গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : সারা দেশে কোচিংয়ের সঙ্গে জড়িত শিক্ষকদের তালিকা করছে সরকার। এসব শিক্ষক কোচিং বাণিজ্য না ছাড়লে তাদের চাকরি থেকে বরখাস্ত করারও পরিকল্পনা করছে মন্ত্রণালয়। প্রশ্নফাঁস রোধ এবং প্রতিষ্ঠানিক শিক্ষার মানোন্নয়নে এমন কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার। ইতোমধ্যে কোচিংবাজ শিক্ষকদের তালিকা করতে ও খোঁজ খবর নিতে একটি গোয়েন্দা সংস্থাকে নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, প্রতিষ্ঠান প্রধানদের কাছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি পাঠিয়ে কোচিং বাণিজ্যে জড়িত শিক্ষকদের প্রথমে সতর্ক করা হবে। তারপরও কোনো শিক্ষক কোচিং বাণিজ্যে জড়িত থাকলে তাদের সংশ্লিষ্ট স্কুল, কলেজ ও মাদরাসা থেকে চাকরিচ্যুত করা হবে। শিগগির এ বিষয়ে দিক-নির্দেশনা দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, সরকার বেতন বাড়িয়েছে, সুযোগ-সুবিধা বাড়িয়েছে, তারপরও কেউ কোচিং বাণিজ্যে জড়িত হলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রয়োজনে তাদের চাকরিচ্যুত করা হবে। শূন্য পদে নতুন নিয়োগ দেওয়া হবে।
গোয়েন্দা সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, সারাদেশে আড়াই লাখ কোচিং সেন্টারে প্রায় দুই লাখ শিক্ষক কোচিং বাণিজ্যে জড়িত। এর মধ্যে রাজধানী ঢাকাতেই রয়েছে প্রায় ২০ হাজার কোচিং সেন্টার, এতে জড়িত ৫০ হাজার শিক্ষক।
এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, তথ্য সংগ্রহ করতে ঊর্ধ্বতন মহল থেকে সাত দিনের সময় দেওয়া হয়েছিল। ওই সময়ের মধ্যে একটি থানা এলাকায় যতগুলো কোচিং সেন্টার রয়েছে- সবগুলোর তথ্য সংগ্রহ করতে বলা হয়েছে। কোচিং সেন্টারের মালিক কে, কোন কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা পড়াতে আসেন, তাদের পরিচয় কী- জেনেছি আমরা। এর মধ্যে বিশেষভাবে খোঁজ নিতে বলা হয়েছে, কোনো শিক্ষক ক্লাস ফাঁকি দিয়ে কোচিং সেন্টারে সময় দিচ্ছেন কি না। কেবল এমপিওভুক্ত নয়, কোচিং বাণিজ্যে জড়িত সব শিক্ষক এবং সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করেছি আমরা।
ওই কর্মকর্তা আরও জানান, শিক্ষকদের নামের তালিকার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদেরও বক্তব্য নেওয়া হয়েছে। কারণ তারাই বেশি ভালো তথ্য দিতে পারে। শিক্ষার্থীদের বক্তব্য থেকে প্রশ্নফাঁস এবং শিক্ষাখাতের আরও অনেক বাণিজ্যের বিষয়ে তথ্য এসেছে আমাদের হাতে। সেসব বিষয়ে ইতোমধ্যে তদন্ত শুরু করেছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম বৈঠকেই শিক্ষামন্ত্রী কোচিং বাণিজ্যে জড়িত শিক্ষকদের তালিকা করার নির্দেশনা দিয়েছেন। বৈঠকেই তালিকা কে তৈরি করবে, পুলিশ, শিক্ষা মন্ত্রণালয় না কি শিক্ষা বোর্ড তা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়। পরে একটি গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে তালিকা করানোর সিদ্ধান্ত হয়।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা হাতে এলে শিক্ষকদের সতর্ক করে প্রথমে চিঠি ইস্যু করা হবে। যাতে তারা কোচিং বাণিজ্য থেকে বিরত থাকেন। বিষয়টি মনিটরিং করা হবে। গোয়েন্দা সংস্থাই মনিটরিং করবে। নির্দেশনা না মানলে তাদের চাকরিচ্যুত করা হবে।