কালীগঞ্জে চেয়ারম্যান প্রার্থীর অফিস থেকে অস্ত্র উদ্ধার: আ. লীগ নেতার বিরুদ্ধে পুলিশের মামলা
গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : কালীগঞ্জে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থীর নির্বাচনী অফিস থেকে বিদেশী পিস্তল উদ্ধারের ঘটনায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ দপ্তর সম্পাদক আসাদুজ্জামান বরুণসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে পুলিশ।
বোরবার (২০ জুন) দিবাগত রাতে পুলিশ বাদী হয়ে কালীগঞ্জ থানায় তিন জনের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলা দায়ের করেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মামলার বাদী গাজীপুর জেলা গোয়েন্দা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) জিহাদুল ইসলাম।
মামলায় আসাদুজ্জামান বরুণকে (৪০) গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। এছাড়াও সাইফুল ইসলাম মোড়ল (৩৮) এবং নেছার উদ্দিনের (৪২) নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাত আরো ৭/৮ জনকে আসামি করা হয়েছে।
গ্রেপ্তার আসাদুজ্জামান বরুণ জামালপুর গ্রামের মৃত আরমান মাস্টারের ছেলে। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ দপ্তর সম্পাদক। অপর আসামি সাইফুল ইসলাম মোড়ল এই এলাকার মোসলেহ উদ্দিন মোড়লের ছেলে এবং মৃত ইব্রাহিম মুন্সির ছেলে নেছার উদ্দিন।
সাইফুল ইসলাম মোড়ল উপজেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক এবং নেছার উদ্দিন মোড়ল জামালপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কালীগঞ্জের জামালপুর ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী মাহবুবুর রহমান খাঁন ফারুক মাস্টারের নির্বাচনী অফিস থেকে বিদেশী পিস্তল ও দুই রাউন্ড গুলি এবং একটি ম্যাগজিন জব্দ করেছে পুলিশ।
মামলার বাদী গাজীপুর জেলা গোয়েন্দা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) জিহাদুল ইসলাম এজাহারে উল্লেখ করেছেন, ‘রোববার দুপুর আনুমানিক সাড়ে ১২ টার দিকে জামালপুরের গোল্লারটেক চৌরাস্তা এলাকায় পূর্ব শত্রুতার জের ধরে কালীগঞ্জ উপজেলা যুবলীগের সভাপতি এস এম আলমগীর হোসেন এবং তার বোন শাহিনুর বেগমের সঙ্গে আসাদুজ্জামান বরুণ, সাইফুল ইসলাম মোড়ল এবং নেছার উদ্দিন মোড়লসহ অজ্ঞাত আরও সাত-আটজনের কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে আলমগীর ও তার বোন শাহিনুর বেগমকে অভিযুক্তরা মারধর করে হত্যার উদ্দেশ্যে অস্ত্র প্রদর্শন করে। সে সময় তাদের ডাক-চিৎকারে বাজারের দোকানদার ও স্থানীয়রা এগিয়ে আসলে বরুনসহ তার সহযোগীরা দৌড়ে পাশে থাকা ফারুক মাস্টারের নির্বাচনী অফিসে প্রবেশ করে। পরে স্থানীয়রা নির্বাচনী অফিস ঘেরাও করে। এ সময় বরুণসহ অন্যরা পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে আসাদুজ্জামান বরুণকে জহুরুদ্দিনের বাড়িতে অবরুদ্ধ রেখে মারধর করে স্থানীয়রা। অন্যরা পালিয়ে যায়। পরে তাকে উদ্ধার করে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়।’
এজাহারে আরো উল্লেখ আছে, ‘সে সময় অস্ত্রের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে বরুণ জানায় তার অস্ত্র জনৈক ফারুক মাস্টারের নির্বাচনী অফিসের সিলিং-এর উপরে রাখা আছে। পরে স্থানীয় সাক্ষীদের সামনে দুপুর ১টা ৩০ মিনিটের দিকে কাঠের বাট যুক্ত বিদেশি পিস্তল (মেডিন ইন্ডিয়া), দুই রাউন্ড গুলি এবং একটি ম্যাগজিন জব্দ করা হয়।’
‘গ্রেপ্তার বরুণ আহত থাকায় তাকে পুলিশ পাহারায় কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন।’
এ বিষয়ে জানতে উপজেলা যুবলীগের সভাপতি এস এম আলমগীর হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে জামালপুর ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী মাহবুবুর রহমান খাঁন ফারুক মাস্টারের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে তা বন্ধ পাওয়া গেছে।
কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এইচ এম আবুবকর চৌধুরী বলেন, “নির্বাচনী ব্যস্ততার কারণে গ্রেপ্তার আওয়ামী লীগ নেতা ও ঘটনার বিষয়ে এখনো দলীয় কোন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। ঘটনার অনুসন্ধান পূর্বক পরবর্তীতে সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।”
মামলার বাদী গাজীপুর জেলা গোয়েন্দা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) জিহাদুল ইসলাম, আসামিরা অবৈধ ভাবে আগ্নেয়াস্ত্র রাখার দায়ে ১৮৭৮ সনের অস্ত্র আইনের ১৯-এ ধারার অপরাধ করেছে। অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় আসাদুজ্জামান বরুণকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে তিনজনকে আসামি করে কালীগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে [মামলা নাম্বার ২২(৫)২১]।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জেলা গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) উপ পরিদর্শক (এসআই) জাহেদুল ইসলাম বলেন, গ্রেপ্তার আসাদুজ্জামান বরুণ শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পুলিশ পাহারায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছে। পলাতক অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। মামলার তদন্ত কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
এ সংক্রান্ত আরো জানতে…..
কালীগঞ্জে আওয়ামী লীগ নেতা বরুণ আটক: অস্ত্র উদ্ধার
কালীগঞ্জে যুবলীগের সভাপতিকে অস্ত্র দিয়ে হত্যার চেষ্টা, ছবি ভাইরাল