতি-আদর্শে বিশ্বাস করে নতুন যোগ দেওয়া এসব ব্যক্তিকে অনুপ্রবেশকারী হিসেবেও বিবেচনা করা হবে না।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা এসব কথা জানান। তারা বলেন, আওয়ামী লীগের কাছে অনুপ্রবেশকারী তারা, যারা দলে ঢুকে আওয়ামী লীগের নীতি-আদর্শের বাইরে নেতিবাচক রাজনীতি করে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করেন ও অসাম্প্রদায়িক চিন্তার ধারক-বাহক, তাদের জন্য আওয়ামী লীগের দরজা খোলা। আওয়ামী লীগের বাইরেও অন্য সংগঠনের জনপ্রিয় নেতা থাকতেই পারেন। ওই জনপ্রিয় নেতারা যদি মনে করেন এতদিন তারা ভুল পথ ও আদর্শের রাজনীতি করেছেন, বিষয়টি উপলব্ধি করে এখন তারা সঠিক পথ-মতের রাজনীতি করতে ইচ্ছুক, তাহলে তাদের সে ইচ্ছাকে বাধা দিতে চায় না আওয়ামী লীগ। তারা আওয়ামী লীগে যোগ দিতে পারেন, তারা অনুপ্রবেশকারী হিসেবেও চিহ্নিত হবেন না।
ক্ষমতাসীন দলের নেতারা জানান, তবে তাদের ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের কৌশল হলো- দলে নেওয়া হলেও তাদের রাতারাতি বড় কোনও পদ দেওয়া যাবে না। বড় পদ পেতে সদস্য পদে থেকে অন্তত পাঁচ থেকে সাতবছর রাজনীতি করতে হবে তাকে।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলির সদস্য ফারুক খান বলেন, অন্য কোনও দলের জনপ্রিয় নেতা অতীতে ভুল করেছেন এমনটা মনে হতে পারে তার। মনে হতে পারে আওয়ামী লীগের নীতি-আদর্শ ও কমিটমেন্ট অন্য রাজনৈতিক দলের চেয়ে ভালো। ওই ব্যক্তি দল ত্যাগ করে আসতে চাইলে, আওয়ামী লীগ সেই পথরুদ্ধ করে রাখতে পারে না।
তিনি বলেন, প্রত্যেক দলের নিজস্ব রাজনীতি আছে। জনপ্রিয়তার মাপকাঠি থাকে। জন সমর্থনের ব্যাপার থাকে। সেই প্রশ্নে এই কৌশল নিতেই পারি আমরা।
ফারুক খান আরও বলেন, একজন ব্যক্তি বিএনপি বা অন্য দল করতো। তার পরের প্রজন্ম আওয়ামী লীগ করতেই পারে।
তিনি বলেন, আমরা দেখতে চাই, দল ত্যাগের উদ্দেশ্য কী? সুবিধা নেওয়া, অতীত অপকর্ম থেকে বাঁচতে চাওয়া এবং আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি নষ্ট করা লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কী-না। এসব ঠিক থাকলে, জনসেবার প্রকৃত মানসিকতা থাকলে, আওয়ামী লীগ করার সুযোগ আমরা দিবো।
তিনি বলেন, অনুপ্রবেশ বিতর্ক আছে আওয়ামী লীগে। আমরা তাদেরই অনুপ্রবেশকারী হিসেবে চিহ্নিত করবো, যারা আওয়ামী লীগে ঢুকে যেকোনও স্তরের কমিটিতে বড় পদ বাগিয়ে নিয়েছেন অথবা ভাবমূর্তি নষ্ট করার কাজে যুক্ত আছেন। সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগের নীতি আদর্শে বিশ্বাস করে এ দল করতে চাইলে তাকে অবশ্যই পাঁচ থেকে সাতবছর সদস্য হিসেবে থাকতে হবে। বড় কোনও পদ তাকে দেওয়া হবে না।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করে, অসাম্প্রদায়িক চেতনার রাজনীতি করে- তারা যেখানেই থাকুক আওয়ামী লীগের দরজা তাদের জন্য বন্ধ নয়। আমরা তাদের অনুপ্রবেশকারী হিসেবে দেখি না। যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী, সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিষবাষ্প ছড়ায়, তারাই মূলত অনুপ্রবেশকারী। তাদের জায়গা আওয়ামী লীগে হবে না।
এই প্রশ্নে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বলেন, অনেকেই ২০১০/১১ সালে আওয়ামী লীগে ঢুকে গেছেন এবং দলের নীতি-আদর্শ মেনে রাজনীতি করছেন। তাদের অনুপ্রবেশকারী বলা যাবে না। এতদিনে সংগঠনে তাদের শেকড় অনেক গভীরে চলে গেছে। চাইলেও তাদের বাদ দিতে পারবো না। তিনি বলেন, এবার তাই আমরা ভিন্ন কৌশল গ্রহণ করেছি। আমরা যাচাই-বাছাই করছি যাদের অনুপ্রবেশ ঘটেছে গত এক যুগে তারা সংগঠনে বড় পদ আসীন করে বসে আছেন কী-না? দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করার সঙ্গে জড়িত কী-না? এ দুটি বিষয় ঠিক থাকলে ভিন্ন দল থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়া নেতাদের ব্যাপারে অ্যাকশন নেওয়া নাও হতে পারে।
আওয়ামী লীগের অন্য সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেন, সাংগঠনিক সফরে নেমে আমরা দেখছি যে, অনুপ্রবেশকারী কারা দলের জন্য ক্ষতিকর। আমরা তাদের খুঁজে বের করবো এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। অন্য দল থেকে আসা জনপ্রিয় নেতা যদি আওয়ামী লীগকে জনপ্রিয় করার কাজে নিয়োজিত থাকেন তার রাজনীতি করতে অসুবিধা নাই।
সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন