অর্থনীতি

এজেন্ট ব্যাংকিং সেবায় আসছে গ্রামীণফোন ও রবি

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আগেই ব্যাংকিং খাতের সেবায় যুক্ত হয়েছে দেশের সেলফোন অপারেটররা। মূলত নেটওয়ার্ক সেবাদাতা হিসেবে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে যুক্ত তারা। এবার এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে সরাসরি সেবাটিতে আসতে চায় শীর্ষ দুই সেলফোন অপারেটর গ্রামীণফোন ও রবি আজিয়াটা। নিজেদের বিভিন্ন আউটলেটে ব্যাংক এশিয়ার এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা চালুর বিষয়ে সম্প্রতি অপারেটর দুটিকে শর্তসাপেক্ষে অনুমতি দিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে সেলফোন অপারেটররা। ব্যাংক কিংবা মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটরের নেতৃত্বাধীন সব ধরনের মডেলেই এক্ষেত্রে ভিন্ন ভূমিকা পালন করছে তারা। ব্যাংক নেতৃত্বাধীন মডেলে কেনিয়ায় এম সোয়ারি, পাকিস্তানে ইজিপয়সা, নেপালে হ্যালোপয়সা এবং ভারতে ফিনো ও ইকো নামে এ সেবা চালু রয়েছে। আর টেলিকম সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্বাধীন মডেলে কেনিয়ায় এম পেসা, তানজানিয়াতে এমটিএন মানি ও ইন্দোনেশিয়ায় এক্সএল তুনাই সেবা চালু আছে। এছাড়া পেমেন্ট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্বাধীন মডেলের আওতায় ভারতে অক্সিজেন ও কম্বোডিয়াতে উইংয়ের সেবা চালু রয়েছে। বাংলাদেশে এতদিন নেটওয়ার্ক সেবা দিয়ে গেলেও এ প্রথম সরাসরি এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে যুক্ত হচ্ছে সেলফোন অপারেটর গ্রামীণফোন ও রবি।

জানা গেছে, আয়ের ভিন্ন উৎস সৃষ্টি, গ্রাহকসেবা কেন্দ্রে ব্যাংকিং সেবা প্রদানের মাধ্যমে টেলিযোগাযোগ সেবায় উৎসাহ তৈরি ও আউটলেট ব্যবস্থাপনা ব্যয় হ্রাসের লক্ষ্যে এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা চালুর অনাপত্তি চেয়ে আবেদন করে সেলফোন অপারেটর দুটি। দেশে এজেন্ট ব্যাংকিং সেবার কার্যক্রম পরিচালনায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী এ আবেদন করা হয়। গ্রামীণফোন ও রবির ডিস্ট্রিবিউশন চ্যানেল ব্যবহার করে প্রতিষ্ঠান দুটির আউটলেটগুলোয় এ সেবা চালুর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে টেলিযোগাযোগ ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য আইনের আলোকে বিষয়টি যাচাই করে কমিশনের লিগ্যাল অ্যান্ড লাইসেন্সিং বিভাগ। যাচাই শেষে বিভাগটি এ সেবা চালুতে কোনো বিধিনিষেধ নেই বলে মতামত দিলে গ্রামীণফোন ও রবিকে অনুমতি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন।

অপারেটর দুটিকে মোট ১১টি শর্ত পূরণ সাপেক্ষে এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা চালুর অনুমতি দিয়েছে বিটিআরসি। শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে—এজেন্ট ব্যাংকিং চালু করলে টেলিকম গ্রাহকের সেবা গ্রহণে কোনো ধরনের বিঘ্ন ঘটবে না এমন অঙ্গীকার করতে হবে অপারেটরদের। এজেন্ট ব্যাংকিং বিষয়ে কোনো সমস্যার দায়দায়িত্ব নেবে না কমিশন। সংশ্লিষ্ট অপারেটর ও ব্যাংকের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তি এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা ও নির্দেশনার ভিত্তিতে এটি নির্ধারিত হবে। পাশাপাশি চুক্তিতে এ-সংক্রান্ত শর্ত রাখতে হবে। এজেন্ট ব্যাংকিং সেবাসংশ্লিষ্ট সব ধরনের তথ্য কমিশনে জমা দিতে হবে। ব্যাংকিং ও টেলিকম সেবাকে একত্রে কোনো প্রচারণামূলক কার্যক্রম পরিচালনায় ব্যবহার করা যাবে না। একটি সেবা নিতে আরেকটি সেবা গ্রহণের বাধ্যবাধকতা দেয়া যাবে না। একটির বিনিময়ে অন্য সেবায় অতিরিক্ত সুবিধা প্রদান করা যাবে না। এজেন্ট ব্যাংকিং ও টেলিকম ব্যবসার হিসাব আলাদাভাবে সংরক্ষণ করতে হবে। সেবাটি থেকে পাওয়া মোট আয়ের সাড়ে ৬ শতাংশ কমিশনে রাজস্ব ও সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিলের অংশ হিসেবে জমা দিতে হবে।

