আলোচিতইসলামজাতীয়সারাদেশ

মুজিববর্ষে সারাদেশে ১৭০টি মডেল মসজিদ উদ্বোধন করা হবে

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : মুজিববর্ষ উপলক্ষে ধর্মীয় বিভ্রান্তি দূর ও ইসলামের প্রকৃত বার্তা প্রচারের লক্ষ্যে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে মোট ৫৬০টির মধ্যে প্রায় ১৭০টি মসজিদ তিনটি ধাপে উদ্বোধন করা হবে।

৫৬০টি মডেল মসজিদ নির্মাণ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের প্রকল্প পরিচালক মো. নাজিবার রহমান সংবাদকর্মীদের জানান, “জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং দেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন মিলিয়ে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে তিন ধাপে মোট ১৭০টি মডেল মসজিদ উদ্বোধন করা হবে।”

এর মধ্যে আসন্ন রমজানের আগে প্রথম ধাপে ৫০টি মসজিদ উদ্বোধন করা হবে যেখানে সেপ্টেম্বর মাসে আরও ৬০টি এবং ডিসেম্বরে ৬০টি মসজিদ উদ্বোধনের জন্য প্রস্তুত বলে তিনি জানান।

সিরাজগঞ্জ ও রংপুরে মাঠ পরিদর্শনকালে এই সংবাদদাতা দেখতে পান যে সিরাজগঞ্জে ৪ তলা জেলা মডেল মসজিদ এবং ইসলামী সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের নির্মাণ কাজ ৮০% এরও বেশি শেষ হয়েছে।

সিরাজগঞ্জের জেলা প্রশাসক (ডিসি) ড ফারুক আহমেদ বলেন, মসজিদের রিমিং এর কাজ ১৭ মার্চের আগে শেষ হয়ে যাবে এবং মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রথম ধাপে এটি উদ্বোধন করা হবে।

এ ছাড়া রংপুর জেলায় প্রথম ধাপে উদ্বোধনের জন্য নয়টি মডেল মসজিদ প্রস্তুত করা হচ্ছে।

রংপুরের গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, “ইতোমধ্যে রংপুরে ৪ তলা জেলা মডেল মসজিদ এবং ইসলামী সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের নির্মাণ কাজ প্রায় ৯১% সম্পন্ন হয়েছে। আমরা বঙ্গবন্ধুর পরবর্তী জন্মদিনের আগে বাকি কাজ শেষ করতে পারবো বলে আশা করছি।”

তিনি জানান, প্রথম ধাপে নয়টির মধ্যে মোট পাঁচটি মসজিদ উদ্বোধন করা হবে।

প্রকল্প পরিচালক মো. নাজিবার রহমান বলেন, জাতির পিতার পদচিহ্ন অনুসরণ করে ও ইসলামের চেতনায় অনুপ্রাণিত হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারা দেশে ৮,৭২২ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫৬০টি মডেল মসজিদ নির্মাণের ভাবনা নিয়ে এগিয়ে আসেন।

পদ্মা বহুমুখী সেতুর পরে এটি দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রকল্প যা নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে – এমনটা জানিয়ে তিনি আরও বলেন, “বিশ্বের মধ্যে এটিই প্রথম যে কোনও সরকার একই সময়ে এত বেশি সংখ্যক মসজিদ নির্মাণ করছে।”

নাজিবার বলেন, “এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য ইসলামী ভ্রাতৃত্ব এবং এর মূল্যবোধের প্রচার এবং পাশাপাশি চরমপন্থা ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ইসলামের প্রকৃত মর্ম প্রচার করা কেননা ধর্ম কখনই তাদের সমর্থন করে না।”

বঙ্গবন্ধু ইসলামিক ফাউন্ডেশন (আইএফ) প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এবং ইসলামিক ফাউন্ডেশন আইন, ১৯৭৫ কার্যকর করেন- এমনটা উল্লেখ করে প্রকল্প পরিচালক বলেন, “বঙ্গবন্ধুর চিন্তাধারার সাথে মিল রেখে দেশ জুড়ে মসজিদ এবং ইসলামী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন করে একটি শক্তিশালী ইসলামী সাংগঠনিক কাঠামো গঠনের দিকেও প্রকল্পটির দৃষ্টি নিবদ্ধ ছিল।”

