আন্তর্জাতিক

যুক্তরাষ্ট্রের করোনাভাইরাসের প্রথম ভ্যাকসিন প্রয়োগ

গাজীপুর কণ্ঠ, আন্তর্জাতিক ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটলের জেনিফার হলারের ওপর করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন পরীক্ষামূলকভাবে প্রয়োগ করা হয়েছে। তিনি সেখানকার একটি স্টার্টআপের অপারেশনস ম্যানেজার হিসেবে কাজ করেন। যুক্তরাষ্ট্রে স্থানীয় সময় ১৬ মার্চ থেকে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিনের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ (ট্রায়াল) শুরু হয়েছে।

হলারই বিশ্বের প্রথম ব্যক্তি, যাঁর ওপর পরীক্ষামূলকভাবে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হলো।

সিয়াটলের প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করা একটি কমিউনিটির সদস্যরা সবার আগে করোনাভাইরাস ভ্যাকসিন পরীক্ষামূলকভাবে গ্রহণের জন্য নির্বাচিত হয়। সেই ভ্যাকসিন গ্রহণকারীদের মধ্যে প্রথম স্বেচ্ছাসেবক হলেন জেনিফার হলার।

মাইক্রোসফটের প্রয়াত সহ-প্রতিষ্ঠাতা পল অ্যালেনের স্ট্রোটোলঞ্চ স্পেস ভেঞ্চারে কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর। বর্তমানে মেশিন লার্নিং নিয়ে কাজ করা সিয়াটলভিত্তিক স্টার্টআপ কোম্পানি অটানলিতে বাড়িতে বসে কাজ করছিলেন তিনি।

সিয়াটলের কায়সার পার্মানেন্তে ওয়াশিংটন রিসার্চ ইনস্টিটিউট থেকে প্রথম ইনজেকশনের মাধ্যমে টিকা নেন হলার। এরপর নিজের বাসাতেই আছেন। সেখান থেকে প্রযুক্তি বিষয়ক ওয়েবসাইট গিকওয়্যারকে বলেছেন, ‘টিকা নেওয়ার পর আমি খুব ভালো আছি। আমার বাহুতে মোটেও কোনো যন্ত্রণা হয়নি। এটি অন্যান্য ফ্লুর ভ্যাকসিনের চেয়ে ভালো।’

করোনাভাইরাসের টিকায় পরীক্ষামূলক প্রয়োগে হলারের অংশগ্রহণকরে সমর্থন করেছেন অটানলির প্রধান নির্বাহী স্কট ফেরিস। তিনি বলেছেন, ‘আমি তাঁর এই ভ্যাকসিন নেওয়ায় গর্বিত। অপারেশন ম্যানেজার হিসেবে হালারের কাজ হলো দলের মনোবল বজায় রাখা। করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কারণে সবাই ঘরে বসে কাজ করায় সবার মনোবল ধরে রাখা আরও চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে। আমরা এখন ভার্চুয়াল হ্যাপি আওয়ার পালন করব।’

হলার বলেন, এই মহামারি থেকে রক্ষা পেতে ভূমিকা রাখতে পারে বলে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছেন তিনি। ৪৩ বছর বয়সে এসেও তাঁর স্বাস্থ্য ভালো। তিনি ভালো বেতন পান এবং বাড়িতে বসে কাজ করতে পারে। তাঁর দুই সন্তান নিজের দেখাশোনা নিজেরাই করতে পারে। করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন পরীক্ষামূলকভাবে নেওয়ার পর আপাতত তাঁকে বেশি কিছু করতে হচ্ছে না। এখন কোনো উপসর্গ দেখা যায় কি না, তা নিয়মিত পরীক্ষা করা দেখায় তাঁর কাজ। দ্বিতীয়বার ভ্যাকসিন নেওয়ার জন্য অপেক্ষায় আছেন তিনি। এ ছাড়া তাঁর রক্ত পরীক্ষাও করা হবে।

হলারের ভাষ্য, করোনভাইরাস সংকট সাশ্রয়ী স্বাস্থ্যসেবা, আবাসন ও চাকরির সুরক্ষাসহ একটি বৃহত্তর সামাজিক সুরক্ষা জালের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি তুলে ধরে।

