সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনায় আরডিসি নাজিমের মাও বললেন ‘কাজটা ঠিক করেনি নাজিম’
গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : সাংবাদিক আরিফুল ইসলামকে মধ্য রাতে তুলে নিয়ে গিয়ে অমানুষিক নির্যাতনের নেতৃত্বদানকারী কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের আরডিসি (সিনিয়র সহকারী কমিশনার-রাজস্ব) নাজিম উদ্দিনের বাড়ি যশোরের মণিরামপুরে। সারা দেশের মতো নিজ গ্রামেও তিনি সমালোচিত। আলোচনায় বাদ যাচ্ছে না তার অর্থবিত্তের বিষয়টিও।
সোমবার কাশিপুরে নাজিম উদ্দিনের মা মাজেদা বেগম বলেন, ‘বউমার কাছে শুনিছি, নাজিমের চাকরিতে কী একটা সমস্যা হয়েছে। বিস্তারিত জানি না।’ পরে সাংবাদিকদের কাছে ঘটনা শুনে তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘কাজটা নাজিম ঠিক করেনি। বাড়ি আসলে আমি তাকে বুঝাবো।’
নাজিমের স্ত্রী সাবিনা সুলতানা বলেন, ‘গত রবিবার মনিরামপুর বাজারে গিয়ে ঘটনাটি জানতে পারি। নাজিমকে কল করে মোবাইল বন্ধ পাচ্ছিলাম। সোমবার সকালে নতুন একটা নম্বরে নাজিম কল করেছে। সে বলেছে, একটু ঝামেলা হয়েছে, কোনো সমস্যা না। আল্লাহর কাছে দোয়া করতে বলেছে।’
স্থানীয়রা জানিয়েছে, দূর্বাডাঙ্গা গ্রামের মৃত নিছার উদ্দিনের ছেলে নাজিম। দূর্বাডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা হলেও নাজিমের বাবা নিছার উদ্দিন অনেক আগে থেকেই কাশিপুর গ্রামে শ্বশুরবাড়িতে থেকে দিনমজুরী করতেন। নাজিমের বাবা নিছার উদ্দিন অসুস্থ্য হয়ে মারা গেছেন তিন বছর আগে। দিনমজুররের পাশাপাশি নিছার উদ্দিন বিভিন্ন লোকের কাছ থেকে সাহায্য নিয়ে অনেক কষ্ট করে ছেলেকে লেখাপড়া শিখিয়েছেন। বাবার পাশাপাশি তার মা মাজেদা বেগমও অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করতেন। এক ভাই এক বোনের মধ্যে নাজিম সবার বড়।
স্থানীয়রা জানান, নাজিম কাশিপুরে নানা বাড়িতে থেকে মনিরামপুর সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করতেন। ছোট বেলা থেকে খুব বদ মেজাজি আর একরোখা ছিলেন। গ্রামের মানুষের সঙ্গে ভালোভাবে মিশতেন না। ২০০৪ সালে সেখান থেকে এসএসসি পাশ করেন তিনি। ২০০৬ সালে মনিরামপুর সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন। তারপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্র বিজ্ঞানে ভর্তি হন। লেখাপড়া শেষ করে কিছুদিন একটি বেসরকারি ব্যাংকে চাকরি করেন। ২০১৪ সালে ৩৩তম বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিয়ে প্রথমবারেই উত্তীর্ণ হয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হওয়ার পর থেকে নাজিম এলাকার কাউকে পাত্তা দেন না। কারণে অকারণে মানুষকে ভয় দেখান। তার ক্ষমতার ভয়ে সবাই চুপ থাকেন।
নাজিম উদ্দিন ২০১৪ সালে সরকারি চাকরিতে যোগদানের ৩-৪ মাস পর একই উপজেলার হোগলাডাঙা গ্রামের প্রাইমারী স্কুলের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাকের মেয়ে সাবিনা সুলতানাকে বিয়ে করেন। আব্দুর রাজ্জাক মনিরামপুর পৌরশহরের ভগবান পাড়ায় তার নিজের বাড়িতে থাকেন।
আমেরিকান প্রবাসী তার এক ভায়রা ভাইয়ের সঙ্গে শ্বশুর বাড়ির পাশেই সাড়ে ১৪ লাখ টাকায় কেনা আট শতক জমিতে এক কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে তিন ইউনিটের চারতলা একটি বাড়ি নির্মাণ করছেন নাজিম উদ্দিন। এছাড়া কাশিপুরে নানার দেওয়া পাঁচ শতক জমির ওপর তিন কক্ষ বিশিষ্ট একটি একতলা বাড়ি রয়েছে তার। বাড়িটি চারটি সিসি ক্যামেরা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।
নাজিমের নির্মাণাধীন চারতলা বাড়ির ঠিকাদার আতিয়ার রহমান বলেন, ২০১৮ সালে হোগলাডাঙা গ্রামের মোসলেম নামে এক লোকের কাছ থেকে সাড়ে ১৪ লাখ টাকায় আট শতক জমি কেনেন নাজিম উদ্দিন ও তার এক ভায়রা। সেখানে এক কোটি ২০ লাখ টাকা মূল্যে তিন ইউনিটের চারতলা একটি বাড়ির কাজ চলছে। প্রতি তলা দুই হাজার ৯০০ বর্গফুটের। ১১ মাস আগে কাজ শুরু হয়েছে। এই পর্যন্ত ৫০ লাখ টাকা খরচ হয়ে গেছে।
নাজিমের স্ত্রী সাবিনা সুলতানা বলেন, তার বাবা তাদের দুই বোনকে আট শতক জমি দিয়েছেন। সেই জমিতে চার তলা বাড়ি তুলছেন। এখন পর্যন্ত এ বাড়ির কাজের জন্য নাজিম কোনো টাকা দেয়নি। তার বোন টাকা দিচ্ছেন।