আলোচিতসারাদেশ

বিক্ষোভ ও হরতাল কর্মসূচি: ৩ দিনে ঝরে গেল ১৩ প্রাণ, হেফাজতের দাবি ১৭

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষ উপলক্ষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের প্রতিবাদে হেফাজতে ইসলামের গত তিন দিনের বিক্ষোভ ও হরতাল কর্মসূচিতে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে ১৩ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তবে কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠনটির দাবি দেশের তিন জেলায় তাদের ১৭ জন নিহত হয়েছে।

রোববার (মার্চ ২৮) ঢাকায় হেফাজতের সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়— ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাইনবোর্ড এলাকায় একজন, চট্টগ্রামে চার জন এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১২ জন নিহত হয়েছেন। হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক রোববার হরতাল শেষে পল্টনে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য দেন।

তবে গত তিন দিনের খবরে জানা যাচ্ছে ২৬ মার্চ চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে পুলিশের সঙ্গে হেফাজতের সংঘর্ষে নিহত হয় চার জন। এর পরদিন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায় পাঁচ জন। ওই ঘটনায় আহত একজনের রোববার মৃত্যু হয়েছে। আর রোববার সকাল-সন্ধ্যা হরতালে জেলাটিতে মারা গেছে তিন জন। এ নিয়ে গত তিন দিনে এই ঘটনায় সারাদেশে মারা গেছে ১৩ জন।

হাটহাজারি, চট্টগ্রাম

গত শুক্রবার হাটহাজারীতে পুলিশের সঙ্গে হেফাজতের নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষে চার জন নিহত হন। পুলিশ জানায়, শুক্রবার দুপুরে হাটহাজারীতে সংঘর্ষের পর আহতদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে চার জনকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।

সেদিনের ঘটনা সম্পর্কে হেফাজতের সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, ‘দুপুরে জুমার নামাজের পর মোদিবিরোধী মিছিলটি থানার সামনে যাওয়ার পর পুলিশ গুলি চালায়।’

নিহতরা হলেন— হাটহাজারী মাদ্রাসার শিক্ষার্থী রবিউল ইসলাম, মেহরাজ, মো. জামিল এবং আবদুল্লাহ নামের অপর এক ব্যক্তি।

পুলিশ ও বিজিবির সঙ্গে সংঘর্ষে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নিহত ৬

শনিবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হেফাজতে ইসলামের বিক্ষোভ মিছিলের সঙ্গে পুলিশ ও বিজিবির সংঘর্ষে চার জন নিহত হন। এ ছাড়া শহরের কান্দিরপাড়া এলাকায় ছাত্রলীগ ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ এক শিক্ষার্থী হাসপাতালে মারা যায়। পুলিশ ও বিজিবির সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় আহত আরেকজন আজ মারা যান।

নিহতরা হলেন—ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার হারিয়া গ্রামের ওয়ার্কশপ শ্রমিক জোহর আলম, মজলিশপুর ইউনিয়নের মৈন্দ গ্রামের সুজন মিয়া, বুধল ইউনিয়নের কাউসার মিয়া, সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার শ্রমিক বাদল মিয়া, জুবায়ের ও নুরুল আমিন (২২)।

কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়ক সংলগ্ন ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার নন্দনপুর গ্রামে শনিবার বিকেলে পুলিশ-বিজিবির সঙ্গে হেফাজতের নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ হয়।

হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, ‘হাসপাতালে আনার আগেই তিন জন মারা যান। বাকী দুজন হাসপাতালে মারা গেছেন। তারা গুলিবিদ্ধ ছিলেন।’

স্থানীয়দের কাছে জানা যায়, সদর উপজেলার বুধল ইউনিয়ন থেকে হেফাজতে ইসলাম একটি মিছিল বের করে কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের নন্দনপুর এলাকায় পৌঁছলে পুলিশ ও বিজিবির সঙ্গে তাদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। তারা আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে চারদিক থেকে ঘেরাও করেন। পরে বিজিবি ও পুলিশ আত্মরক্ষার্থে গুলি চালায় বলে জানা যায়।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হাইওয়ে থানা ও পুলিশ লাইনে হামলা, গুলিতে নিহত ৩

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে রোববার হরতালের সময় হাইওয়ে থানায় হেফাজতে ইসলামের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে দুই জন মারা যান। এ ছাড়া জেলা শহরের পীরবাড়ি এলাকায় পুলিশ লাইনে হেফাজতের নেতা-কর্মীদের হামলার পর সেখানে গুলিবিদ্ধ আরেকজনের হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক সৈয়দ আরিফুল ইসলাম গুলিবিদ্ধ তিন জনের মৃত্যুর কথা নিশ্চিত করেছেন।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রোববার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সরাইল বিশ্বরোড মোড়ের খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানায় হামলা করেন হেফাজতে ইসলামের সমর্থকেরা। তারা থানা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন। এ সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা গুলি চালান।

এই ঘটনায় নিহতরা হলেন— ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার খাঁটিহাতা গ্রামের হাদিস মিয়া ও উপজেলা সদরের কুট্টাপাড়া গ্রামের আল আমীন।

অন্যদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের পীরবাড়ি এলাকায় পুলিশ লাইনে হেফাজতের নেতা-কর্মীরা হামলা করলে গুলির ঘটনা ঘটে। সেখানে একজন গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর পাওয়া যায় যিনি পরে হাসপাতালে মারা যান। তার পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

এরকম আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button