চাঁদ সম্পর্কে আশ্চর্যজনক তথ্য
গাজীপুর কণ্ঠ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক : পৃথিবীর একমাত্র প্রাকৃতিক উপগ্রহ চাঁদ। বিজ্ঞানীদের ধারণা প্রায় সাড়ে চার বিলিয়ন বছর আগে এটির সৃষ্টি। একমাত্র উপগ্রহটি সম্পর্কে এই গ্রহের মানুষের কৌতুহলের শেষ নেই। প্রথম থেকেই পৃথিবীর এই উপগ্রহটি শিল্পী, মহাকাশবিদ ও বিজ্ঞানীদেরকে অভিভূত করেছে। ১৯৭২ সালে প্রথম চাঁদের মাটিতে পা রাখেন নীল আর্মস্ট্রং। তারপর থেকে চাঁদ সম্পর্কে দিন দিন নানা আশ্চর্যজনক তথ্য উম্মোচিত হচ্ছে। পৃথিবীর ওপর এর প্রভাব, বিভিন্ন সংস্কৃতিতে এর প্রতীকী ব্যবহার এবং বৈজ্ঞানিক গুরুত্ব অনস্বীকার্য।
পৃথিবী এবং বাদবাকি সৌরজগতের সঙ্গে চাঁদের আপেক্ষিক আকৃতি থেকে শুরু করে জটিল গঠনশৈলী সংক্রান্ত ১৯টি আশ্চর্যজনক বিষয় নিয়ে ২ পর্বের প্রতিবেদনের প্রথম পর্বে থাকছে ৯টি বিষয়।
* পৃথিবীর আকৃতি যদি বাস্কেটবলের মতো হয় তাহলে চাঁদের আকৃতি হবে টেনিস বলের মতো: এই স্কেলের অনুপাতে পৃথিবী থেকে চাঁদের দূরত্ব ২৩ ফুট ৯ ইঞ্চি।
* পৃথিবী ও চাঁদের মধ্যকার দূরত্ব ৩০টি পৃথিবীর সমান : চাঁদের কক্ষপথ সমান বৃত্তাকার না হওয়ায় পৃথিবী থেকে এর দূরত্ব বিভিন্ন সময়ে কমবেশি হয়। পৃথিবী থেকে চাঁদের গড় দূরত্ব ২৩৮,৮৫৫ মাইল। কিলোমিটার স্কেলে যা ৩৮৪,৪০০ কি.মি.। অর্থাৎ যেকোনো সময়ে আমাদের থেকে চাঁদের দূরত্ব ২৮ থেকে ৩২টি পৃথিবীর সমান হয়ে থাকে।
* জোয়ারের ওপর চাঁদের প্রভাব পৃথিবীর আবর্তন গতিকে কমিয়ে আনছে : চাঁদের মধ্যাকর্ষণ পৃথিবীর উপর টান সৃষ্টি করে, যা সাগরের জোয়ার ও ভাটার জন্য দায়ী। পদার্থবিজ্ঞানী জর্জ ডারউইন (চার্লস ডারউইনের পুত্র) দেখিয়েছেন- যে প্রক্রিয়ায় চাঁদের আকর্ষণ পৃথিবীতে জোয়ার-ভাটার সৃষ্টি করে, সেটি পৃথিবীর আবর্তনকে ধীর করছে। প্রত্যেক শতাব্দীতে পৃথিবীর দিনের পরিমাণ ০.০০২ সেকেন্ড করে বেড়ে চলেছে, যা বিলিয়ন বিলিয়ন বছর যাবত চলমান রয়েছে।
* প্রতি মাসের পূর্ণচাঁদের ভিন্ন ভিন্ন নাম রয়েছে: প্রচন্ড শীতে ক্ষুধার্ত নেকড়েদের গর্জনের কারণে জানুয়ারি মাসের পূর্ণচাঁদকে ‘উলফ মুন’ বলা হয়। সেপ্টেম্বর মাসের পূর্ণচাঁদকে বলা হয় ‘হারভেস্ট মুন’, জুনে বলা হয় ‘স্ট্রবেরি মুন’ এবং ডিসেম্বরের পূর্ণচাঁদকে বলা হয় ‘কোল্ড মুন’। ন্যাশনাল জিওগ্রাফি উত্তর আমেরিকায় ব্যবহৃত নামগুলোর কৃতিত্ব আমেরিকান আদিবাসীদেরকে দিয়েছে।
* কক্ষপথের কারণে বছরে একবার আমরা সুপারমুন দেখতে পাই : চাঁদের কক্ষপথ সম্পূর্ণ বৃত্তাকার নয়। পৃথিবীকে প্রদক্ষিণের সময় যখন এটি পৃথিবীর নিকটতম স্থানে আসে তখন এটিকে অন্য যেকোনো সময়ের চাইতে ১৪% বৃহৎ এবং ৩০% উজ্জ্বল দেখায়।
* চাঁদের সৃষ্টি প্রায় সাড়ে ৪ বিলিয়ন বছর পূর্বে : পৃথিবী ঠিক কিভাবে সৃষ্টি হয়েছে এ সম্পর্কিত নানা তত্ত্ব প্রচলিত আছে। কিন্তু নাসার ভাষ্যানুযায়ী, পৃথিবীর সঙ্গে একটি মঙ্গল আকৃতির বস্তুর সংