গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : ছোটবেলা থেকে দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়েছেন। দিনমজুরের কাজ করেছেন অন্যের জমিতে। ভাগ্যান্বেষণে হয়েছিলেন অভিবাসী শ্রমিক। ফিরে এসে সাধারণ কর্মচারীর কাজ নেন তিতাসে। কিন্তু উদ্যোক্তা হওয়ার নেশায় চাকরি ছেড়ে যুক্ত হন তৈরি পোশাক খাতের ব্যবসায়। শূন্য থেকে গড়ে তোলেন বিশাল গ্রুপ। এ গল্প থারমেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান আবদুল কাদির মোল্লার। শুধু একজন ভালো উদ্যোক্তা নন, দানবীর হিসেবেও বেশ পরিচিতি রয়েছে তার। মাত্র ৩৬০ টাকার অভাবে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ নিতে না পারা আবদুল কাদির মোল্লা পরবর্তী সময়ে শিক্ষাক্ষেত্রে দান করেছেন অঢেল অর্থ। গড়ে তুলেছেন অসংখ্য স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা। বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়েও কিনে দিয়েছেন বাস। তবে দান-খয়রাতে যতটা আগ্রহী তিনি ততটাই অনাগ্রহী ব্যাংকের ঋণ পরিশোধে। দীর্ঘ সময় ধরে বড় অংকের ঋণ ফেরত না দেয়ায় বর্তমানে অন্তত এক ডজন ব্যাংকের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে দানবীর আবদুল কাদির মোল্লার থারমেক্স গ্রুপ।
থারমেক্স গ্রুপের ব্যাংকঋণের পরিমাণ বর্তমানে ৬ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এ ঋণের প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকাই গিয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংক থেকে। এছাড়া আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি), ডাচ্-বাংলা ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়াসহ বেসরকারি ও বিদেশী কয়েকটি ব্যাংক থেকেও প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে থারমেক্স। বিপুল অংকের এ ঋণ আদায় নিয়ে এখন উদ্বেগ ও উত্কণ্ঠায় রয়েছে ব্যাংকগুলো।
থারমেক্স গ্রুপকে ঋণ দেয়া বিভিন্ন ব্যাংকের তথ্য, বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুসন্ধান ও পর্যবেক্ষণ পর্যালোচনা করে দেখা যাচ্ছে, যাত্রার প্রথম দশকে স্বাভাবিক গতিতেই বিকাশ হয়েছে থারমেক্স গ্রুপ। এ সময়ে গ্রুপটির ব্যাংকঋণ ও ব্যবসায়িক টার্নওভার বেড়েছে সমান্তরালভাবে। কিন্তু ২০১০ সাল-পরবর্তী সময়ে হঠাৎ করেই পালে হাওয়া লাগে থারমেক্সের। রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংকসহ অর্ধডজন বেসরকারি ব্যাংক থেকে শত শত কোটি টাকা ঋণ নিতে থাকেন আবদুল কাদির মোল্লা। বাড়াতে থাকেন থারমেক্স গ্রুপের শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও। তৈরি পোশাক রফতানির পাশাপাশি টেক্সটাইল, সুতা, ডেনিম, ওভেনসহ বিভিন্ন খাতে সম্প্রসারিত হয় তার ব্যবসা। এক প্রতিষ্ঠানের চলতি মূলধন হিসেবে নেয়া ঋণের অর্থ বিনিয়োগ করেন অন্য প্রতিষ্ঠানে। এভাবেই গড়ে তোলেন প্রায় দুই ডজন কোম্পানি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ব্যবসার আকারের তুলনায় ব্যাংকঋণের পরিমাণ এতই বেড়েছে যে এখন ঋণের বোঝায় লেজেগোবরে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে পুরো শিল্প গ্রুপে।
পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৫ সাল পর্যন্ত থারমেক্সের ব্যাংকঋণের পরিমাণ ছিল ৩ হাজার কোটি টাকার কম। ওই সময়ে শিল্প গ্রুপটির টার্নওভার ছিল প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা। এর পরের পাঁচ বছরে থারমেক্সের ঋণের পরিমাণ দ্বিগুণ হলেও সে তুলনায় বাড়েনি ব্যবসা। উল্টো বস্ত্র ও সুতায় শত শত কোটি টাকার লোকসান গ্রুপটিকে খাদের কিনারে নিয়ে দাঁড় করিয়েছে। তিন বছর ধরে থারমেক্স গ্রুপের ব্যাংকঋণের কিস্তি পরিশোধও ছিল অনিয়মিত। প্রায় সব ঋণই ছিল খেলাপি হওয়ার পথে। যদিও কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও ঋণ প্রদানকারী ব্যাংকগুলোর উদারতায় আবদুল কাদির মোল্লা বারবার পুনঃতফসিল সুবিধা পেয়েছেন। এর মধ্যেই চলতি বছরে আঘাত হেনেছে বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাস। এ মহামারী দেশের অর্থনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য দুর্যোগ বয়ে আনলেও থারমেক্সের জন্য তা হয়ে উঠেছে আশীর্বাদ। করোনার কারণে বছরব্যাপী ব্যাংকঋণের কিস্তি পরিশোধের বাধ্যবাধকতা শিথিল করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নীতি ছাড়ের এ সুযোগ পুরোদমে কাজে লাগিয়েছেন আবদুল কাদির মোল্লা। উপরিপাওনা হিসেবে সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক থেকে পেয়েছেন স্বল্প সুদের ২০০ কোটি টাকার প্রণোদনা। বর্তমানে আরো ১৫০ কোটি টাকা বের করার চেষ্টা তদবির করছে গ্রুপটি।
থারমেক্স গ্রুপকে ঋণ দেয়া ব্যাংকগুলোর শীর্ষ নির্বাহীসহ নীতিনির্ধারণী ভূমিকায় থাকা ব্যাংকাররা বলছেন, বাছবিচার না করে থারমেক্স গ্রুপকে ঋণ দিয়ে চোরাবালিতে আটকা পড়েছেন তারা। অনেক চেষ্টা করেও এখন গ্রুপটির কাছ থেকে টাকা আদায় সম্ভব হচ্ছে না। উল্টো অনাদায়ী সুদ যুক্ত হয়ে প্রতিনিয়ত বাড়ছে থারমেক্সের ঋণের পরিমাণ। বিপরীতে গ্রুপটির ব্যবসায়িক পরিস্থিতি অবনতির দিকে যাচ্ছে।
যদিও থারমেক্স গ্রুপের কর্ণধার আবদুল কাদির মোল্লার দাবি, থারমেক্স গ্রুপের প্রতিষ্ঠানগুলো সঠিক পথেই আছে। এমনকি মহামারীর মধ্যেও গ্রুপের টার্নওভার বেড়েছে। তিনি বলেন, করোনার আগে থারমেক্স গ্রুপের টার্নওভার ছিল ৪ হাজার ২০০ কোটি টাকা। এখন এ টার্নওভার ৪ হাজার ৭০০ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। প্রণোদনার যে অর্থ পেয়েছি, তা দিয়ে কর্মীদের বেতন-ভাতা ও গ্যাস-বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করেছি। বাকি টাকা এখনো জমা আছে।
ব্যবসা ভালো থাকলে ব্যাংকের টাকা ফেরত দিচ্ছেন না কেন—এমন প্রশ্নের জবাবে আবদুল কাদির মোল্লা বলেন, একেবারেই টাকা দিচ্ছি না এমন নয়। চেষ্টা করছি কিছু টাকা হলেও পরিশোধ করতে। ভালো-খারাপ মিলিয়ে ব্যবসা চলছে। বর্তমান অবস্থায় ব্যাংকের চাহিদা অনুযায়ী টাকা ফেরত দেয়া সম্ভব নয়। ঋণ পরিশোধের বাধ্যবাধকতার ওপর যে স্থগিতাদেশ চলছে, তা ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত হলেও বাড়াতে হবে। আবার বিদ্যমান ঋণগুলো পুনঃতফসিল করে দিতে হবে। অন্যথায় ঋণখেলাপি হয়ে সবকিছু শেষ হয়ে যাবে।
