অর্থনীতিআলোচিত

সরকারি কর্মচারীর অনুমোদনহীন ব্যবসায় ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ দুদকের

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : ডা. সাবরিনা চৌধুরী জাতীয় হূদরোগ ইনস্টিটিউটের কার্ডিয়াক সার্জারি ইউনিটের রেজিস্ট্রার হিসেবে কর্মরত থেকেও জেকেজি হেলথকেয়ার নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। নভেল করোনাভাইরাস পরীক্ষার ভুয়া প্রতিবেদন দেয়ার অভিযোগে গত বছর জেকেজির নির্বাহী আরিফ চৌধুরীকে গ্রেপ্তারের পর প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে তার স্ত্রী ডা. সাবরিনার নামও উঠে আসে।

ডা. সাবরিনার মতো সরকারি চাকরিতে কর্মরত থেকে অনুমোদন ছাড়াই অনেকে ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। এ রকম একাধিক অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সেসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মামলাও করেছে দুদক। আবার অনেক সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারীর ওপর নির্ভরশীল পরিবারের সদস্যদেরও সরকারি অনুমোদন ছাড়া বিভিন্ন ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনার অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে দুদক।

এ পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি চাকরিরত থেকে এবং তাদের ওপর নির্ভরশীল পরিবারের সদস্যরা অনুমোদন না নিয়ে ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করলে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে চিঠি পাঠিয়েছে দুদক। দুদক সচিব ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদারের লেখা একটি চিঠি গত ২২ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হয়।

দুদকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, দুদকের অনুসন্ধান ও তদন্তে গত কয়েক বছর সরকারি চাকরিরত অবস্থায় ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনার একাধিক অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। সরকারি কর্মচারীদের এ-জাতীয় প্রবণতা বন্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের জন্য কমিশন সচিব গত ২২ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে একটি চিঠি পাঠিয়েছিলেন।

জানা গেছে, গত ৪ মার্চ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে নির্দেশনা দেয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়-সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতীত সব কর্মচারীকে কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি বা ব্যবসায় জড়িত না হওয়ার জন্য নির্দেশনা দিয়েছে।

দুদকের পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, অনুমোদন ছাড়া ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা সরকারি কর্মচারী চাকরি বিধিমালার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। সরকারি কর্মচারী চাকরি বিধিমালায় বলা হয়েছে, ‘যে বিনিয়োগের ফলে সরকারি কর্মচারী সরকারি কার্যসম্পাদনে প্রভাবান্বিত হতে পারেন অথবা সরকারি কর্তব্য সম্পাদনে বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে পারেন, সরকারি কর্মচারী নিজে সে ধরনের কোনো বিনিয়োগ করতে অথবা তার পরিবারের কোনো সদস্যকে ওইরূপ বিনিয়োগ করার অনুমতি প্রদান করতে পারবেন না।’ বিধিমালায় আরো বলা হয়েছে, ‘কোনো সরকারি কর্মচারী এমন কোনো কিছুতে বিনিয়োগ করতে পারবেন না, কোনো ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে যার মূল্যের পরিবর্তন সম্পর্কিত তথ্য একজন সরকারি কর্মচারী হিসেবে তিনি জ্ঞাত, কিন্তু সাধারণ জনগণ তার অনুরূপ জ্ঞাত নয়।’ অন্যদিকে বিধির ১৭ ধারায় বলা হয়েছে, ‘কোনো কর্মচারী অনুমতি ছাড়া সরকারি কার্য ব্যতীত অন্য কোনো ব্যবসায় জড়িত হতে অথবা অন্য কোনো চাকরি বা কার্য গ্রহণ করতে পারবেন না।’

দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ এ প্রসঙ্গে জানান, দুর্নীতি প্রতিরোধের অংশ হিসেবে কমিশন এ পদক্ষেপ নিয়েছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট বিভাগ বা মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য দায়বদ্ধ। তবে কোনো সরকারি চাকরিজীবী যদি দুর্নীতির মাধ্যমে জ্ঞাত আয়ের বাইরে সম্পদ অর্জন করেন, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কমিশন আইনে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

সূত্র: বণিক বার্তা

এরকম আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button