মেয়াদ উত্তীর্ণ লাইসেন্সেই টঙ্গীর ইন্টারন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে কোভিড-১৯ টেস্ট!
গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল মালিক সমিতির সভাপতি মবিন খানের নিজের হাসপাতালের লাইসেন্সের মেয়াদ নেই গত এক বছরের বেশি সময় ধরে। টঙ্গীতে অবস্থিত মবিন খানের মালিকানাধীন ইন্টারন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের লাইসেন্সের মেয়াদ না থাকলেও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে ঠিকই বাগিয়ে নিয়েছে কোভিড ১৯-এর টেস্টের অনুমোদন।
সম্প্রতি বিভিন্ন হাসপাতালে অনিয়মের অভিযোগে র্যাবের অভিযানের মুখে গত সোমবার বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল মালিক সমিতির নেতারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের সঙ্গে তার বাসভবনে দেখা করেন। সাক্ষাতে সমিতির নেতারা করোনা মহামারীর সময় বিভিন্ন হাসপাতালের অনিয়মের বিরুদ্ধে র্যাবের চলমান অভিযানের প্রসঙ্গ তোলেন। তারা এই মহামারী সময়ে র্যাবের অভিযান সাময়িকভাবে বন্ধ রাখতে মন্ত্রীকে অনুরোধ জানান। মন্ত্রী তাদের কোনো আশ্বাস না দিয়ে বরং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে অভিযান চালানোর কথা জানিয়ে দিয়েছেন বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, মবিন খানের মালিকানাধীন ইন্টারন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয় ২০১৯ সালের জুন মাসে। এর পর তিনি আর লাইসেন্স নবায়নে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেননি। এরই মধ্যে গত ৬ জুলাই রাজধানীর উত্তরায় রিজেন্ট হাসপাতালে করোনার ভুয়া রিপোর্ট প্রদানসহ নানা অনিয়মের অভিযোগে অভিযান পরিচালনা করে র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। র্যাবের অভিযানের একদিন পর ৭ জুলাই তড়িঘড়ি করে নিজের হাসপাতালের লাইসেন্স নবায়নের জন্য আবেদন করেন মবিন খান। জমা দেন নবায়ন ফি।
জানতে চাইলে মবিন খান বলেন, ‘লাইসেন্সের আবেদন করেছি। পরিদর্শনও শেষ হয়েছে। আশা করছি দ্রুত নবায়ন হয়ে যাবে। আপনারা এসব ছোটখাটো বিষয় নিয়ে লিখবেন কেন? এটা কোনো ব্যাপার না।’
মন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের বিষয়ে মবিন খান বলেন, ‘আমরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলেছি, র্যাবের অভিযান বন্ধ করতে হবে। কারণ হাসপাতালে অনেক টেকনিক্যাল বিষয় থাকে। র্যাব তো সবকিছু বুঝবে না। এখানে অভিযান করতে হলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অথবা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লোকজন করুক। আমরা তাদের স্বাগত জানাই।’ ইন্টারন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে জার্মানির আরটি পিসিআর প্রযুক্তির মেশিন ব্যবহার করে করোনা পরীক্ষা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
ভুয়া রিপোর্ট প্রদানসহ নানা অভিযোগে র্যাবের অভিযান হওয়া সাহাবউদ্দিন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বেশ কিছু নমুনা পরীক্ষার জন্য ইন্টারন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের ল্যাবে পাঠানো হয়েছিল। এ ছাড়া হাসপাতালটিতে কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসাসেবাও দেওয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম বলেন, ‘আমরাও চাই না কোনো হাসপাতালে অভিযান পরিচালনা করা লাগুক। আমরা চাই, তারা নিজেরাই সংশোধন হয়ে যাক। কিন্তু সেটি না হলে অভিযান অবশ্যই করা হবে। এ ক্ষেত্রে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। র্যাবের সব অভিযানেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তর অথবা সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকেন।’
লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও ইন্টারন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালকে কীভাবে টেস্টের অনুমোদন দেওয়া হলো জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জনসংযোগ কর্মকর্তা আক্কাস আলী শেখ বলেন, ‘এ ব্যাপারে হাসপাতাল শাখার নতুন পরিচালক যোগ দিলে উনি বলতে পারবেন।’
উল্লেখ্য : ২০০০ সালে ইন্টারন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি ১৯৯৯-২০০০ শিক্ষাবর্ষে ২০ জন শিক্ষার্থীর নিয়ে শুরু হয়েছিল। তার পর থেকে প্রতিবছর ধীরে ধীরে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ছে। বর্তমানে ৬৫০ শয্যার একটি পরিপূর্ণ হাসপাতাল এটি। এখানে পাঁচ বছর মেয়াদী কোর্স শেষে এমবিবিএস ডিগ্রি প্রদান করে। স্নাতক পরবর্তী এক বছরের ইন্টার্নশিপ সমস্ত স্নাতকদের জন্য বাধ্যতামূলক। ডিগ্রীটি বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল স্বীকৃত।