কাদির মোল্লা থারমেক্স গ্রুপের প্রতিষ্ঠানগুলো সঠিক পথে আছে দাবি করলেও অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্য বলছে, থারমেক্স গ্রুপের প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবসায় কোনো প্রবৃদ্ধি নেই। উল্টো দুই বছর ধরে রফতানিতে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি লক্ষ করা যাচ্ছে।
থারমেক্স গ্রুপ মূলত রফতানিমুখী শিল্প হিসেবেই প্রতিষ্ঠিত। এ গ্রুপের প্রতিষ্ঠানগুলোর বেশির ভাগই পোশাক খাতের ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ রফতানিমুখী বস্ত্র শিল্পের। গ্রুপটির প্রচ্ছন্ন রফতানি টার্নওভারের একটি পরিসংখ্যান পেয়েছে বণিক বার্তা। ব্যাংক ও খাতসংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া ওই পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০১৮ থেকে ২০২০ সালের নভেম্বর পর্যন্ত তিন বছরের মধ্যে কোনো বছরেই থারমেক্স গ্রুপের সুতা ও কাপড় উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর রফতানি টার্নওভার ১৩ কোটি ডলার বা ১ হাজার ১০০ কোটি টাকার বেশি ছিল না।
রফতানি নীতি ২০১৮-২১ অনুযায়ী, রফতানিমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত পণ্যের ন্যূনতম ৮০ শতাংশ রফতানি করতে হবে। অবশিষ্ট ২০ শতাংশ পণ্যের শুল্ক ও কর পরিশোধ সাপেক্ষে স্থানীয় বাজারে বাজারজাতের সুযোগ রয়েছে। সে হিসাবে ১ হাজার ১০০ কোটি টাকার রফতানির বিপরীতে ২৭৩ কোটি টাকার বেশি পণ্য স্থানীয় বাজারে বিক্রির সুযোগ নেই থারমেক্সের।
থারমেক্স গ্রুপের পণ্য রফতানিতে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে দুই বছর ধরে। অনুসন্ধানে দেখা যায়, ২০১৮ সালে থারমেক্স গ্রুপের সুতা উৎপাদন ও ডায়িংয়ের পাঁচটি কারখানা ইউনিট থেকে সুতার প্রচ্ছন্ন রফতানি হয় প্রায় ৫ কোটি ৯৪ লাখ ডলারের। এর পরের বছর ২০১৯ সালে ওই পাঁচটি ইউনিটে উৎপাদিত সুতা রফতানি হ্রাস পেয়েছে প্রায় ১৮ শতাংশ। রফতানি কমার ধারা অব্যাহত রয়েছে চলতি বছরেও। এ বছরের নভেম্বর পর্যন্ত সময়ে প্রতিষ্ঠানটির প্রচ্ছন্ন সুতা রফতানির পরিমাণ ছিল ৪ কোটি ১৯ লাখ ডলার।
অন্যদিকে ২০১৮ সালে থারমেক্স গ্রুপের কাপড় উৎপাদন ও ডায়িংয়ের চারটি কারখানা ইউনিট থেকে কাপড়ের সরাসরি ও প্রচ্ছন্ন রফতানি হয় ৭ কোটি ডলারের কিছু বেশি। এর পরের বছর ২০১৯ সালে ওই চারটি ইউনিটে উৎপাদিত কাপড় রফতানি ৬ শতাংশ কমে হয়েছে ৬ কোটি ৫৮ লাখ ডলার। আর চলতি বছরের নভেম্বর পর্যন্ত ৫ কোটি ৪১ লাখ ডলারের কাপড় রফতানি করেছে গ্রুপটি।
গ্রুপটির পোশাক রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একটি হলো আদুরি অ্যাপারেলস লিমিটেড। খাতসংশ্লিষ্ট সূত্রের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০১৮ থেকে ২০২০ সালের নভেম্বর পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি বছরে গড়ে ৪ কোটি ৫৮ লাখ ডলারের পোশাক রফতানি করেছে।
দুই দশক আগে সোনালী ব্যাংকের ৯৪ লাখ টাকার ঋণে মেশিন আমদানি করে পোশাক শিল্পের ব্যবসায় যুক্ত হয়েছিলেন আবদুল কাদির মোল্লা। ২০১০ সাল পর্যন্ত তার প্রতিষ্ঠানগুলোর আমদানি-রফতানিসহ ব্যাংকিং কর্মকাণ্ড ছিল রাষ্ট্রায়ত্ত এ ব্যাংককে ঘিরে। বর্তমানে আবদুল কাদির মোল্লার পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের কাছে সোনালী ব্যাংকের ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২৫০ কোটি টাকা। যে পাঁচটি কোম্পানির নামে এসব ঋণ নেয়া হয়েছে সেগুলো হলো থারমেক্স চেক ফ্যাব্রিকস লিমিটেড, থারমেক্স মিলাঞ্জ স্পিনিং মিলস, থারমেক্স নিট ইয়ার্ন, থারমেক্স স্পিনিং ও ইন্ডিগো স্পিনিং লিমিটেড।
