শীতলক্ষ্যার তীর কেটে ইটভাটায় মাটি বিক্রি: নীরব স্থানীয় প্রশাসন
গাজীপুর কণ্ঠ : গাজীপুরের কালীগঞ্জ ও নরসিংদীর পলাশ উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত শীতলক্ষ্যা নদীর দুই পাড়ের মাটি বিক্রির হিড়িক পড়েছে। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত শতাধিক ট্রলার ভরে নদীর তীরের মাটি সংগ্রহ করছে স্থানীয় কিছু অসাধু মাটি ব্যবসায়ী। এসব মাটি তারা বিক্রি করছেন পার্শ্ববর্তী ইটভাটাগুলোতে।
এদিকে দীর্ঘ দিন ধরে এসব মাটি বিক্রির কাজ চললেও স্থানীয় প্রশাসন কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। ফলে অসাধু মাটি ব্যবসায়ীদের দেখাদেখি নদীর মাটি বিক্রির সাথে যুক্ত হচ্ছেন স্থানীয় কৃষকেরাও। তারা এখন চাষাবাদ না করে টাকার লোভে নদী তীরের মাটি বিক্রি করছেন। এতে করে ভাঙন আতঙ্কে পড়ছে নদীর পাড়ের এলাকাগুলো।
সরেজমিনে দেখা যায়, কালীগঞ্জের জামালপুর থেকে দক্ষিণ নারগানা গ্রাম ও পলাশ উপজেলার ডাঙ্গা থেকে চরসিন্দুর ইউনিয়ন পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে নদীর দুই তীরে ১৫টি স্থানে চলছে মাটি কাটার মহোৎসব। প্রতিটি স্পটে ৪০ থেকে ৫০ জন শ্রমিক মাটি কেটে ট্রলারে তুলছেন। পরে ট্রলারে ভরে মাটি নিয়ে যাওয়া হচ্ছে পার্শ্ববর্তী ইটভাটাগুলোতে।
কালীগঞ্জের দক্ষিণ নারগানা গ্রামে নদীর তীরের মাটি কাটার বিষয়ে স্থানীয়রা জানান, এখানে দীর্ঘ দিন ধরে ওই এলাকার ৮ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আশাদ মিয়া ও সাংগঠনিক সম্পাদক মানিক মোড়ল মাটি বিক্রি করছেন। তাদের ভয়ে মাটি কাটার কাজে কেউ বাধা দিতে সাহস পাচ্ছে না। তবে মাটি কাটার বিষয়টি অস্বীকার করে আশাদ ও মানিক জানান, তারা কোনো মাটি বিক্রি করছেন না। এসব ওই এলাকার কৃষকেরা বিক্রি করছেন।
এ ছাড়া দক্ষিণ নারগানার আরেকটি স্থানে গিয়ে দেখা যায়, নদীর তীরজুড়ে একাধিক স্থানে বড় বড় গর্ত।
জানতে চাইলে স্থানীয়রা জানান, নদীর এসব জায়গায় কৃষকেরা ফসল করত। কিন্তু তারা ফসল না করে মাটি বিক্রি করছেন। আশপাশের বিভিন্ন ইটভাটার লোকেরা তাদের কাছ থেকে মাটি কিনে নেয়। মধ্য আকারের একটি ট্রলার ভরে মাটি বিক্রি করলে দুই থেকে তিন হাজার টাকা পাওয়া যায়। তাই টাকা পেয়ে তারা মাটি বিক্রি করছেন।
নদীর তীরের মাটি কাটায় নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে জানতে চাইলে তারা জানান, অনেকেই তো মাটি বিক্রি করছে। প্রশাসন তো কাউকেই বাধা দিচ্ছে না।
এ ব্যাপরের জামালপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মাহাবুব খান ফারুক বলেন, মাটি কাটা বন্ধে প্রশাসন কোনো কার্যকর ব্যবস্থা না নেয়ায় স্থায়ীভাবে এটি বন্ধ করা যাচ্ছে না। আমরা অনেকবার ইউএনও ও এসি ল্যান্ডকে অবগত করেছি। কিন্তু তারা কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
অন্য দিকে পলাশ উপজেলার চরসিংন্দুর ইউনিয়নের কাউয়াদী গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, অর্ধশতাধিক শ্রমিক নদীর তীর ঘেঁষে ফসলি জমির মাটি কাটছেন। ১০-১২টি ট্রলার বোঝাই করে মাটি অন্যত্র নেয়া হচ্ছে। এভাবে গত এক মাস ধরে এখান থেকে মাটি নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।
মাটি কাটার কাজে নিয়েজিত শ্রমিকেরা জানান, তারা মজুরির বিনিময়ে এখান থেকে মাটি কাটছেন। সারা দিনে ২০ থেকে ২৫টি ট্রলার ভরতে হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওই এলাকার নুরুল ইসলাম ভূঁইয়া নামে এক মাটি ব্যবসায়ী এখান থেকে মাটি বিক্রি করছেন।
এ ব্যাপারে নুরুল ইসলাম ভূঁইয়ার সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, এটি তার পৈতৃক সম্পত্তি। এখানে ফসল হয় না বলে তিনি মাটি বিক্রি করছেন।
নদীর তীরের মাটি কাটারা বিষয়ে কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খন্দকার মুশফিকুর রহমান ও পলাশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ভাস্কর দেবনাথ বাপ্পির সাথে যোগাযোগ করলে তারা জানান, এ ব্যাপারে খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।