অবশেষে কালীগঞ্জের ‘অবৈধ’ ব্যাটারি কারখানায় অভিযান, বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন
গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : অবশেষে কালীগঞ্জে অবৈধভাবে ব্যাটারি পুড়িয়ে সীসা উৎপাদনের কারখানায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার মাধ্যমে তাদের সকল কার্যক্রম বন্ধ করেছে প্রসাশন। এছাড়াও কারখানার কার্যক্রম পূণরায় আর কখনো চালু করবে না মর্মে মুচলেকা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
রোববার (২০ ডিসেম্বর) সকালে কালীগঞ্জ পৌরসভার বালীগাঁও গ্রামে শীতলক্ষ্যা নদীর তীরবর্তী এলাকায় ‘এইচ কিউ লিড ফ্যাক্টরী লিমিটেড’ নামে অবৈধ ওই কারখানায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়।
মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেন কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শিবলী সাদিক।
স্থানীয়রা জানায়, ‘এইচ কিউ লিড ফ্যাক্টরী লিমিটেড’ নামে অবৈধ এই কারখানায় অবৈধভাবে ব্যাটারি পুড়িয়ে সীসা উৎপাদনের কাজ করা হয়। কারখানা থেকে নির্গত হয় বিষাক্ত কালো ধোঁয়া। তাতে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন স্থানীয়রা। কারখানার অপসারিত বর্জে শীতলক্ষ্যা নদীর পানি বিষাক্ত হয়ে মাছসহ বিভিন্ন জলজ প্রাণী মারা যাচ্ছে। এছাড়াও এলাকাবাসী ও গবাদী পশু চর্মরোগ, শ্বাসকষ্ট, ক্যান্সারসহ বিভিন্ন রোগে ভোগছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
কারখানা থেকে নির্গত ক্ষতিকর ও বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ ওই এলাকার পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে।
এর আগে অবৈধ প্রতিষ্ঠানটি চিরস্থায়ী ভাবে বন্ধের দাবী জানিয়ে গত ২৬ নভেম্বর জেলা প্রশাসন ও জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরে ১২৩ জন ভুক্তভোগী স্বাক্ষরিত লিখিত একটি অভিযোগ দাখিল করেছিলেন বালীগাঁও গ্রামের মোঃ মনির হোসেন, ইকবাল হোসেন, আবুল হোসেন, আসলাম মিয়া এবং ছানাউল্লাহ।
গাজীপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর কালিগঞ্জ জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) মো কামরুজ্জামান বলেন, ‘এইচ কিউ লিড ফ্যাক্টরী লিমিটেড’ নামে অবৈধ ওই কারখানায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার নির্দেশ দেন কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শিবলী সাদিক। নির্দেশ দেওয়ার পর তাৎক্ষণিক অবৈধ ওই কারখানার বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে তাদের ব্যবহৃত বৈদ্যুতিক মিটার খুলে নিয়ে আসা হয়েছে। তিনি আরো জানান, গার্মেন্টসের নামে বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়ে তারা অবৈধ ওই কারখানায় ব্যাবহার করে আসছিল।
কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শিবলী সাদিক বলেন, ‘অভিযোগের ভিত্তিতে ‘এইচ কিউ লিড ফ্যাক্টরী লিমিটেড’ নামে অবৈধ ওই কারখানায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে তাদের সকল কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছে। এছাড়াও অবৈধ এই কারখানা পূণরায় আর কখনো চালু করবে না মর্মে মুচলেকা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ’।
উল্লেখ্য: গত ৮ ডিসেম্বর (মঙ্গলবার) বিকেলে স্থানীয়দের অভিযোগের ভিত্তিতে অবৈধভাবে পরিচালিত কারখানাটি পরিদর্শন করে তাদের সকল কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিলেন কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) শিবলী সাদিক। কিন্তু রাত থেকেই পূনরায় কাজ শুরু করে কারখানা কর্তৃপক্ষ।
এর আগে ২০১৯ সালের ১৭ জানুয়ারি নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে বিআইডব্লিউটিএ উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে নদীর জমি দখলের অভিযোগে কারখানাটি বন্ধ করে দিয়েছিল।
এছাড়াও অবৈধভাবে পরিচালিত ‘এইচ কিউ লিড’ নামের ওই ব্যাটারি কারখানাতে বিভিন্ন সময় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে পরিবেশ দূষণের দায়ে কারখানাটি বন্ধ করেছিল উপজেলা প্রশাসন।
এরপরও অবৈধভাবে পরিচালনা করে আসছিল কারখানাটি। এতে চরমভাবে ওই এলাকার পরিবেশ দূষিত এবং কারখানার দূষিত বর্জ্যের কারণে শীতলক্ষ্যা নদী দূষিত হয়েছে।
এ সংক্রান্ত আরো জানতে……..
কালীগঞ্জে ব্যাটারি পুড়িয়ে সীসা উৎপাদনের অবৈধ কারখানা, অভিযোগ করেও প্রতিকার নেই!
কালীগঞ্জে অবৈধ ব্যাটারি ফ্যাক্টরিতে ডাকাতদের হামলা, শর্টগান লুট, গানম্যান আহত
অবৈধ ব্যাটারি ফ্যাক্টরিতে মোবাইল কোর্টের অভিযান: ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা
প্রশাসনের হস্তক্ষেপে অবশেষে “সাময়িকভাবে বন্ধ” অবৈধ ব্যাটারি ফ্যাক্টরি