সংরক্ষিত শালবনে শিল্পপ্রতিষ্ঠান রক্ষায় মরিয়া মালিকরা
গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : গাজীপুরে সংরক্ষিত শালবনের একটি রাস্তা নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। ইতোমধ্যে বনের ওই রাস্তাটি বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। নির্দেশ পেয়ে গত শুক্রবার রাস্তাটির প্রবেশ পথে আরসিসি পিলার স্থাপনসহ বাগান সৃজন করে বন বিভাগ। তবে বাগান সৃজনের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আরসিসি পিলারসহ দুই শতাধিক বিভিন্ন প্রজাতির চারা গাছ উপড়ে ফেলার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। জেলার ভাওয়াল রেঞ্জের ডগরী সড়কের উত্তরে ৫ নং বিশৈয়াকুড়িবাড়ী মৌজার বনাঞ্চলে এই ঘটনা ঘটে।
গাজীপুর ভাওয়াল রেঞ্জ কর্মকর্তা আবুল হাসেম জানান, গত বছরের ৩ ডিসেম্বর পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় থেকে বন সংরক্ষক এবং ডিএফও, বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের কাছে চিঠি দেওয়া হয়। চিঠিতে জানানো হয়, ‘১৯৯১ সালের ১৪ ডিসেম্বর ৫ নং বিশৈয়াকুড়িবাড়ী মৌজায় মেসার্স অমনি ফামর্স লিমিটেডকে সাময়িকভাবে বনের একটি রাস্তা ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়। তবে মন্ত্রণালয়ের জুড়ে দেওয়া শর্ত ভঙ্গ করায় ফার্মটি রাস্তা ব্যবহারের অনুমোদন হারায়। এ ছাড়া চিঠিতে ফার্মটির দখল থেকে বন উদ্ধারে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে বলা হয়।’
বিকেবাড়ী বিট কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান জানান, অমনি ফার্ম ১৩০৭ সিএস দাগে ০.২০ একর বনভূমি দখল করেছে। দখলকৃত বন উদ্ধারে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন। এ ছাড়া মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ পেয়ে ফার্মটির রাস্তা করা হয়েছিল। তবে ওই রাস্তাটি ঘেঁষে শালবন রিসোর্ট গড়ে উঠেছে। রিসোর্টটির নিজস্ব কোনো রাস্তা নেই। অমনি ফর্মের রাস্তা বন্ধ করায় রিসোর্টটিতে প্রবেশের পথ বন্ধ হয়ে যায়। রিসোর্টটির সঙ্গে একাধিক পুলিশের ডিআইজি সম্পৃক্ত। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে বনের আরসিসি পিলারসহ চারা গাছগুলো উপড়ে ফেলেন পুলিশ সদস্যরা। অমনি ফার্ম ডগরী সড়কের উত্তর দিক থেকে শুরু হওয়া বনের রাস্তা ব্যবহারের অনুমোদন নিয়েছিল। অনুমোদন বাতিল হওয়ায় ডগরী সড়ক থেকে ফার্মে প্রবেশ পথেই আরসিসি পিলার স্থাপন করা হয়।
অনুসন্ধান বলছে, দেড় যুগ আগে ৫ নং বিশৈয়াকুড়িবাড়ী মৌজায় অমনি ফার্ম গড়ে ওঠার পর ওই মৌজায় বোনিটু বাটন কারখানা ও শালবন রিসোর্ট গড়ে ওঠে। সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ভেতর দিয়ে ওই কারখানা এবং রিসোর্টে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয় স্থানীয় পল্লীবিদ্যুৎ। অথচ বোনিটু বাটন কারখানা ও রিসোর্ট কর্তৃপক্ষ বনের রাস্তা ব্যবহারের অনুমোদন নেয়নি। তাদের ওই দুটি প্রতিষ্ঠানে প্রবেশের নিজস্ব কোনো রাস্তাও নেই।
এ ব্যাপারে গত ১ মার্চ ডিআইজি আব্দুল্লাহ হেল বাকী জানান, ‘মন্ত্রণালয় অমনি ফর্মের রাস্তা বন্ধ করেছে। অথচ বন বিভাগ শালবন রিসোর্টের রাস্তা বন্ধ করেছে। রিসোর্টটি বনের কোনো ক্ষতি করেনি। অথচ বন বিভাগ আমাদের ক্ষতি করছে। রিসোর্টটি তৈরিতে এ পর্যন্ত ১০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। রিসোর্টটিতে প্রবেশে জন্য বনের রাস্তা ব্যবহারের আবেদন করা হবে।’ বনের সীমানা পিলার এবং গাছ তুলে ফেলার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে।
এতে বন বিভাগের সঙ্গে আলোচনার পথ বন্ধ হলো কী না-এমন মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে আব্দুল্লাহ হেল বাকী বলেন, ‘আলোচনার পথ এখনো খোলা আছে। রাস্তা বন্ধ করার আগে বন বিভাগ আমাদের চিঠি দিতে পারত। রিসোর্টটির সঙ্গে সরকারি উচ্চপদস্থ অনেকেই সম্পৃক্ত।’
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব এ এস এম ফেরদৌস জানান, ‘মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া বনের রাস্তা কোনো প্রতিষ্ঠান ব্যবহার করতে পারবে না। শালবন রিসোর্ট অনুমোদন নিয়ে বনের রাস্তা ব্যবহার করুক।’
এ সংক্রান্ত আরো জানতে…………..
অপরিকল্পিত শিল্পের বিকাশে হুমকির মুখে গাজীপুরের সংরক্ষিত বনাঞ্চল