গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : শিশু আদালতে বিচারাধীন মামলায় আটক, বন্দি, অভিযুক্ত, আসামি বা সাক্ষী শিশুর ছবি, নাম, ঠিকানা ও পরিচয় প্রকাশ যে আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ, তা মনে করিয়ে দিয়ে ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারসহ সকল সংবাদ মাধ্যমকে সতর্ক করে দিয়েছে হাই কোর্ট।
একটি রিট মামলার শুনানি শেষে এ বিষয়ে জারি করা রুল নিষ্পত্তি করে বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রজিক আল জলিলের হাই কোর্ট মঙ্গলবার পর্যবেক্ষণসহ এ রায় দেয়।
গোপালগঞ্জের শিশু আদালতের একটি রায়ের বিষয়ে গত নভেম্বরে ডেইলি স্টারে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের সূত্র ধরে হাই কোর্টে এই রিট মামলা করা হয়।
রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছে, “প্রকাশিত খবরে শিশুর নাম, ঠিকানা, পরিচয় তুলে ধরার ক্ষেত্রে এবং খবরে সঠিক শব্দ চয়ন না করে ডেইলি স্টার বেআইনি কাজ করেছে।”
আদালত বলেছে, যেহেতু বিষয়টি নতুন, তাই কোনো সাজা বা জরিমানা না করে সতর্ক করা হল, যেন ভবিষ্যতে এমনটা আর না ঘটে।
পাশাপাশি বিচারাধীন শিশুর ছবি, নাম, পরিচয়, প্রকাশ পায় বা শিশুকে চিহ্নিত করা যায়, এমন প্রতিবেদন যাতে ভবিষ্যতে কোথাও ছাপা না হয়, সে বিষয়ে সকল সংবাদ মাধ্যমকে সতর্ক থাকতে বলেছে হাই কোর্ট।
রায়ে বলা হয়, “শিশু আইনের মূল উদ্দেশ্য কোনো মামলার বিচারের ক্ষেত্রে তাদের গোপনীয়তা রক্ষা করা, যা বিচারপূর্ব, বিচার চলা ও বিচার পরবর্তী সময় পর্যন্ত বোঝায়। এ ক্ষেত্রে তাদের মর্যাদা বজায় রাখতে হবে, যাতে তারা সংশোধন ও পুনর্বাসনের সুযোগ পায়।”
গত বছরের ৫ নভেম্বর ডেইলি স্টারে ‘বয় গেটস টেন ইয়ার্স ফর কিলিং ক্লাসমেট’ শিরোনামে ওই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রকাশিত প্রতিবেদনে দণ্ডিত শিশুটির পরিচয়ও প্রকাশ করা হয়।
এভাবে প্রতিবেদন প্রকাশ ২০১৩ সালের শিশু আইনের ২৮ ধারার লঙ্ঘন জানিয়ে গত বছর ১৮ নভেম্বর হাই কোর্টে এই রিট আবেদন করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দ সাইয়্যেদুল হক সুমন।
শিশু আদালতে বিচারাধীন যে কোনো মামলার শিশু আসামি বা অভিযুক্তর নাম, পরিচয়, ঠিকানা, ছবিসহ তার পরিচিতি সংবাদ মাধ্যমে তুলে ধরা বন্ধে নির্দেশনা চাওয়া হয় সেখানে।
পাশাপাশি এভাবে পরিচয় প্রকাশ বন্ধের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না- সেই প্রশ্নে রুল চাওয়া হয় ওই রিট আবেদনে।
আইন সচিব, তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব, আইন-আদালত-মানবাধিকার ও সংবিধান বিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ল’ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি, ঢাকা রিপোর্টোর্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সভাপতি, বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি এবং ডেইলি স্টারের সম্পাদককে এ মামলায় বিবাদী করা হয়।
শিশু আইনের ২৮ ধারায় ‘শিশু-আদালতের কার্যক্রমের গোপনীয়তা’ অংশে বলা হয়েছে-
১. শিশু-আদালতে বিচারাধীন কোনো মামলায় জড়িত বা সাক্ষ্য প্রদানকারী কোনো শিশুর ছবি বা এমন কোনো বর্ণনা, সংবাদ বা রিপোর্ট প্রিন্ট বা ইলেকট্রনিক মাধ্যম অথবা ইন্টারনেটে প্রকাশ বা প্রচার করা যাবে না যা সংশ্লিষ্ট শিশুকে শনাক্ত করতে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সাহায্য করে।
২. উপ-ধারা ১ এ যাই থাকুক না কেন, শিশুর ছবি, বর্ণনা, সংবাদ বা রিপোর্ট প্রকাশ করা শিশুর স্বার্থের জন্য ক্ষতিকর হবে না মর্মে আদালতের কাছে প্রতীয়মান হলে ওই আদালত সংশ্লিষ্ট শিশুর ছবি, বর্ণনা, সংবাদ বা রিপোর্ট প্রকাশের অনুমতি দিতে পারবে।
ওই রিট আবেদনের ওপর প্রাথমিক শুনানি নিয়ে রুল জারি করেছিল হাই কোর্ট। সেই রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে মঙ্গলবার আদালত রায় দিল।
আদালতে রিটকারী ব্যারিস্টার সৈয়দ সাইয়্যেদুল হক সুমনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী সাগুফতা তাবাসসুম আহমেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মোখলেছুর রহমান। ডেইলি স্টারের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী কাজী এরশাদুল আলম।
রায়ের পর আইনজীবী সুমন সাংবাদিকদের বলেন, শিশু আইনে বা কিশোর আদালতে কোনো মামলা যদি থাকে এবং এই মামলায় কোনো শিশু বা কিশোর জড়িত থাকলে তার নাম, ঠিকানা, পরিচিতি ব্যবহার করা যাবে না কোনো মিডিয়াতে।
“ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে সেজন্যে ডেইলি স্টারসহ সকল গণমাধ্যমকে সতর্ক করার পাশাপাশি আইন সচিব, তথ্য সচিব ও ল’ রিপোর্টার্স ফোরামকে তদারকি করতে বলা হয়েছে রায়ে।”