এটি সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড প্রচার করার পাশাপাশি সন্ত্রাসবাদ ও নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরিতেও উদ্বুদ্ধ করবে বলে তিনি জানান।

প্রকল্প পরিচালক জানান, ৪২০টি মডেল মসজিদ ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে এবং বাকি মসজিদগুলির কাজ শিগগিরই শুরু হবে।

প্রকল্পের দলিলপত্রাদি অনুসারে, মডেল মসজিদগুলি এ, বি এবং সি তিনটি ক্যাটাগরিতে নির্মিত হচ্ছে – “এ” ক্যাটাগরির অধীনে, ৬৪টি জেলা ও সিটি কর্পোরেশন এলাকায় লিফটের সুবিধা সম্বলিত প্রায় ৬৯টি চারতলা মসজিদ নির্মিত হচ্ছে। একটি মসজিদের প্রতিটি তলায় ২,৩৬০.০৯ বর্গমিটার জায়গা থাকবে।

“বি” ক্যাটাগরির অধীনে, প্রত্যেক তলায় ১৬৮০.১৪ বর্গমিটার জায়গাসহ ৪৭৫টি মসজিদ নির্মিত হচ্ছে। অন্যদিকে, উপকূলীয় অঞ্চলে “সি” ক্যাটাগরির অধীনে থাকা ১৬টি মসজিদের প্রতিটির তলায় ২,০৫২.১২ বর্গমিটার জায়গা থাকবে।

প্রতিটি জেলা ও সিটি কর্পোরেশন মসজিদে এক সাথে নামাজের জন্য ১,২০০ জন লোকের ব্যবস্থা ছিল এবং প্রতিটি উপজেলা ও উপকূলীয় অঞ্চলের মসজিদে ৯০০ জন লোক একসাথে নামাজ পড়তে পারত। এই মসজিদগুলিতে প্রায় ৪.৯৯ লাখ পুরুষ এবং ৩১,৪০০ জন নারী একসাথে নামাজ পড়তে পারবেন।

মডেল মসজিদগুলিতে ইসলামী গবেষণা ও দ্বীন-ই-দাওয়াহ কার্যক্রম, কুরআন হেফজখানা, শিশু ও গণশিক্ষা ব্যবস্থা, স্থানীয় ও বিদেশী পর্যটকদের জন্য আবাসনের ব্যবস্থা, মৃতদের জন্য গোসল ও দাফনের ব্যবস্থা, হজযাত্রী নিয়োগ ও প্রশিক্ষণের মতো সুবিধা থাকবে। গাড়ি পার্কিং সহ ইমাম-মুয়াজ্জিন এবং সাংস্কৃতিক কেন্দ্রগুলির কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য থাকার ব্যবস্থাও থাকবে।

এই মসজিদগুলিতে গ্রন্থাগারের ব্যবস্থা থাকবে যেখানে প্রায় ৩৪,০০০ মানুষ একসাথে পবিত্র কুরআন এবং অন্যান্য ইসলামিক বই পড়তে পারবে।

এ ছাড়া প্রায় ৬৮০০ লোকের জন্য ইসলামিক বিষয় নিয়ে গবেষণা করার ব্যবস্থা থাকবে। অন্যদিকে, প্রকল্পটি শেষ হলে প্রায় ৫৬,০০০ লোক দো‘আ ও মোনাজাত করতে পারবেন এবং মসজিদে ঘণ্টার পর ঘণ্টা তাসবিহ জপতে পারবেন।

অন্যান্য ধর্মীয় কর্মকাণ্ড ছাড়াও প্রতিবছর প্রায় ১,৬৮,০০০ শিশুকে প্রাথমিক শিক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা থাকবে। এই মসজিদ থেকে প্রতি বছর প্রায় ১৪,০০০ কুরআনে হাফেজ (সম্পূর্ণ কোরআন মুখস্থ যাদের) বের হবে।

এছাড়াও পবিত্র হজের জন্য ডিজিটাল নিবন্ধনের সুবিধার পাশাপাশি প্রায় ২,২৪০ জন দেশি-বিদেশি অতিথির আবাসনের ব্যবস্থা থাকবে।

এরকম আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button