আবদুল কাদির মোল্লার প্রতিষ্ঠানগুলোর বিপুল অংকের এ ঋণ নিয়ে বিপদে আছে সোনালী ব্যাংক। এসব ঋণের বড় অংশই তৈরি হয়েছে ব্যাক-টু-ব্যাক এলসির দায় সমন্বয় না হওয়ার কারণে। এরই মধ্যে কয়েক দফায় এসব ঋণ পুনঃতফসিলও করা হয়েছে। গ্রুপটিকে ঋণ দেয়া ও দফায় দফায় পুনঃতফসিলে উপেক্ষিত হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের রীতিনীতিও। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একাধিক পরিদর্শনেও অনিয়মের বিষয়গুলো উঠে এসেছে। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে থারমেক্স গ্রুপের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এর আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক পরিদর্শন প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, থারমেক্স গ্রুপকে দেয়া ঋণের বড় অংশই ঝুঁকিপূর্ণ। সর্বশেষ অনিয়মের মাধ্যমে গ্রুপটির ঋণ পুনঃতফসিলের বিষয়টিও শনাক্ত করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ‘ব্যাংক পরিদর্শন বিভাগ-২’ থেকে এ বিষয়ে গত ২৫ নভেম্বর সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে বলা হয়, বিআরপিডি ও অফ-সাইট সুপারভিশনের অনাপত্তি পত্রের শর্ত পরিপালন না করে থারমেক্স গ্রুপের প্রতিষ্ঠানগুলোর খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করা হয়েছে। এ পুনঃতফসিল প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সিআইবিতে মিথ্যা তথ্য প্রদানের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে নির্দেশ দেয়া হয়। যদিও রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক থেকেই সরকার ঘোষিত প্রণোদনার ৮৪ কোটি টাকা পেয়েছে থারমেক্স গ্রুপ।
সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আতাউর রহমান প্রধান এ বিষয়ে বলেন, থারমেক্স গ্রুপের ঋণগুলো আমার সময়ে দেয়া হয়নি। শীর্ষ নির্বাহী হিসেবে সোনালী ব্যাংকে যোগদানের পর আমি পরিচালনা পর্ষদকে বলেছি, গ্রুপটিকে নতুন ঋণ না দিয়ে আগের ঋণ আদায় করতে। এরই মধ্যে থারমেক্সের ঋণের লাগাম টেনে ধরা হয়েছে। মূলত ঋণপত্রের দায় সমন্বয় না হওয়ার কারণে ফোর্সড লোন সৃষ্টি হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা গ্রুপটির ঋণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিচ্ছি। পরিস্থিতির বিচারে কিছু ছাড় দিয়ে হলেও গ্রুপটিকে প্রণোদনার অর্থ ছাড় দিতে হয়েছে।
থারমেক্স গ্রুপের কাছে প্রায় ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ঋণ রয়েছে আরেক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক জনতার। এ ঋণ আদায় নিয়েও বিপদে আছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকটি। যদিও নতুন করে প্রণোদনা হিসেবে গ্রুপটিকে আরো ৪৭ কোটি টাকা দিতে হয়েছে ব্যাংকটিকে।
