গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : সারাবিশ্বে করোনা মহামারি রূপ নিয়েছে। বাংলাদেশে তার উপর বাড়ছে ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ। এ বছরের প্রথম তিন মাসে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় হাসপাতালে ভর্তি ডেঙ্গু রোগী বেড়েছে চার থেকে ছয় গুণ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসেবে চলতি বছর এখন পর্যন্ত হাসপাতালে ২৬৩জন নতুন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। যেখানে গত বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ছিলো ৭৩জন। সেই হিসেবে গত বছরের চেয়ে প্রায় ২৬০ ভাগ বা প্রায় চার গুণ বেড়েছে রোগীর সংখ্যা।
ডেঙ্গু এবং এডিস মশা নিয়ে নিয়মিত গবেষণা করছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও কীটতত্ত্ববিদ কবিরুল বাশার। ডেঙ্গু রোগীর পরিসংখ্যান নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যের সাথে তার তথ্যের কিছু ভিন্নতা আছে। তিনি জানান, গত বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন ৪৮ জন। আর এবার মার্চের ১৭ তারিখ পর্যন্ত ভর্তি হয়েছেন ২৬৩ জন। এই হিসেব বিবেচনায় নিলে গত বছরের তুলনায় এখন ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ছয় গুণ বেশি।
তিনি জানান, ‘‘গত বছরে প্রথম তিন মাসে ঢাকায় এডিস মশার ঘনত্ব ছিল গড়ে পাঁচ৷ আর একই সময়ে এই বছরে হলো ১০। ২০ এর বেশি ঘনত্ব হলো সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। এরকম ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাও আমরা পেয়েছি।” এডিস মশার ঘনত্বকে বলা হয় ‘ব্রুটো ইনডেক্স’।
কবিরুল বাশার বলেন, ‘‘এখনো বর্ষা মৌসুম শুরু হয়নি৷ আমরা আশঙ্কা করছি এখনই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নিলে এবার বর্ষার মৌসুমে জুন-জুলাই মাসে গতবারের চেয়ে ডেঙ্গু রোগী অনেক বেশি হবে৷ পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে।’’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা এখন দেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে কাজ করছে। তবে তারা এখনই সার্বিক চিত্র দিতে অপারগতা প্রকাশ করেছে। এই দপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. শাহনীলা ফেরদৌসি বলেন, ‘‘এই সময়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা বেশি বলেই আমরা বলতে পারি না যে এবার ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেশি হবে। কারণ গত বছর কোনো কারণে আন্ডার রিপোর্টিংও হতে পারে। আমরা একটা সার্ভে করেছি৷ কিন্তু সেগুলো এখনো প্রতিবেদন আকারে প্রস্তুত হয়নি। সেগুলো প্রস্তুত হলে সার্বিক চিত্র পাওয়া যাবে৷ তার আগে নয়।’’
তবে এডিস মশার ঘনত্ব বেশি হওয়ার কথা তিনি অস্বীকার করেন৷ বরং তিনি দাবি করেছেন, বাসা বাড়িতে এডিস মশার ঘনত্ব কমেছে। তবে বেড়েছে বিভিন্ন নির্মাণ কাজ এলাকায়। তিনি বলেন, ‘‘আমরা বিষয়টি এরইমধ্যে সিটি কর্পোরেশনকে জানিয়েছি তারা যাতে রিহ্যাবের সাথে কথা বলে। গণপূর্ত মন্ত্রণালয়কেও জানিয়েছি।’’
কবিরুল বাসার বলেন, ‘‘মার্চ, এপ্রিল এবং মে এই তিন মাস এডিস মশার প্রজনন স্থল ধ্বংস করার ওপর জোর দেয়া দরকার। এরপর থেকে বিভিন্ন রাসায়নিকের মাধ্যমে এডিস মশা ধ্বংস করতে হবে। এজন্য সিটি কর্পোরেশনসহ সরকারের বিভিন্ন সংস্থাকে সক্রিয় হতে হবে।’’
রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা মুজিববর্ষ উপলক্ষে এপ্রিল মাসকে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের মাস ঘোষণা করেছে। শাহনীলা ফেরদৌসি বলেন, ‘‘আমরা ব্যাপক সচেতনতামূলক কর্মসূচি শুরু করব। চিকিৎসা প্রস্তুতি আছে। আছে প্রয়োজনীয় কীট৷ তবে সাধারণ মানুষকে সচেতন হতে হবে।’’
কিন্তু ঢাকায় মশা নিয়ন্ত্রণের মূল দায়িত্বটি সিটি কর্পোরেশনের। অথচ তাদের তেমন কোনো উদ্যোগই নেই। দুই নতুন মেয়র এখনো বসে আছেন দায়িত্ব পাওয়ার অপেক্ষায়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসেবে গত বছর হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন এক লাখ এক হাজার ৩৫৪ জন। মারা গেছেন ২৬৬ জন। গত বছর ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যায়। এবার এখনই ব্যবস্থা না নিলে গত বছরের চেয়েও পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে।