আলোচিত

গুলশান-বনানী-বারিধারা : অগ্নিঝুঁকি মোকাবেলার সক্ষমতা নেই ২০১ ভবনের

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশান, বনানী ও বারিধারা। বিভিন্ন দূতাবাস ও কূটনৈতিক মিশন ছাড়াও এসব এলাকায় রয়েছে বেশ কয়েকটি বহুজাতিক ও দেশীয় প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয়। রয়েছে বেশকিছু আন্তর্জাতিক সংস্থার কার্যালয়ও। ফায়ার সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী, এ তিন এলাকার ২০১টি ভবনের অগ্নিকাণ্ড মোকাবেলার সক্ষমতা নেই।

২০১৭ সালে গুলশানের ডিসিসি মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের পর ঢাকার স্থাপনাগুলোর অগ্নিঝুঁকি নিরূপণ করে ফায়ার সার্ভিস। অগ্নিদুর্ঘটনা রোধের সক্ষমতা যাচাইয়ে ভবনগুলোর ভূগর্ভস্থ জলাধারের ধারণক্ষমতা, অবস্থানকারীর সংখ্যা, প্রবেশদ্বারের প্রশস্ততা, ধোঁয়া ও তাপ শনাক্তকরণ যন্ত্রের উপস্থিতি, মেঝের আয়তন, জরুরি বহির্গমন সিঁড়ি ও প্রয়োজনীয় লিফটের উপস্থিতি বিবেচনায় নেয়া হয়। এর ভিত্তিতে ভবনগুলোকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ ও ‘অতিঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে শ্রেণীভুক্ত করা হয়। আর অগ্নিঝুঁকি মোকাবেলার পর্যাপ্ত প্রস্তুতি রয়েছে, এমন প্রতিষ্ঠানগুলোকে ‘সন্তোষজনক’ বলে মত দেয় সংস্থাটি।

ফায়ার সার্ভিসের মূল্যায়নে গুলশান, বনানী ও বারিধারার বাণিজ্যিক ভবনগুলোর মধ্যে ৪৬টি ঝুঁকিপূর্ণ বলে চিহ্নিত হয়েছে। এর মধ্যে ২১টি বহুতল বাণিজ্যিক ভবনকে খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে শ্রেণীভুক্ত করে দ্রুততম সময়ে অগ্নি ও ভূমিকম্পের ঝুঁকি মোকাবেলার সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করে সংস্থাটি। পাশাপাশি সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ভবন ও প্রতিষ্ঠান মালিকদের একাধিকবার চিঠিও দেয় ফায়ার সার্ভিস। তবে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানই সেগুলো কার্যকর করেনি।

ফায়ার সার্ভিসের তালিকায় ‘অতিঝুঁকিপূর্ণ’ শ্রেণীভুক্ত স্থাপনার মধ্যে রয়েছে গুলশান ২ নম্বরে অবস্থিত পিংক সিটি শপিংমল। গুলশান, বারিধারা ও বনানীর অধিবাসী ছাড়াও বিভিন্ন দূতাবাসের কর্মকর্তারা কেনাকাটার জন্য যান এ বিপণিতে। গুলশান ২ নম্বরে আরেক বাণিজ্যিক ভবন বিদিশা সুপার মার্কেটে অগ্নি ও ভূমিকম্প ঝুঁকি মোকাবেলার পর্যাপ্ত সক্ষমতা নেই। ফায়ার এক্সিট থাকলেও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সেটি বিপদে কাজে আসবে না বলে নিজেদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে ফায়ার সার্ভিস।

গুলশানের আরেক গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক ভবন সাবেরা টাওয়ারে প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষের আনাগোনা থাকলেও নেই অগ্নি ও ভূমিকম্প ঝুঁকি মোকাবেলার পর্যাপ্ত সক্ষমতা। এছাড়া খুব ঝুঁকিপূর্ণ বাণিজ্যিক ভবনের তালিকায় রয়েছে গুলশান টাওয়ার, স্বপ্ন সুপার মার্কেট, ল্যান্ডমার্ক শপিং সেন্টার, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন সুপার মার্কেট।

তালিকায় রয়েছে বারিধারার সফিউল ইসলাম টাওয়ার, সেলিনা টাওয়ার এবং বারিধারা জে ব্লকের ফার্নিচার মার্কেটও। বনানী এলাকার অন্যতম বহুতল বাণিজ্যিক ভবন মতিন ম্যানশন। এ ভবনটিতে রয়েছে বেশকিছু করপোরেট অফিস। তবে কোনো ধরনের অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্রপাতি না থাকায় ভবনটিকে অতিঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছে ফায়ার সার্ভিস।

গুলশান, বারিধারা ও বনানী এলাকায় রয়েছে ১২টি হাসপাতাল। এর মধ্যে এ্যাপোলো ও ইউনাইটেড হাসপাতাল ছাড়া বাকি ১০টি হাসপাতালেরই নেই অগ্নি ও ভূমিকম্প ঝুঁকি মোকাবেলার সক্ষমতা। বারিধারা জে ব্লকে অবস্থিত গুলশান মা ও শিশু ক্লিনিকে নেই কোনো ফায়ার এক্সিট। একইভাবে বারিধারা এলাকার প্রত্যয় মেডিকেল ক্লিনিকের কোনো ফ্লোরেই নেই বহনযোগ্য অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র। নেই ফায়ার এক্সিটও। হাসপাতালটিকে অতিঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছে ফায়ার সার্ভিস। একইভাবে গুলশানে অবস্থিত সাহাবুদ্দিন মেডিকেল কলেজ ও শিকদার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কোনোটিতেই নেই প্রয়োজনীয় সংখ্যক বহনযোগ্য অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র। আর যেগুলো আছে, সেগুলোও যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

গুলশান, বনানী ও বারিধারা এলাকায় বিভিন্ন ব্যাংকের মোট ১০৮টি কার্যালয় পরিদর্শন করে ১০৪টিকেই অতিঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে ফায়ার সার্ভিস। বাকি চারটি ব্যাংক ভবনকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে। পরিদর্শনে দেখা গেছে, অধিকাংশ বেসরকারি ব্যাংকেরই কার্যালয়ে নেই ফায়ার ইকুইপমেন্ট। অথচ ব্যাংকের এসব শাখায় লেনদেন করেন দেশীয় কর্মকর্তা-ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে বিদেশী নাগরিক ও কূটনৈতিক মিশনের সদস্যরা।

১৬ কামাল আতাতুর্ক এভিনিউতে অবস্থিত ব্যাংক এশিয়ার বনানী শাখায় প্রয়োজনের ৫ শতাংশও বহনযোগ্য অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র নেই বলে প্রতিবেদনে জানায় ফায়ার সার্ভিস। এছাড়া ১০ কামাল আতাতুর্ক এভিনিউতে রয়েছে ব্র্যাক ব্যাংকের বনানী শাখা। ওই কার্যালয়েও নেই প্রয়োজনীয় সংখ্যক ফায়ার ইকুইপমেন্ট। ব্যাংকের এসব কার্যালয়কে অগ্নি ও ভূমিকম্প ঝুঁকি মোকাবেলার সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য দুই দফা চিঠি দিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।

বহুতল বাণিজ্যিক ভবন, হাসপাতাল ও ব্যাংকের কার্যালয়গুলোর মতোই গুলশান, বনানী ও বারিধারা এলাকার অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেরই নেই প্রয়োজনীয় সংখ্যক ফায়ার ইকুইপমেন্ট। গুলশান ২ নম্বরের ৯১ নম্বর রোডের ১১/এ হোল্ডিংয়ের ভবনটি প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাস হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। এ ভবনে নেই ফায়ার এক্সিট। এছাড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যানুপাতে নেই প্রয়োজনীয় সংখ্যক ফায়ার ইকুইপমেন্ট। এ বিশ্ববিদ্যালয়টিকে অতিঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে শনাক্ত করেছে ফায়ার সার্ভিস। গুলশান ২-এর ২৪ নম্বর রোডের ৮৭ নম্বর বাড়িটিতে ইন্টারন্যাশনাল টার্কিশ হোপ স্কুলে নেই কোনো জরুরি নির্গমন সিঁড়ি। প্রয়োজনীয় সংখ্যক অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্রও নেই। এ স্কুলটিকে অতিঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে দুই দফা চিঠিও দিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। শুধু এ স্কুলটিকেই নয়; গুলশান, বনানী ও বারিধারা এলাকার ৫৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে অগ্নি ও ভূমিকম্পের ঝুঁকি মোকাবেলার সক্ষমতা বৃদ্ধি করার জন্য দুই দফা চিঠিও দিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।

ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স) মেজর একেএম শাকিল নেওয়াজ বলেন, ঢাকার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এলাকা হিসেবে গুলশান, বনানী ও বারিধারাকে উল্লেখ করা হয়। অথচ এ তিন এলাকার অধিকাংশ ভবনেই নেই প্রয়োজনীয় সংখ্যক ফায়ার ইকুইপমেন্ট ও জরুরি নির্গমন ব্যবস্থা। দু-একটি ভবনে বহনযোগ্য অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র থাকলেও সেগুলোর বেশির ভাগই অকেজো। আর জরুরি নির্গমন সিঁড়িগুলোও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে রয়েছে। এসব ভবনকে একাধিকবার চিঠি দিয়ে অগ্নি ও ভূমিকম্প ঝুঁকি মোকাবেলার সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য বলা হলেও অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানই তা করেনি।

 

সূত্র: বণিক বার্তা

এরকম আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button