ঈদে গরু বিক্রির ২১ লাখ টাকা লুটের ঘটনায় পাঁচ ডাকাত গ্রেপ্তার করেছে কালীগঞ্জ থানা পুলিশ
গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : ঈদে গরু বিক্রির পর বাড়ি ফেরার পথে বেপারীদের ২১ লাখ টাকা লুটের ঘটনায় পাঁচ ডাকত গ্রেপ্তার করেছে কালীগঞ্জ থানা পুলিশ।
শনিবার (৮আগস্ট) বিকেলে পাঁচ ডাকতকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।
তিন ডাকাত ঘটনার দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
সত্যতা নিশ্চিত করেছেন কালীগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পঙ্কজ দত্ত।
গ্রেপ্তার ডাকতরা হলো: নাটোর সদর থানা এলাকার কোরটা গ্রামের হাসেন সরকারের ছেলে রুপম সরকার (২৭), রাজশাহীর বাঘা থানার খুদি ছয় ঘাটি গ্রামের মালামের ছেলে ইনত ছেলে ইন্তু (৩৮), নাটোর জেলার বড়াইগ্রাম থানার চড়ইকুল গ্রামের মৃত আবদুল খালেকের ছেলে সুরুজ আলী (৩৯), একই জেলার গুরুদাসপুর থানার জয়নগর গ্রামের মৃত হামেদ হাজীর ছেলে আলম (৫৫) এবং পাবনা সদর থানা এলাকার দড়ি কালামপুর গ্রামের মৃত ওমর আলী খলিফার ছেলে বাবু খলিফা (৩৫)।
তাদের মধ্যে ঘটনার দায় স্বীকার করে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে ডাকাত ইন্ত, রুপন সরকার এবং বাবু খলিফা।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কালীগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শাকিব হাসান বলেন, কোরবানির ঈদ উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ৩৭ টি গরু ক্রয় করে তা বিক্রির জন্য ঢাকার আফতাব নগর গরুর হাটে নিয়ে যান রংপুরের কোতয়ালী থানা এলাকার ৭ জন গরু বিক্রেতা। পরে গরু বিক্রির নগদ ২১ লাখ ১৮ হাজার ৬’শ টাকাসহ গত ৩১ জুলাই দিবাগত রাতে রংপুর ফেরার উদ্দেশ্যে রামপুরা ব্রিজে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করতে থাকে ওই সাত জন গরু বিক্রেতা। এমন সময় রাত ১২ টা ১৫ মিনিটের দিকে তাদের কাছে এসে একটি ট্রাক দাঁড়ায। এরপর ট্রাকের হেলপার ডাকতে থাকে ঠাকুরগাঁও-রংপুর হয়ে ট্রাকটি পঞ্চগড় যাবে ভাড়া ৬শ টাকা। তখন ওই ৭ জন গরু বিক্রেতা রংপুর যাওয়ার উদ্দেশ্যে তিন’শ টাকা করে ভাড়া ঠিক করে তারা সাতজন ট্রাকে উঠে। পরে তাদের সঙ্গে আরো দুইজন ২’শ টাকা করে সিরাজগঞ্জ যাওয়ার উদ্দেশ্যে ট্রাকে উঠে। কিছুদূর যাওয়ার পর ২’শ টাকা ভাড়া ঠিক করে পথে আরো ৮-১০ জন ট্রাকে উঠে। পরে ট্রাকটি টঙ্গী যাওয়ার পর যাত্রী সেজে ট্রাকে ওঠা ওই ১০-১২ জন অজ্ঞাত ডাকাত দেশীয় অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে গরু বেপারীদের সঙ্গে থাকা গামছা এবং দড়ি দিয়ে হাত-পা বেঁধে ধারালো অস্ত্রের মাধ্যমে তাদের আঘাত করে। এক পর্যায়ে জোরপূর্বক গরু বেপারীদের সঙ্গে থাকা নগদ ২১ লাখ ১৮ হাজার ৬’শ টাকা লুন্ঠন করে নেয় ডাকাতদল। পরে মিরেরবাজার হয়ে ঢাকা-বাইপাস সড়ক দিয়ে নারায়ণগঞ্জ যাওয়ার পথে কালীগঞ্জের উলুখোলার বাঁশবড়ি এলাকায় গিয়ে রাত দেড়টার দিকে সড়কের বা পাশে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় সাত গরু বেপারীকে ট্রাক থেকে ফেলে দেয় অজ্ঞাত ডাকাতদল। পরে ট্রাক নিয়ে নারায়ণগঞ্জের দিকে চলে যায অজ্ঞাত ডাকাতরা। এরপর গরু বেপারীদের আত্মচিৎকারে উলুখোলা পুলিশ ফাঁড়ির টহলরত পুলিশ তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে সেকান্তর নামে এক গরু বেপারী বাদী হয়ে গত ১ আগস্ট সন্ধ্যায় কালীগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
এসআই শাকিব হাসান আরো বলেন, মামলা দায়ের পর বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে এবং প্রযুক্তির সহায়তায় ট্রাকটি উদ্ধার করে জব্দ করা হয়। এরপর বিআরটিএ থেকে তথ্য যাচাই শেষে গত ৪ আগস্ট প্রথমে নাটোর থেকে ওই ট্রাকের হেলপার হাসান আলীকে গ্রেপ্তার করে ৫ আগস্ট তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। ট্রাকের হেলপার হাসান আলীর দেওয়া তথ্য এবং মোবাইল ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে নাটোর, রাজশাহী এবং পাবনা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ওই পাঁচ ডাকাতকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং লুণ্ঠিত ৫৭ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।
লুণ্ঠিত বাকী টাকা উদ্ধার এবং জড়িত অন্য ডাকাতদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শাকিব হাসান।
কালীগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পঙ্কজ দত্ত বলেন, গ্রেপ্তার পাঁচ ডাকতকে আদালতে প্রেরণ করলে ঘটনার দায় স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় তিন ডাকাত। পরবর্তীতে পাঁচ ডাকাতকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন।
আরো জানতে….
‘ক্লু- লেস সাধারণ ডায়েরি’ তদন্তে রহস্য উদঘাটনের স্বীকৃতি পেলেন এসআই শাকিব