আবদুল কাদির মোল্লার প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকের ঋণ আছে ৭০০ কোটি এবং রূপালী ব্যাংকের ৩৫০ কোটি টাকার মতো। ঋণের কিস্তি পরিশোধ না করায় প্রতিনিয়ত এ ঋণের পরিমাণ বাড়ছে। আবার প্রণোদনা হিসেবে থারমেক্সকে ৫৭ কোটি টাকা দিয়েছে অগ্রণী ব্যাংক। রূপালী ব্যাংকও ৫২ কোটি টাকা অনুমোদন দিয়েছে, তবে এখনো এ অর্থ ছাড় হয়নি।
থারমেক্স গ্রুপের ঋণের লাগাম টেনে ধরছেন বলে জানিয়েছেন অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শামস-উল-ইসলাম। তিনি বলেন, গ্রুপটির ব্যবসা এতদিন সম্প্রসারিত হয়েছে। এখন সময় এসেছে সবকিছু গুছিয়ে নেয়ার। থারমেক্স এখন রফতানি করার মাধ্যমে দায় সমন্বয় করবে। আমরা নতুন কোনো ঋণ দিচ্ছি না। আশা করছি, করোনা-পরবর্তী পরিস্থিতিতে গ্রুপটি ঘুরে দাঁড়াবে।
অগ্রণী ব্যাংক এমডির সুরেই থারমেক্সের বিষয়ে অভিব্যক্তি জানিয়েছেন জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আব্দুছ ছালাম আজাদ এবং রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ওবায়েদ উল্লাহ্ আল্ মাসুদ।
রূপালী ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহী বলেন, ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ফেরত না দেয়ার সংস্কৃতির শিকড় অনেক গভীরে চলে গেছে। এখন ভালো গ্রাহকরাও ব্যাংকের টাকা ফেরত দিতে চাইছেন না। সুনামের সঙ্গে ব্যবসা করা উদ্যোক্তারাও ইচ্ছেকৃত খেলাপির তালিকায় যুক্ত হচ্ছেন। এভাবে চলতে দেয়া যায় না।
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের মতোই আবদুল কাদির মোল্লার প্রতিষ্ঠানগুলোকে দেয়া বেসরকারি ব্যাংকগুলোর ঋণ দুর্দশাগ্রস্তের তালিকায় উঠেছে। বারবার পুনঃতফসিল করতে হচ্ছে এ ব্যাংকগুলোর ঋণও। অনাদায়ী সুদ যুক্ত হওয়ায় প্রতিনিয়ত গ্রুপটির কাছে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর ঋণের পরিমাণ বাড়ছে। গ্রুপটিকে নিয়ে নিজেদের দুশ্চিন্তা ও উদ্বেগের কথা জানালেও এ ব্যাংকগুলোর শীর্ষ নির্বাহীরা নিজেদের নাম উদ্ধৃত করে বক্তব্য দিতে চাননি।
বড় একটি বেসরকারি ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহী বলেন, পাঁচ বছর ধরেই থারমেক্সের ঋণ নিয়ে বিপদে আছি। দেয়ালে পিঠ ঠেকলে তথা মন্দ মানের খেলাপি হওয়ার দ্বারপ্রান্তে গিয়ে ঋণের কিস্তি পরিশোধ করা আবদুল কাদির মোল্লার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। এখন করোনা পরিস্থিতিতে তিনি সুযোগের শতভাগ সদ্ব্যবহার করছেন।
অন্য একটি বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, পাঁচটি প্রতিষ্ঠান তৈরি করতে কোনো ঋণ নেননি বলে আবদুল কাদির মোল্লা প্রায়ই গর্ব করেন। কিন্তু এসব প্রতিষ্ঠান করার অর্থ তিনি কোথায় পেলেন, তার জবাব নেই। মূলত এক প্রতিষ্ঠানের নামে নেয়া চলতি মূলধনের অর্থ ডাইভার্ট করে অন্য প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছেন। এ কারণেই গ্রুপটির বিপর্যয় বেড়েছে।
থারমেক্স গ্রুপকে নতুন করে ঋণ না দেয়ার নীতি নিয়েছে এর আগে ঋণ দেয়া ব্যাংকগুলো। পাশাপাশি গ্রুপটির সঙ্গে ব্যবসা গোটানোর চেষ্টা করছেন বলেও জানিয়েছেন প্রায় সব ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীরা।
সূত্র: বণিক বার্তা