করোনা ভ্যাকসিন নেওয়ার তালিকায় থাকা দ্বিতীয় স্বেচ্ছাসেবী মাইক্রোসফটের নেটওয়ার্ক প্রকৌশলী নিল ব্রাউনিংয়ের মতে, নাগরিক মূল্যবোধের জায়গা থেকেই তিনি এ পরীক্ষা করছেন। তাঁর সন্তানরা এর জন্য গর্বিত। তিনি বলেন, ‘প্রত্যেক মা-বাবা চান তাঁর সন্তানরা তাঁদের দেখাশোনা করুক।’

মর্ডানাস ‘এমআরএনএ-১২৭৩’ নামের ভ্যাকসিনটিতে সার্স-সিওভি-২ করোনভাইরাস থেকে মেসেঞ্জার আরএনএর নিষ্ক্রিয় খণ্ড ব্যবহার করা হয়। এ পরীক্ষার প্রথম দফার লক্ষ্য হচ্ছে—মানুষের শরীরের জন্য নিরাপদ কি না, তা পরীক্ষা করা। গবেষকেরা দাবি করেন, এতে ভাইরাসের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয় সংক্রমণের ঝুঁকি নেই। আগামী এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে কায়সার পারমানেন্তের গবেষক লিসা জ্যাকসনের নেতৃত্বে একদল গবেষক এ ভ্যাকসিন করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে কতোখানি কার্যকর তা পরীক্ষা করে দেখবে।

দ্রুত কর্মপরিকল্পনার জন্য দ্য ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথের (এনআইএইচ) পক্ষ থেকে এ পরীক্ষার অর্থায়ন করা হচ্ছে। এনআইএইচ ও মডার্না ইনকরপোরেশনের যৌথ সহযোগিতায় এই ভ্যাকসিন তৈরি করা হয়েছে।

গিক ওয়্যারের প্রতিবেদনে বলা হয়, ভ্যাকসিনের সন্ধান এতটা জরুরি হয়ে পড়েছে যে, ফেডারেল নিয়ন্ত্রকেরা এনআইএইচ এবং মডার্নাকে সরাসরি ল্যাব থেকে মানুষের ওপর পরীক্ষায় অনুমতি দিচ্ছে। এতে অন্য কোনা প্রাণীর ওপর প্রয়োগ করে দেখা হচ্ছে না।

কায়সার পারমানেন্তের পক্ষ থেকে সিয়াটলে প্রথম ৪৫ জন ১৫ থেকে ৫৫ বছর বয়সী স্বাস্থ্যবান স্বেচ্ছাসেবককে পরীক্ষার জন্য নির্ধারণ করা হয়। পরীক্ষায় যাঁরা অংশ নিচ্ছেন সবাই ১০০ মার্কিন ডলার করে পাবেন। চিকিৎসকেরা তাদের দুবার ইনজেকশন দেবেন এবং পরে কয়েকবার পরীক্ষা করে দেখবেন।

হলার ও ব্রাউনিং ছাড়াও আরও দুজন স্বেচ্ছাসেবক গতকাল সোমবার প্রথমবারের মতো ইনজেকশন নিয়েছেন। যাঁরা পরীক্ষায় অংশ নিতে ইচ্ছুক এখনো তাদের জন্য দরজা খোলা রেখেছে কায়সার পারমানেন্তে।

লাইভ সায়েন্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভ্যাকসিনটি নিরাপদ ও বিশ্বব্যাপী ব্যবহার উপযোগী হতে পরীক্ষামূলকভাবে তিনটি পর্যায়ক্রমিক ধাপ পেরোতে হবে। যদি প্রথম পর্ব ভালোভাবে পার হলে এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে তা সাধারণের ব্যবহারের উপযোগী হতে পারে। প্রথম ধাপ শেষ হলে দ্বিতীয় ধাপে বেশি সংখ্যক মানুষের ওপর বেশি সময় ধরে এ ভ্যাকসিন পরীক্ষা করা হবে। তৃতীয় ধাপে ৩০০ থেকে তিন হাজার মানুষের ওপর এক বছর বা তার বেশি সময় ধরে এ ভ্যাকসিন পরীক্ষা করা হবে। এভাবে যদি করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন সব ধাপে কার্যকর বলে প্রমাণিত হয় তবে, তা জনসাধারণের ব্যবহারের জন্য উপযোগী ঘোষণা করা হতে পারে।

এরকম আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button