কমিশনের দেয়া শর্তের মধ্যে আরো রয়েছে— ব্যাংকিং সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ও তদারকির ব্যবস্থা রাখতে হবে অপারেটরদের। এ-সংক্রান্ত নথিও কমিশনে জমা দিতে হবে তাদের। স্থাপনায় কানেক্টিভিটির জন্য কমিশনের সব নির্দেশনা প্রতিপালন করতে হবে। ইন্টারনেট সেবার জন্য ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান (আইএসপি) ও অপটিক্যাল ফাইবার ট্রান্সমিশন সেবার জন্য নেশনওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক (এনটিটিএন) অপারেটরদের সঙ্গে চুক্তি করতে হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রবি আজিয়াটার হেড অব করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স সাহেদ আলম বলেন, এ সিদ্ধান্ত ডিজিটাল আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বাড়াতে বড় ধরনের ইতিবাচক পদক্ষেপ বলে আমরা মনে করি। প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের কাছে ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে দিতে দেশজুড়ে ছড়িয়ে থাকা আমাদের অবকাঠামো ব্যবহার করা হবে। ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে এখন দেশের সব প্রান্তের মানুষকে সব ধরনের ব্যাংকিং সেবা দেয়া যাবে, যা প্রথাগত ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে সম্ভব নয়।

আর্থিক অন্তর্ভুক্তি কার্যক্রমের অংশ হিসেবে সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনতে এজেন্ট ব্যাংকিং ব্যবস্থা চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০১৩ সালের ৯ ডিসেম্বর এজেন্ট ব্যাংকিং নীতিমালা জারি করা হয়। পরের বছর সর্বপ্রথম সেবাটি চালু করে ব্যাংক এশিয়া। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনায় নীতিমালা জারি করা হয়। এরই মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে সেবাটি। মূলত অবকাঠামোতে কম ব্যয় ও স্বল্প জনবল প্রয়োজন হয় বলে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে পরিচালন ব্যয়ও কম। ফলে গ্রাহককেও স্বল্প ব্যয় ও দ্রুততম সময়ে সেবা দেয়া যায়।

এ প্রসঙ্গে ব্যাংক এশিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরফান আলী বলেন, অন্য সব সেবার মতো ব্যাংকিং সেবাকেও মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে হবে। সারা দেশে গ্রামীণফোন ও রবির আউটলেট রয়েছে। মানুষের কাছে ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে দেয়ার সুযোগ তৈরি হবে এর মাধ্যমে। আর আর্থিক অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রেও এটি বড় ধরনের উদ্যোগ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক মোট ২১টি বাণিজ্যিক ব্যাংককে এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনার লাইসেন্স দিয়েছে। এর মধ্যে মাঠ পর্যায়ে এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করছে ১৯টি ব্যাংক। ব্যাংকগুলো হচ্ছে—ডাচ্-বাংলা ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, এনআরবি ব্যাংক, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক, এবি ব্যাংক, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক, মধুমতি ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, মিডল্যান্ড ব্যাংক, দ্য সিটি ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ ও ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, গত ডিসেম্বর শেষে সারা দেশে ১৯টি ব্যাংক প্রায় সাড়ে চার হাজার এজেন্টের মাধ্যমে এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা দিচ্ছে। সারা দেশে এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট রয়েছে প্রায় সাত হাজার। ব্যাংক এশিয়া, মধুমতি ব্যাংক ও এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের মাধ্যমে এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা দিচ্ছে। গত বছরের ডিসেম্বর শেষে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে খোলা ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা ২৪ লাখ ৫৬ হাজার ছাড়িয়েছে। এসব হিসাবে আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ১১২ কোটি টাকার বেশি। আর ছয়টি ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে ঋণ বিতরণ করা হয়েছে ১৮৯ কোটি ৪৮ লাখ টাকা।

 

সূত্র: বণিক বার্তা

এরকম আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button