সম্পদ বেড়েছে ২২ মন্ত্রীর, ১৫ স্ত্রীর
গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : দশম জাতীয় সংসদ মন্ত্রিসভার ৩৩ মন্ত্রীর মধ্যে ২২ মন্ত্রীর নিজের মোট সম্পদ বেড়েছে। ১৫ মন্ত্রীর স্ত্রীর সম্পদও বেড়েছে। দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনি হলফনামা বিশ্লেষণ করে এমন চিত্রের দেখা মিলেছে।
এবারের মন্ত্রিসভায় প্রধানমন্ত্রী বাদে মোট মন্ত্রী ছিলেন ৩৩ জন। এদের মধ্যে চারজন ছিলেন টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী। এর বাইরে ২৬ জন মন্ত্রীর (তিনজনের হলফনামা পাওয়া যায়নি) দুই নির্বাচনি হলফনামা বিশ্লেষণ করা হয়।
এতে দেখা যায়, পাঁচ বছরে মন্ত্রীদের সম্পদের মধ্যে আগের তুলনায় উল্লেখজনকভাবে সম্পদ বেড়েছে পাবনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) ও ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফের। পাঁচ বছর আগে তার স্থাবর ও অস্থাবর মোট সম্পদ ছিল এক লাখ ৩০ হাজার টাকার (৬০ বিঘা জমি বাদে)। পাঁচ বছর পর তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে দুই কোটি ২৫ লাখ ৫৭ হাজার ২৬২ টাকা (৬০ বিঘা জমি বাদে)।
ভূমিমন্ত্রী ছাড়াও আরও ২১ মন্ত্রীর অস্থাবর ও স্থাবর সম্পদ বেড়েছে গত পাঁচ বছরে। এদের মধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সাড়ে ৫ গুণের বেশি (৫ দশমিক ৫৮), প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমানের সাড়ে তিন গুণের বেশি (৩ দশমিক ৬২), সংস্কৃতি বিষয়কমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরের এক গুণের বেশি (১ দশমিক ১৬), বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী ইমাজউদ্দিন প্রামাণিকের দেড় গুণের বেশি (১ দশমিক ৫৯), স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের প্রায় দুই গুণ (১ দশমিক ৯৬), তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর আড়াই গুণের কাছাকাছি (২ দশমিক ৩১), মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দের দেড় গুণের কাছাকাছি (১ দশমিক ৪৩), শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমুর দুই গুণের (১ দশমিক ৭২) কাছাকাছি, খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলামের দেড় গুণের কাছাকাছি (১ দশমিক ৪৭), স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের প্রায় দুইগুণ (১ দশমিক ৮৪), মুক্তিযোদ্ধা বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের চার গুণের বেশি (৪ দশমিক ১৭), স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনের আড়াই গুণের কাছাকাছি (২ দশমিক ৪৪), নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের সাড়ে পাঁচ গুণের কাছাকাছি (৫ দশমিক ৪২), কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর আড়াই গুণের কাছাকাছি (২ দশমিক ৪৮), শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের দুই গুণের বেশি (২ দশমিক ২৫), পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের এক গুণের বেশি (১ দশমিক ১১), রেলপথমন্ত্রী মুজিবুল হকের দেড়গুণের কাছাকাছি (১ দশমিক ৪০), ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনামন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরীর দেড় গুণের কাছাকাছি (১ দশমিক ৩৪), সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের দুই গুণের বেশি (২ দশমিক ২০), বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী একেএম শাজাহান কামালের প্রায় সাড়ে সাত গুণ (৭ দশমিক ৩৯) এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদের দুই গুণের বেশি।
