আলোচিতজাতীয়সারাদেশ

বীর মুক্তিযোদ্ধাদের যাচাই–বাছাই: ২ হাজার ৮৩৪ জনের নাম বাদ দিতে সুপারিশ

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) আইনের সুপারিশ ছাড়াই ২০০২ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ৩৯ হাজার ২৪৫ জনের নাম বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ‘বেসামরিক গেজেট’–এ অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। পরে তাঁদের মুক্তিযোদ্ধা সনদ নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় গত বছর যাচাই–বাছাইয়ের সিদ্ধান্ত নেয় জামুকা। এরপর গত জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে দুই দফায় যাচাই–বাছাইয়ের পর ওই গেজেট থেকে ২ হাজার ৮৩৪ জনের নাম বাদ দেওয়ার সুপারিশ এসেছে।

দেশের ৩৭৬ উপজেলায় যাচাই–বাছাইয়ের কাজ হয়েছে। তবে এখনো ১১৪ উপজেলা থেকে কোনো প্রতিবেদন আসেনি। যেসব উপজেলা থেকে যাচাই–বাছাইসংক্রান্ত প্রতিবেদন আসেনি, সে বিষয়ে রোববার জামুকার বৈঠকে সিদ্ধান্ত হতে পারে।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জামুকার মহাপরিচালক জহুরুল ইসলাম।

তিনি জানান, যাচাই–বাছাইয়ে ১৬ হাজার ৬৯১ জনের নাম বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ পেয়েছেন তাঁরা। আর নাম বাদ দিতে সুপারিশ এসেছে ২ হাজার ৮৩৪ জনের। অন্যদের বিষয়ে এখনো কোনো প্রতিবেদন আসেনি।

মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ সমুন্নত রাখতে এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের পরিবারের কল্যাণ নিশ্চিত করতে ২০০২ সালে জামুকা আইন করা হয়। এ আইনে বলা আছে, ‘প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রণয়ন, সনদ ও প্রত্যয়নপত্র প্রদানে এবং জাল ও ভুয়া সনদ ও প্রত্যয়নপত্র বাতিলের জন্য সরকারের কাছে সুপারিশ পাঠাবে জামুকা।’

এই ৩৯ হাজার ২৪৫ জন বীর মুক্তিযোদ্ধার মধ্যে বিভিন্ন বাহিনীর রয়েছেন ১ হাজার ৬৩১ জন। তবে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য স্বীকৃত ৩৩টি প্রমাণকের ‘বেসামরিক গেজেট’ ছাড়া অন্য কোনো প্রমাণকে নাম থাকলে তাঁরা যাচাই-বাছাইয়ের আওতাভুক্ত হননি।

জামুকা সূত্রে জানা গেছে, শনিবার পর্যন্ত গোপালগঞ্জে ২৬১ জন, ঢাকায় ২৪৫, মেহেরপুরে ১৪১, রাজশাহীতে ১২৮, বরগুনায় ১২৫, ফরিদপুরে ১০৪, চাঁদপুরে ১৪২, নরসিংদীতে ৫৮, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৫০, মাদারীপুরে ৪৮, কুমিল্লায় ৩৪, মানিকগঞ্জে ২১ জনসহ অন্যান্য জেলা মিলিয়ে মোট ২ হাজার ৮৩৪ জনকে বীর মুক্তিযোদ্ধার তালিকা থেকে বাদ দিতে সুপারিশ করা হয়েছে। রাঙামাটি ও নোয়াখালীর কোনো উপজেলার মুক্তিযোদ্ধাদের নাম যাচাই–বাছাইয়ে বাদ পড়েনি।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘আমরা যেভাবে ভেবেছিলাম, সব উপজেলা কমিটিগুলো সেভাবে যাচাই–বাছাই করতে পারেনি। কিছু কিছু উপজেলায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) ওপর অনেক চাপ ছিল। কোনো কোনো সাংসদ তো উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে এখনো প্রতিবেদনও পাঠাতে দেননি, এমন অভিযোগ শোনা যাচ্ছে। তারপরও আমরা মনে করছি, ২০ থেকে ২৫ শতাংশ নাম বাদ পড়বে। ফলে বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে রাষ্ট্রীয় ভাতাভোগীর সংখ্যা আরও কমবে। রাষ্ট্রের টাকার অপচয়ও কমবে।’

এদিকে বীর মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নাম রাখার জন্য অর্থ লেনদেনেরও অভিযোগ উঠেছে। রাজনৈতিক কারণে ক্ষমতার অপব্যবহার করে কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার নাম তালিকা থেকে বাদ দিতে চাপ দেওয়ার অভিযোগও জামুকার কর্মকর্তাদের কাছে মৌখিকভাবে করেছেন অনেকে। বিভিন্ন জেলার বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা যাচাই-বাছাই কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন তুলে নতুন বাছাই কমিটি গঠনের দাবি জানিয়েছেন অনেকে। নতুন কমিটির মাধ্যমে প্রকাশ্যে সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন কেউ কেউ। জামুকার নির্দেশনায় বলা ছিল, মুক্তিযোদ্ধা যাচাই–বাছাইয়ে প্রকাশ্যেই সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ করতে হবে। কিন্তু যাচাই-বাছাইকালে প্রকাশ্যে কারও সাক্ষ্য নেওয়া হয়নি বলেও অভিযোগ রয়েছে।

গত ৩০ জানুয়ারি ও ৬ ফেব্রুয়ারি সারা দেশে জামুকার সুপারিশ ছাড়া যাঁরা বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছেন, তাঁদের সনদ ও গেজেট যাচাই–বাছাই হয়। এর মধ্যে ৭৬৮ জন (৩৭৬ উপজেলায়) যাচাই–বাছাইয়ের জন্য উপস্থিত হননি বলে জামুকা সূত্র জানায়।

জামুকার শর্ত অনুযায়ী, দেশের ভেতরে প্রশিক্ষণ নেওয়া বীর মুক্তিযোদ্ধাকে অবশ্যই পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মুখযুদ্ধ করার সপক্ষে তিনজন সহযোদ্ধার (ভারতে প্রশিক্ষণ নেওয়া) সাক্ষ্য দিতে হবে। ১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বরের পর মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের এ ক্ষেত্রে বিবেচনায় (সাক্ষী হতে পারবেন না) নেওয়া হয়নি।

দেশে বর্তমানে বীর মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ২ লাখ ৩৩ হাজার। তবে আইনি জটিলতার কারণে ভাতা পেতেন ১ লাখ ৯৩ হাজার। এর মধ্যে ১ লাখ ৮০ হাজার জনের নাম ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (এমআইএস) এমআইএসে যুক্ত করা হয়েছে। তাঁদের ক্ষেত্রে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে লাল মুক্তিবার্তা, ‘ভারতীয় তালিকা’ ও ‘গেজেট’। নিজেকে বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে প্রমাণের জন্য ৩৩ ধরনের কাগজপত্র রয়েছে।

একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, জামুকার সুপারিশ ছাড়া যাঁদের নাম বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল, সঠিক যাচাই–বাছাইয়ের পর তাঁদের ভাতা বাতিল করতে হবে। তাঁদের নাম এমআইএস থেকে বাদ দেওয়ার পর আশা করা যায়, জাতি একটি নির্ভুল তালিকা পাবে।

সূত্র: প্রথম আলো

এরকম আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button