আলোচিত

মহামারী শুরু: কি করবে বাংলাদেশ?

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : বাংলাদেশে কয়েকদিন ধরে জ্যামিতিক হারে করোনা রোগীর সংখ্যা বাড়ছে এবং মৃতের সংখ্যাও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। এই অবস্থায় বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মহামারীর অন্ধকার গহ্বরে বাংলাদেশের প্রবেশ এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। কিছু বিশেষজ্ঞ আবার বলছেন, বাংলাদেশে ইতিমধ্যে করোনার মহামারী শুরু হয়ে গেছে। বিপুল সংখ্যক রোগী পরীক্ষা করা গেলে এখন বোঝা যাবে বাংলাদেশে এখন মহামারীর অবস্থা বিরাজ করছে। এই অবস্থায় আমাদের করণীয় কী?

আমরা প্রথম সুযোগটি কাজে লাগাতে পারিনি। মহামারী মোকাবেলার জন্য যে সুযোগ বাংলাদেশ পেয়েছিল, সেই সুযোগ কাজে লাগাতে আমরা ব্যর্থ হয়েছি। এখন মহামারীর অন্ধকার টানেল থেকে বেরিয়ে আমাদের আসতেই হবে, এবং সেই বেরিয়ে আসার জন্য আমাদের কিছু ন্যুনতম ছাড় দেওয়া অবকাশ নেই। এই সুযোগ হাতছাড়া করার অবকাশও আমাদের নেই।

এখন প্রশ্ন হলো মহামারী প্রতিরোধের জন্য আমাদের কি করতে হবে? চিকিৎসক এবং বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলাপ করে বাংলা ইনসাইডার ৫টি সুপারিশ তৈরি করেছে-

প্রথমত, চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে। আমরা যতই বলি না কেন আমাদের হাসপাতাল প্রস্তুত, আমাদের পর্যাপ্ত পরিমাণ ভেন্টিলেশন আছে, কিংবা আমাদের আইসিইউয়ের অভাব নেই- কিন্তু আমাদের বাস্তবতা একেবারেই ভিন্ন। চিকিৎসার দিকে দিয়ে আমাদের প্রস্তুতি আদতে অনেক কম। আর তাই মহামারী প্রতিরোধে আমাদের প্রথম যেটা করতে হবে সেটা হলো সবার জন্য চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য আমাদের যা করতে হবে তা হলো-

ক. আমাদের বিশেষায়িত হাসপাতালগুলোকে এক মুহূর্ত বিলম্ব না করে করোনা চিকিৎসার জন্য সুসজ্জিত করতে হবে এবং উপযুক্ত যন্ত্রপাতি সরঞ্জামাদির ব্যবস্থা করতে হবে।

খ. আমাদের স্বাস্থ্যকর্মী, চিকিৎসক, নার্সসহ যারা করোনার চিকিৎসার দেবেন তাদের প্রস্তুত রাখতে হবে। তাদেরকে মানসিকভাবে এবং পর্যাপ্ত উপকরণ দিয়ে প্রস্তুত করতে হবে।

গ. বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে কীভাবে করোনা চিকিৎসায় সম্পৃক্ত করা যায়, সে নিয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে।

ঘ. করোনা রোগের পরীক্ষার ব্যাপ্তি অনেক বাড়াতে হবে। যে সমস্ত এলাকাগুলোতে করোনা ছড়িয়ে পড়েছে, সেসব এলাকায় সন্দেহভাজন প্রত্যেককে করোনা পরীক্ষা করাতে হবে।

মোট কথা, চিকিৎসা যদি আমরা নিশ্চিত করতে না পারি তাহলে বাংলাদেশে মৃত্যুর মিছিল হবে ভয়াবহ। কারণ বাংলাদেশ একটি ঘনবসতিপূর্ণ দেশ।

দ্বিতীয়ত, সুপারিশ হলো আমাদের সবাইকে ঘরে থাকতেই হবে। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ড. এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেছেন যে, এখন ঘরে থাকতেই হবে এবং ঘরে থাকার কোনো বিকল্পই নেই। তিনি বলেছেন, ধর্মীয় উপাসনাগুলো ঘরে করাই শ্রেয়।আসন্ন শবে বরাতের ইবাদাত ঘরে করতে হবে এবং পয়লা বৈশাখের কোনো উদযাপন করা যাবে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাধারণ ছুটির শিথিলতার সুযোগ নিয়ে জনগণ অযথাই যে ঘর থেকে বের হচ্ছেন, সেখানে আরও কঠোরতা আরোপ করতে হবে। প্রয়োজনে কিছুদিনের জন্য লকডাউন এবং কারফিউয়ের মতো কঠিন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে সরকারকে।

তৃতীয়ত, গুজব বন্ধ করতে হবে। করোনা আক্রান্তের সংখ্যা যখন বাড়ছে, তখন স্বার্থান্বেষী মহল গুজব ছড়িয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত, আতঙ্কিত, অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা করবে। এর ফলে করোনার মহামারী মোকাবেলায় যে মূল লক্ষ্য এবং করণীয় তা ব্যাহত হতে পারে। সে কারণে গুজব বন্ধ করতেই হবে। এ ব্যাপারে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।

চতুর্থত, দরিদ্রদের খাদ্যসংস্থান করতে হবে। লকডাউন বা ঘরে থাকা নিশ্চিত করতে গেলে গরিব মানুষ যেন খাবার জন্য বের না হয়, তাদের জীবন বাঁচানোর জন্য ঘরে যেন খাদ্য পৌঁছানো যায়, তা নিশ্চিত করতে হবে। এ ব্যাপারে তালিকা করে স্থানীয় পর্যায়ে জনপ্রতিনিধি এবং প্রশাসনকে কাজে লাগাতে হবে।

পঞ্চমত, সফল দেশের অভিজ্ঞতাগুলোকে কাজে লাগাতে হবে। করোনা মোকাবেলা করে যে দেশগুলো সফল হয়েছে যেমন চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ানের অভিজ্ঞতাগুলোকে পর্যবেক্ষণ করতে হবে, বিশ্লেষণ করতে হবে এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে এই অভিজ্ঞতাগুলো কাজে লাগিয়ে আমাদের বাংলাদেশে করোনা মোকাবেলার ক্ষেত্রে একটি রূপপরিকল্পনা তৈরি করতে হবে। এটি করতে পারলে আমরা হয়ত দ্রুতই মহামারীর অন্ধকার গহ্বর থেকে বেরিয়ে সাধারণ জীবনে ফিরতে পারবো।

একটা কথা মনে রাখতে হবে, আমাদের সমস্যা হলো আমরা অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ একটি জনপদের বাসিন্দা। আমাদের জন্য যে ইতিবাচক দিক, তা হলো আমাদের জনসংখ্যার একটি বড় অংশ হলো তরুণ, তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো। কাজেই মহামারী থেকে বেরিয়ে আসার জন্য আমাদের যে ইতিবাচক দিকগুলো রয়েছে, সেগুলোকে পরিচর্যা করে করোনা মহামারী মোকাবেলার জন্য এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে।

 

 

সূত্র: বাংলা ইনসাইডার

এরকম আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button