২৬ মন্ত্রীর মধ্যে ১৫ জনের স্ত্রীর স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে। এদের মধ্যে মোস্তাফিজুর রহমান ফিজারের স্ত্রীর সম্পদ বেড়েছে দেড় গুণের বেশি (১ দশমিক ৬৫), আসাদুজ্জামান নূরের স্ত্রীর সম্পদ বেড়েছে প্রায় চারগুণ (৩ দশমিক ৯৩), হাসানুল হক ইনুর স্ত্রীর সম্পদ বেড়েছে পাঁচ গুণের বেশি (৫ দশমিক ২৩), নারায়ণ চন্দ্র চন্দের স্ত্রীর বেড়েছে আড়াই গুণের বেশি (২ দশমিক ৬৪), পানি সম্পদমন্ত্রী আনোয়ার হোসেনের স্ত্রীর সম্পদ বেড়েছে এক গুণের বেশি (১ দশমিক ৩৯), সমাজকল্যাণমন্ত্রী রাশেদ খান মেননের স্ত্রীর বেড়েছে ছয়গুণের বেশি (৬ দশমিক ৩২), আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের স্ত্রীর বেড়েছে প্রায় আট গুণ (৭ দশমিক ৮০), আ ক ম মোজাম্মেল হকের স্ত্রীর এক গুণের বেশি (১ দশমিক ১৩), শাজাহান খানের স্ত্রীর বেড়েছে তিন গুণের বেশি (৩ দশমিক ১৭), আ হ ম মুস্তফা কামালের স্ত্রীর বেড়েছে এক গুণের বেশি (১ দশমিক ২৬), মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরীর স্ত্রীর বেড়েছে প্রায় দুই গুণ (১ দশমিক ৯৩), ওবায়দুল কাদেরের স্ত্রীর বেড়েছে আড়াই গুণের বেশি (২ দশমিক ৭৬) এবং আনিসুল ইসলাম মাহমুদের স্ত্রীর বেড়েছে তিনগুণের বেশি (৩ দশমিক ১৯)।
এ ছাড়া পাঁচ বছর আগে শামসুর রহমান শরীফ ও মুজিবুল হকের স্ত্রীর কোনো সম্পদ ছিল না। পাঁচ বছর পর শামসুর রহমানের স্ত্রীর হয়েছে পাঁচ লাখ ৫০ হাজার টাকার সম্পদ এবং মুজিবুল হকের স্ত্রীর হয়েছে এক কোটি ৮৯ লাখ ৭১ হাজার ৩৩ টাকার সম্পদ। আর পাঁচ বছরে মোহাম্মদ নাসিম, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ ও নুরুল ইসলাম নাহিদের স্ত্রীর সম্পদ কমেছে।
সম্পদ কমেছে চার মন্ত্রীর
গত পাঁচ বছরে চার মন্ত্রীর নিজের সম্পদ কমেছে। দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনি হলফনামা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ভোলা-১ আসনের এমপি ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের নিজের গত পাঁচ বছরে সম্পদ (অস্থাবর+স্থাবর) কমেছে মোট এক কোটি তিন লাখ ৭০৬ টাকার। পাঁচ বছর আগে তার সম্পদ ছিল পাঁচ কোটি ৫০ লাখ ২২ হাজার ১০৫ টাকার, যা কমে হয়েছে চার কোটি ৪৭ লাখ ২১ হাজার ৩৯৯ টাকার।
বন ও পরিবেশমন্ত্রী আনোয়ার হোসেনের নিজের বার্ষিক আয় কমার পাশাপাশি নিজ নামে স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের পরিমাণও কমেছে। পাঁচ বছরে তার মোট সম্পদ কমেছে এক কোটি ৫৫ লাখ ৭১ হাজার ১২২ টাকা। পাঁচ বছর আগে তার আট কোটি পাঁচ লাখ ৩৪ হাজার ৭৭২ টাকার সম্পদ ছিল। পাঁচ বছর পর তা এসে দাঁড়িয়েছে ছয় কোটি ৪৯ লাখ ৬৩ হাজার ৬৫০ টাকায় (দশমে উল্লেখিত ২.৫২ ও ২.১৬ একর এবং একাদশে উল্লেখিত ১.৫২ একর ও ২.৫৫৫ একর জমি বাদে)।
ঢাকা-৮ আসন থেকে নির্বাচিত হয়ে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছিলেন রাশেদ খান মেনন। পাঁঁচ বছরে মেননের নিজ নামে অস্থাবর ও স্থাবর মোট ১১ লাখ ৫৭ হাজার ৬৬৩ টাকার সম্পদ কমেছে। পাঁচ বছর আগে মেননের নিজ নামে মোট সম্পদ ছিল এক কোটি ২৬ লাখ ৬ হাজার টাকার, যা কমে দাঁড়িয়েছে এক কোটি ১৪ লাখ ৪৮ হাজার ৩৩৭ টাকায়।
পাঁচ বছরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ আসনের এমপি ও আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়কমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হকের স্থাবর ও অস্থাবর মোট সম্পদ কমেছে এক কোটি ৫৩ লাখ ৮৬ হাজার ২৪৩ টাকার। পাঁচ বছর আগে তার আট কোটি ৫৬ লাখ ৪০ হাজার টাকার সম্পদ ছিল (চারটি মটরগাড়ি বাদে)। পাঁচ বছর পর তা কমে হয়েছে সাত কোটি দুই লাখ ৫৩ হাজার ৭৫৭ টাকার সম্পদ (২০ ভরি স্বর্ণ, ইলেকট্রনিক, আসবাবপত্র বাদে)।
আয় কমেছে পাঁচ মন্ত্রীর
দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনি হলফনামা অনুযায়ী, পাঁচ বছরে ৫ জন মন্ত্রীর বার্ষিক আয় কমেছে। ২৬ মন্ত্রীর মধ্যে আবুল হাসান মাহমুদ আলী, আসাদুজ্জামান নূর, নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, আনোয়ার হোসেন ও নুরুল ইসলাম নাহিদের বার্ষিক আয় কমেছে।
এদের মধ্যে দিনাজপুর-৪ আসনের আবুল হাসান মাহমুদ আলীর কমেছে এক লাখ ৯২ হাজার ৩২৩ টাকা। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনি হলফনামায় তিনি জানিয়েছিলেন, তার আয়ের মাধ্যম হচ্ছে বাড়ি/অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া, চাকরি ভাতা ও ব্যাংক সুদ। এসব খাত থেকে তিনি পাঁচ বছর আগে আয় করতেন মোট ২৫ লাখ ১৯ হাজার ৯০৩ টাকা। কিন্তু পাঁচ বছর পর তা হয়েছে ২৩ লাখ ২৭ হাজার ৫৮০ টাকা। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনি হলফনামায় আয়ের উৎসগুলো সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করেননি।
নীলফামারী-২ আসনের এমপি আসাদুজ্জামান নূরের পাঁচ বছরে বার্ষিক আয় কমেছে এক কোটি ২৯ লাখ ৬০ হাজার ১৩৭ টাকা। পাঁচ বছর আগে তার আয় ছিল এক কোটি ৬৪ লাখ ৮৯ হাজার ২২২ টাকা, এখন তা কমে গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৩৫ লাখ ২৯ হাজার ৮৫ টাকা। দুই হলফনামার হিসাব অনুযায়ী, পাঁচ বছর আগে মন্ত্রীর ব্যবসা ছিল। ব্যবসা থেকে আয় হতো ৭৪ লাখ ২৬ হাজার ৩১৪ টাকা। পাঁচ বছর পর তিনি জানিয়েছেন, তিনি আর ব্যবসা করেন না। এ ছাড়া তার চাকরি থেকে আয় কমেছে এবং অন্যান্য খাত থেকে আয় শূন্যে নেমে এসেছে।
খুলনা-৫ আসনের নারায়ণ চন্দ্র চন্দের পাঁচ বছরে আয় কমেছে ৫২ হাজার ৩২৯ টাকা। তার দেওয়া দুই হলফনামার তথ্য অনুযায়ী, পাঁচ বছর আগে তার বার্ষিক আয় ছিল ২১ লাখ ৭৭ হাজার ৪১০ টাকা, যা কমে হয়েছে ২১ লাখ ২৫ হাজার ৮১ টাকা। তিনি জানিয়েছেন, কৃষিখাত ও ব্যবসা থেকে তার আয় বৃদ্ধি পেলেও আয় কমেছে অন্যান্যখাতে।
পিরোজপুর-২ আসনের জাতীয় পার্টির এমপি আনোয়ার হোসেনের আয় কমেছে দুই লাখ ৩৭ হাজার ৭২৯ টাকা। পাঁচ বছর আগে তার বার্ষিক আয় ছিল ৪৫ লাখ ৬৭ হাজার ৫২৪ টাকা, যা কমে হয়েছে ৪৩ লাখ ২৯ হাজার ৭৯৫ টাকা। একাদশে তার দেওয়া হলফনামা অনুযায়ী, তার আয়ের একমাত্র মাধ্যম শেয়ার বাজার। পাঁচ বছর আগে তার আয়ের মাধ্যম ছিল ব্যবসা, শেয়ার বাজার ও অন্যান্য খাত।
পাঁচ বছরে এক লাখ ৪২ হাজার ৯৫ টাকা আয় কমেছে সিলেট-৬ আসনের এমপি নুরুল ইসলাম নাহিদের। পাঁচ বছর আগে তার আয় ছিল ১৭ লাখ ৭২ হাজার ৩০০ টাকা, যা কমে হয়েছে ১৬ লাখ ৩০ হাজার ২০৫ টাকা। পাঁচ বছর পর আয়ের নতুন উৎস হিসেবে যোগ হয়েছে শেয়ার বাজার। এই মন্ত্রী পাঁচ বছর আগে কৃষিখাত থেকে যা আয় করতেন, পাঁচ বছর পরেও একই আয় করেন।
পাঁচ বছরে স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি শূন্য রয়েছে- আবুল হাসান মাহমুদ আলীর স্ত্রীর, ইমাজ উদ্দিন প্রামানিকের স্ত্রীর, আমির হোসেন আমুর স্ত্রীর, কামরুল ইসলামের স্ত্রীর, ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনের স্ত্রীর, মতিয়া চৌধুরীর স্বামীর, একেএম শাজাহান কামালের স্ত্রীর, অ্যাডভোকেট আনিসুল হকের স্ত্রীর।
উপরে উল্লেখিত হিসাবের মধ্যে হলফনামায় আর্থিক হিসাবগুলো ধরা হয়েছে। এর বাইরে যেসব মন্ত্রী বাড়ি, জমি বা অন্যান্য সম্পদের মূল্য লেখেননি, তা এই হিসাবের সঙ্গে যুক্ত করা হয়নি।