‘বদিকে দিয়ে মাদক আর শাহজাহান খানকে দিয়ে সড়ক নিয়ন্ত্রণ কতটা সম্ভব?’
গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : ইয়াবার মতো মাদক প্রতিরোধে আবদুর রহমান বদি এবং সড়কে দুর্ঘটনা রোধের কাজে শাজাহান খানের সম্পৃক্ততা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সংসদে।
জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম সোমবার প্রশ্নোত্তর পর্বে সড়কে নিরাপত্তা নিয়ে এক প্রশ্নে বলেন, “বদিকে দিয়ে মাদক নিয়ন্ত্রণ আর শাহজাহান খানকে দিয়ে সড়ক নিয়ন্ত্রণ কতটা সম্ভব?
“গরু-ছাগল চিনলে লাইসেন্স দেওয়া যাবে- শাজাহান খানের এই মন্তব্যে সারাদেশে তোলপাড় হয়েছিল। উনার এক হাসি ওই সময় দেশে কী পরিস্থিতি তৈরি করেছিল। তাকে দিয়ে সরকারের কতখানি কমিটমেন্ট রক্ষা হবে?”
কক্সবাজারের টেকনাফে আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য বদি ও তার স্বজনদের বিরুদ্ধে ইয়াবা বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে। বিতর্কিত হয়ে পড়ায় এবার সংসদ নির্বাচনে তাকে মনোনয়ন না দিয়ে তার স্ত্রীকে মনোনয়ন দেয় আওয়ামী লীগ।
সম্প্রতি বদি টেকনাফকে ইয়াবামুক্ত করার ঘোষণা দেন। ইয়াবা পাচারকারীদের পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণের আহ্বানও জানান তিনি। এরপর প্রশাসনের তৎপরতায় শনিবার ১০২ জন আত্মসমর্পণও করেন, এর মধ্যে বদির কয়েকজন স্বজনও রয়েছেন।
সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে রোববারই একটি কমিটি গঠন করে জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিল। ১৫ সদস্যের এই কমিটির প্রধান করা হয়েছে সাবেক নৌমন্ত্রী শাজাহান খানকে, যিনি বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যকরি সভাপতি।
শাজাহান খানের চাপেই সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর ঘটনার আইনটি কঠোর করা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ বহু দিনের। গত বছর ঢাকায় বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর পর শাজাহান খানের হাসিমুখে কথা বলার পর বিক্ষোভে ফেটে পড়ে শিক্ষার্থীরা, যে জন্য দুঃখ প্রকাশও করতে হয়েছিল তাকে।
ওসমানের প্রতিবাদ, শাজাহান খানের কৈফিয়ৎ
স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের অধিবেশনের শুরুতে মন্ত্রীদের প্রশ্নোত্তর পর্বে জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমাম প্রশ্ন করার পর প্রতিবাদ জানান আওয়ামী লীগের এ কে এম শামীম ওসমান।
নারায়ণগঞ্জের এই সংসদ সদস্য বলেন, “শাজাহান খান সম্মানিত ব্যক্তি। তার হাসি নিয়ে কিছু ঘটেছে, নাকি কেউ ঘটিয়েছে, তা নিয়ে আলোচনা করতে হবে। এ বক্তব্যের প্রতিবাদ জানাচ্ছি।”
প্রশ্নোত্তর পর্ব শেষে ২৭৪ বিধিতে ব্যক্তিগত কৈফিয়তে দাঁড়ান সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খান।
ফখরুল ইমামের বক্তব্যকে ‘দুঃখজনক’ আখ্যায়িত করে তার নিন্দা জানান তিনি এবং ওই বক্তব্য প্রত্যাহার অথবা বাদ দিতে স্পিকারকে আহ্বান জানান তিনি।
দীর্ঘদিনের একজন শ্রমিক নেতা হিসেবে নিজেকে তুলে ধরে দেশের সড়ক পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে নিজের বিভিন্ন ভূমিকা তুলে ধরেন শাজাহান খান।
ওবায়দুল কাদেরের যুক্তি
ফখরুল ইমামের প্রশ্নের উত্তরে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানোর লক্ষ্যে গঠিত কমিটিতে শাজাহান খানকে নেতৃত্বে রাখার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, ‘অভিজ্ঞতার কারণে’ শাজাহান খানকে কমিটির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আর তার বিষয়ে কেউ আপত্তি জানাননি।
“অতীতে তার কোন স্মিত হাসির জন্য কোনো সমস্যার উদ্ভব হয়েছে, সেটা দেখতে চাইব না। দেখব এই কমিটির সবাই মিলে রিপোর্টটি কীভাবে পেশ করেন। সেটার প্রেক্ষিতে আমরা পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করব। কাজেই এখানে ব্যক্তি বিষয় নয়।”
সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিলের ওই সভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ কয়েকজন মন্ত্রী, পরিবহন সংশ্লিষ্ট নেতা, নিরাপদ সড়কের আন্দোলনের নেতা ইলিয়াস কাঞ্চন, কলামনিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদসহ বিভিন্ন বিশেষজ্ঞের উপস্থিত থাকার কথা তুলে ধরেন কাদের।
“সেখানে উপস্থিত কেউ এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেননি। একজনই পুরো রিপোর্টটি প্রণয়ন করবেন না। তিনি যেহেতু অভিজ্ঞ মানুষ সেজন্য তার নামটি এখানে প্রস্তাব করা হয়েছে।”
সড়কে শৃঙ্খলা আনতে নানা পদক্ষেপ তুলে ধরার পাশাপাশি বিশৃঙ্খলার জন্য ‘ভিআইপি’দেরও দায়ী করেন মন্ত্রী কাদের।
“আমরা ভিআইপি হয়ে উল্টোপথে যাই। এটা তো স্বাভাবিক বিষয় নয়। ভিআইপিরা অসাধারণ মানুষ, তারা যদি উল্টো পথে চলেন, তাহলে সাধারণ মানুষ কী করবে?”
জনসচেতনতার উপর জোর দিয়ে কাদের বলেন, “কেবল ডিভাইডার দিয়ে সড়ক দুর্ঘটনা কমানো সম্ভব নয়। পাশে ফুটওভার ব্রিজ থাকলেও দেখা যায়, মানুষ লাফ দিয়ে ডিভাইডারের উপর দিয়ে রাস্তা পার হচ্ছে। মোবাইল কানে দিয়ে মধুর স্বরে কথা বলতে বলতে রাস্তা পার হন, আর বাসে চাপা দিয়ে চলে যায়।”
মন্ত্রী জানান, দেশে সড়ক পরিবহনের আওতায় রাস্তার পরিমাণ ২১ হাজার ৫৯৫ দশমিক ৪৯ কিলোমিটার। এর মধ্যে জাতীয় মহাসড়ক তিন হাজার ৯০৬ কিলোমিটার, আঞ্চলিক মহাসড়ক ৪ হাজার ৪৮২ দশমিক ৫৪ কিলোমিটার এবং জেলা সড়ক ১৩ হাজার ২০৬ দশমিক ৯২ কিলোমিটার।
মন্ত্রীর তথ্য অনুযায়ী সড়ক বিভাগের সব থেকে বেশি রাস্তা রয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগে ৯৭৭ দশমিক ৫২ কিলোমিটার এবং সব থেকে কম মেহেরপুর জেলায় ১২৪ দশমিক ৮৩ কিলোমিটার।