বিনোদন প্রিয় কালীগঞ্জবাসীর জন্য নেই কোনো বিনোদন কেন্দ্র!
গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : বিনোদন প্রিয় কালীগঞ্জবাসীর জন্য উপজেলা সদর ও পৌর এলাকায় নেই কোনো বিনোদন কেন্দ্র। বন্ধ হয়ে গেছে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে থাকা কয়েকটি সিনেমা হল। এ কারণে এলাকাবাসী রেলস্টেশন, নদীর পাড় এবং ঘোড়াশাল রেল ও সড়ক সেতুকেই বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে বেছে নিয়েছে।
শীতলক্ষ্যা নদীর পাড় ঘেঁষে গড়ে ওঠা কালীগঞ্জ পৌর এলাকা জুড়ে সরকারি কিংবা বেসরকারিভাবে কোনো বিনোদন কেন্দ্র গড়ে ওঠেনি।
কালীগঞ্জ পৌর এলাকায় রয়েছে সরকারি সকল প্রশাসনিক দপ্তর, সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল, আবাসিক এলাকা, স্কুল-কলেজ, বাণিজ্যিক এবং বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান। পৌর এলাকায় প্রায় ৮০ হাজার লোকের বসবাস। কিন্তু তাদের বিনোদনের জন্য নেই কোনো ব্যবস্থা।
গুরুত্বপূর্ণ এই এলাকার শিশুদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশের জন্য বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে একটি উন্মুক্ত পার্ক গড়ে তোলা প্রয়োজন বলে মনে করছেন স্থানীয় অনেকেই।
স্থানীয়রা জানান, কালীগঞ্জ উপজেলা সদর ও পৌর এলাকায় কোনো বিনোদন কেন্দ্র বা পার্ক না থাকায় আড়িখোলা রেলওয়ে স্টেশন, শীতলক্ষ্যা নদীর পাড়, ঘোড়াশাল রেল ব্রিজ এবং ঘোড়াশাল শহীদ ময়েজউদ্দিন সেতুতে প্রায় প্রতিদিন বিকেলে মানুষের ভিড় লেগে থাকে। ঈদ, পূজা, নববর্ষ, স্বাধীনতা ও বিজয় দিবসসহ বিভিন্ন দিবসে আড়িখোলা রেলওয়ে স্টেশন, শীতলক্ষ্যা নদীর পাড়, ঘোড়াশাল রেল এবং সড়ক সেতুতে হাজার হাজার মানুষের ভিড় জমে। শিশু, তরুণ, যুবক ও বয়স্করা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সেখানে ভিড় করেন।
স্থানীয় খুচরা ব্যবসায়ীরা শিশুদের জন্য খেলনা, চটপটি, ফুচকাসহ নানা ধরনের সামগ্রীর পসরা সাজিয়ে বসেন। বিনোদনের জন্য আসা দর্শনার্থীরা সেখান থেকে ইচ্ছামতো জিনিসপত্র কিনেন।
অনেকেই বলেন, কালীগঞ্জের মানুষ বিনোদনপ্রিয়। কিন্তু তাঁদের বিনোদনের জন্য বিনোদন কেন্দ্র কিংবা কোনো পার্ক না থাকাটা দুঃখের বিষয়। তাঁরা অন্তত শিশুদের কথা চিন্তা করে হলেও একটি বিনোদন কেন্দ্র বা পার্ক নির্মাণের দাবি করেন।
কালীগঞ্জ বাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, কালীগঞ্জ পৌর এলাকাসহ বাহিরের আরো কয়েক উপজেলা থেকে প্রতিদিন ১৫-২০ হাজার লোক কেনাকাটাসহ বিভিন্ন কাজে কালীগঞ্জ বাজারে আসেন। বিশেষ করে শিশু ও নারীদের বিনোদনের জন্য কালীগঞ্জে কোনো বিনোদন কেন্দ্র বা পার্ক নেই। দূর-দূরান্ত থেকে আসা মানুষের বিশ্রামের জন্যও কালীগঞ্জে ভালো কোন উন্মুক্ত পরিবেশ নেই। কালীগঞ্জে একটি বিনোদন কেন্দ্র বা পার্ক নির্মিত হলে আরো মানুষ বেড়ানোর জন্য কালীগঞ্জে আসতেন। এতে করে অর্থনৈতিক ভাবেও আমরা আরো লাভবান হতে পারতাম।
কালীগঞ্জ মহিলা কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী রুপালী ইসলাম বলেন, ‘কালীগঞ্জ পৌর এলাকায় আমার বাসা ও কলেজ। আমার সহপাঠী কিংবা পরিবারের সঙ্গে অবসরে বা বিভিন্ন উৎসবে ঘুরে বেড়ানোর মতো কালীগঞ্জে কোনো নিরাপদ বা ভালো পরিবেশ নেই। কালীগঞ্জে একটি বিনোদন কেন্দ্র বা পার্ক নির্মিত হলে আমরা নিরাপদে আনন্দ উপভোগ করতে পারবো’।
সরকারি কালীগঞ্জ শ্রমিক কলেজের মানবিক শাখার দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবু তাহের রিয়াদ। তিনি কালীগঞ্জ পৌরসভার ৪ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অবসরে বা উৎসবে বিনোদনের জন্য কালীগঞ্জে কোনো বিনোদন কেন্দ্র বা পার্ক নেই। তাই অবসরে বা বিভিন্ন উৎসবে আমাদের আড়িখোলা রেল স্টেশন বা রাস্তায় দাঁড়িয়ে সময় পার করতে হয়। কালীগঞ্জে একটি বিনোদন কেন্দ্র বা পার্ক নির্মাণ করা হলে সকলের জন্য আনন্দদায়ক হবে’।
কালীগঞ্জ উপজেলা যুব মহিলা লীগের আহ্বায়ক পিয়ারা বেগম শান্তা বলেন, ,কালীগঞ্জের মানুষ বিনোদন প্রিয়। কিন্তু বিনোদনের জন্য কালীগঞ্জে কোনো বিনোদন কেন্দ্র বা পার্ক নেই। তাই অবসরে বিনোদনের জন্য এলাকার শিশু ও নারীদের দূরবর্তী কোথাও যেতে হয়। কালীগঞ্জে সরকারি কিংবা বেসরকারিভাবে কোন বিনোদন কেন্দ্র বা পার্ক গড়ে ওঠলে এলাকার শিশু এবং নারীদের জন্য খুবই ভালো হবে। শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে একটি পার্ক নির্মাণের জন্য উপজেলা প্রসাশন উদ্যোগ নিয়েছেন, এমনটি তিনি শুনেছেন বলেও জানান।
কালীগঞ্জ উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা শাহাদৎ হোসেন বলেন, ২০১৯ সালের ৮ জুলাই (সোমবার) পার্ক নির্মাণের জন্য নির্ধারিত জমি পরিদর্শন করেন জেলা প্রশাসক এস. এম. তরিকুল ইসলাম স্যার। ওইদিনই কালীগঞ্জ পৌরসভার দড়িসোম মৌজায় শীতলক্ষ্যা নদীর তীরবর্তী সরকারি প্রায় সাড়ে ৫ বিঘা জমিতে পার্ক নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। করোনার কারণে বর্তমান নির্মাণ কাজ বন্ধ রয়েছে। দ্রুতই পার্ক নির্মাণের কাজ শুরু করা হবে।
কালীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মোঃ লুৎফর রহমান বলেন, ‘পৌরসভার নিজস্ব কোন জমি না থাকার কারণে বিনোদন কেন্দ্র নির্মাণের জন্য কোন উদ্যোগ নেয়া যাচ্ছে না। জমি বরাদ্দ পেলে কালীগঞ্জ পৌর এলাকায় বিনোদন কেন্দ্র নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করা হবে’।
কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) শিবলী সাদিক বলেন, ‘কালীগঞ্জ খেয়া ঘাট সংলগ্ন এলাকায় একটি শিশু পার্ক এবং দড়িসোম মৌজায় শীতলক্ষ্যা নদীর তীরবর্তী সরকারি প্রায় সাড়ে ৫ বিঘা জমিতে একটি ইকো পার্ক নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। দ্রুতই ওই পার্ক দুটি’র নির্মাণ কাজ শুরু করা হবে’।
উল্লেখ্য : কালীগঞ্জ পৌরসভার দড়িসোম মৌজায় ‘আবুল খায়ের গ্রুপের’ দখলে থাকা সরকারি ১ নং খতিয়ান ভুক্ত শীতলক্ষ্যা নদীর তীরবর্তী প্রায় সাড়ে ৫ বিঘা জমি উচ্ছেদ করে পার্ক নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছিল প্রশাসন। কিন্তু কিছুদিন না যেতেই সেই জমি পূনরায় আবার দখলে নেয় ‘আবুল খায়ের গ্রুপ’।