বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে ট্রাম্পের হুমকি
গাজীপুর কণ্ঠ, আন্তর্জাতিক ডেস্ক : এ বার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে হুমকি দিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। ফান্ড বন্ধ করে দেওয়ার ভয় দেখালেন।
আমেরিকায় করোনা পরিস্থিতি যত ভয়াবহ চেহারা নিচ্ছে, ততই ধৈর্য হারিয়ে আলটপকা মন্তব্য করে বসছেন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। সোমবার তিনি ভারতকে হুমকি দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, একটি নির্দিষ্ট ওষুধ ভারত মার্কিন মুলুকে না পাঠালে তার জবাব দেওয়া হবে। মঙ্গলবার প্রেসিডেন্ট নিশানা করলেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে। তাঁর হুমকি, স্বাস্থ্য বিষয়ক এই সংস্থাটির ফান্ড বন্ধ করে দেওয়া হতে পারে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে বিপুল পরিমাণ অর্থসাহায্য করে আমেরিকা। ট্রাম্পের জবাবে এখনও কোনও বিবৃতি প্রকাশ করেনি সংস্থাটি।
করোনার প্রাদুর্ভাবের সময় থেকেই এই ভাইরাস এবং তার সংক্রমণ নিয়ে একের পর এক অযাচিত মন্তব্য করে গিয়েছেন ডনাল্ড ট্রাম্প। একাধিকবার কোভিড-১৯ কে ‘চীনা ভাইরাস’ বলে উল্লেখ করেছেন তিনি। যার বিরোধিতা করতে বাধ্য হয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। রীতিমতো বিবৃতি প্রকাশ করে তারা জানিয়েছিল, ট্রাম্পের এই মন্তব্য বিভেদ সৃষ্টি করবে। সপ্তাহ কয়েক আগেও ট্রাম্প বলেছেন, করোনা ভাইরাসকে অতিরিক্ত গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। আর এই সব কিছুর মধ্যেই আমেরিকায় করোনা সংক্রমণ ভয়াবহ চেহারা নিয়েছে। মঙ্গলবার শুধুমাত্র নিউ ইয়র্কেই মৃত্যু হয়েছে ৭৩১ জনের। গোটা দেশে এখনও পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা প্রায় ১৩ হাজার। আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়ে গিয়েছে চার লাখ। বার বার অভিযোগ উঠছে, বহু আগে থেকে জানা সত্ত্বেও ট্রাম্প প্রশাসন করোনার সঙ্গে লড়াইয়ের জন্য যথেষ্ট পরিকাঠামো তৈরি করতে পারেনি। স্বাস্থ্যকর্মীরা প্রয়োজনীয় সুরক্ষা কিট পাচ্ছেন না। এর মধ্যেই নিউ ইয়র্কের প্রায় ১৮ শতাংশ স্বাস্থ্যকর্মী ও চিকিৎসক করোনার শিকার। ফলে দেশ জুড়েই ট্রাম্পের বিরুদ্ধে বিবিধ অভিযোগ উঠছে। এই পরিস্থিতিতে ট্রাম্পও একের পর এক মন্তব্য করে যাচ্ছেন।
মঙ্গলবার ট্রাম্প বলেছেন, ”বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে বিপুল পরিমাণ ফান্ড দেয় আমেরিকা। কিন্তু তারা একের পর এক ভুল করেছে। ফান্ড বন্ধ করার বিষয়ে আমরা ভাবনা চিন্তা করবো।” তাঁর অভিযোগ, সংস্থাটি চীনের প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট। তাঁর আরও অভিযোগ, করোনা মহামারি রুখতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে সংস্থাটি। আমেরিকা যখন সীমান্ত বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, তখনও সংস্থাটি তার বিরোধিতা করেছিল বলে ট্রাম্পের দাবি। সে কারণেই তাদের ফান্ড বন্ধ করে দেওয়ার কথা ভাবছেন তিনি। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য অবশ্য ট্রাম্পের বক্তব্যের সঙ্গে মিলছে না। তাঁদের যুক্তি, করোনার প্রকোপ শুরু হওয়ার পরে গোটা বিশ্বকে লাগাতার সচেতন করে গিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। চীন যখন এই ভাইরাসে আক্রান্ত, তখনই সংস্থাটি জানিয়েছিল, একবার চীনের বাইরে চলে গেলে এই মহামারি আর নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। বলা হয়েছিল, ভাইরাস অপেক্ষাকৃত গরিব দেশগুলিতে ছড়িয়ে পড়লে, অঘটন ঘটে যাবে। যদিও ট্রাম্প সে কথায় গুরুত্ব দেননি। রীতিমতো টুইট করে বলেছিলেন, সাধারণ ফ্লুতে এর চেয়ে অনেক বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। ফলে করোনাকে অতিরিক্ত গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজন নেই। গুরুত্ব না দিলে যে কী অবস্থা হয়, তার টের পাচ্ছে অ্যামেরিকা।
এ দিকে এখনও ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটেই চিকিৎসাধীন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। যদিও হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়েছে তাঁর অবস্থা স্থিতিশীল। মঙ্গলবার যুক্তরাজ্যে ২৪ ঘণ্টায় সব চেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। মোট মৃতের সংখ্যা এক লাফে ছয় হাজার পার করে গিয়েছে। ইটালিতে সংক্রমণ খানিক কমলেও মৃতের সংখ্যা এখনও কমেনি। ১৭ হাজারেরও বেশি মানুষ এখনও পর্যন্ত মারা গিয়েছেন সেখানে। স্পেনে মৃত ১৪ হাজার ৪৫। ফ্রান্সেও মোট মৃতের সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে। জার্মানিতে মৃতের সংখ্যা দুই হাজারের সামান্য বেশি। মধ্য প্রাচ্যে এখনও পর্যন্ত সব চেয়ে বেশি মৃত্যু ঘটেছে ইরানে। মারা গিয়েছেন প্রায় চার হাজার জন। আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়ে গিয়েছে ৬০ হাজার।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী, এখনও পর্যন্ত এই মহামারিতে আক্রান্ত হয়েছেন ১৪ লাখ ৩০ হাজার মানুষ। মৃত্যু হয়েছে ৮২ হাজার লোকের। বেঁচে ফিরেছেন তিন লাখ দুই হাজার ১৫০ জন। তবে যেখান থেকে এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঘটেছিল, চীনের সেই উহান প্রদেশে মঙ্গলবার থেকে লকডাউন উঠে গিয়েছে। জানুয়ারি মাস থেকে লকডাউনের কবলে ছিল উহান।