গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানা ১১ বছর ধরে সরকার প্রধান হিসেবে আছেন। (১৭ মে) তাঁর আওয়ামী লীগ সভাপতি হিসেবে ৩৯ বছর পূর্ণ হলো। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে তিনি অনেকগুলো মাইলফলক স্পর্শ করেছেন। কিন্তু রাজনীতির মাঠে বা সরকার পরিচালনায় তাঁর বিশ্বস্ত সহচর কি আছে? তিনি কি পাচ্ছেন বিশ্বস্ত সহকর্মী?
রাজনীতিতে ৩৯ বছর আওয়ামী লীগ প্রধান হিসেবে এবং ১৬ বছর সরকার প্রধান হিসেবে আমরা যদি তার রাজনৈতিক জীবন বিশ্লেষণ করি, তাহলে দেখবো যে, যখন তিনি যাকে বিশ্বাস করেছেন, তারাই বিশ্বাস ভঙ্গ করেছেন।
আর সাম্প্রতিক সময়ে তিনি যখন আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে ৩৯ বছর আর সরকার প্রধান হিসেবে টানা ১১ বছরের বেশি সময় পার করছেন, এই সময়টিকেই তাঁর রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক ক্যারিয়ারে সবচেয়ে কঠিন সময় বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
একজন সরকার প্রধানের দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য দরকার কিছু বিশ্বস্ত সহকর্মী, যারা নিবেদিতপ্রাণ, আন্তরিক, সৎ, নির্লোভ এবং তারা লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রচণ্ড পরিশ্রম করেন। কিন্তু শেখ হাসিনার চারপাশে এখন যারা রয়েছেন, তারা সবাই চাকরিজীবী, রুটিনমাফিক কাজ করা এবং উদ্যমহীন। তার চেয়েও বড় কথা হলো, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার চারপাশে বিশ্বস্ত নিবেদিতপ্রাণ এবং আত্মত্যাগে উৎসাহী নেতা-কর্মীর অভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। শেখ হাসিনা কাকে বিশ্বাস করবেন? এই সংকট মোকাবেলায় তিনি কাদেরকে নিয়ে কাজ করবেন? এসব প্রশ্ন রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে। আমরা একটু দেখি যে, শেখ হাসিনা বর্তমান কাঠামোতে কাদের নিয়ে কাজ করেন-
স্বার্থ নিয়েই ব্যস্ত মন্ত্রিপরিষদ
প্রথমত শেখ হাসিনা কাজ করেন মন্ত্রিপরিষদ নিয়ে। শেখ হাসিনার যে বর্তমান মন্ত্রিপরিষদ, সেই মন্ত্রিপরিষদের অধিকাংশই নিজেদের স্বার্থ নিয়ে ব্যস্ত। তারা সত্য কথা বলেন না। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে অকপটে কথা বলার মতো সাহস এই মন্ত্রিসভার অল্প কয়েকজনেরই আছে। সাম্প্রতিক সময় মন্ত্রীরাও সংকট মোকাবেলার ক্ষেত্রে বা সরকার পরিচালনার রূপপরিকল্পনা নিয়ে খুব একটা কিছু জানেন না। এজন্য মন্ত্রীরা এখন বিশ্বস্ততার যে গণ্ডি, তার মধ্যে নেই।
এলাকার খবর রাখেন না এমপিরা
মন্ত্রীদের পরেই আছেন এমপিরা। এমপিদের সাথে শেখ হাসিনার দূরত্ব তৈরি হয়েছে অনেক আগেই। অধিকাংশ এমপিরা এলাকায় যান না। এলাকার খবর জানেন না। তারা সেই খবর আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দিতেও পারেন না। যার ফলে এমপিদের ওপর বিশ্বাস রেখে সংকট মোকাবেলা করার মতো বোকামী শেখ হাসিনা কখনো করবেন না বলেই মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
টাকার লোভে তৃণমূল
তৃণমূলের নেতাদের মধ্যে আবার আছে টাকার লোভ। একসময় শেখ হাসিনার সবচেয়ে আস্থা ও বিশ্বাসের জায়গা ছিল তৃণমূল। কিন্তু সেই তৃণমূলে এখন পঁচন ধরেছে। তৃণমূলের নেতাদের মধ্যে টাকার লোভ প্রচণ্ডভাবে ঢুকে পড়েছে। তারা কোনো কিছুর তোয়াক্কা করছে না। অর্থলিপ্সার কারণে কোনো কিছুই তাদের কাছে গুরুত্ব পাচ্ছে না। সে কারণে তৃণমূলের ওপরও বিশ্বাস রাখতে পারছেন না শেখ হাসিনা।
আমলারা দায়সারা
শেখ হাসিনা আমলাদের পাদপ্রদীপে এনেছেন, সিদ্ধান্তগ্রহণের কেন্দ্রে এনেছেন। কিন্তু আমলারা তার প্রতিদান দিতে পারেন নি। আমলারা রুটিন কাজ, দায়সারা কাজের মধ্য দিয়েই তাদের কর্মকাণ্ডকে সীমিত রাখতে চাচ্ছেন। শেখ হাসিনা যা বলছেন, সেটা কোনো রকমে প্রতিপালন করেই তারা দায়িত্ব পালন করছেন। তাদের মধ্যে সৃষ্টিশীলতা, কর্মস্পৃহা এবং অদম্য প্রেরণার অভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
পরামর্শকরা দূরে
শেখ হাসিনার সবসময় কিছু পরামর্শক ছিল যারা কোনো পদ পদবীতে নেই, কিন্তু শেখ হাসিনাকে সংকটের সময় সুপরামর্শ দেন। কিন্তু এবার করোনা সংকটে সেই পরামর্শকরাও দূরে। সেই পরামর্শকরাও শেখ হাসিনাকে আসল খবরগুলো দিচ্ছেন না। যার ফলে এক বিশ্বাসহীন একাকীত্বের মধ্যে বসবাস করছেন শেখ হাসিনা, যেখানে তিনি যা আকাঙ্ক্ষা করছেন, জনগণের জন্য তিনি যা ভাবছেন, সে ভাবনাগুলো ঠিকমতো প্রতিপালিত হচ্ছে না। আর সেই প্রতিপালিত না হওয়ার কারণে তার যে ক্ষোভ-দুঃখ সেটিও তিনি প্রকাশ করতে পারছেন না। এই বিশ্বাসহীন বসবাসের কারণেই করোনা মোকাবেলায় শেখ হাসিনার যে পরিকল্পনা, তা পুরোপুরি বাস্তবায়িত হচ্ছে না বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন।
সূত্র: বাংলা ইনসাইডার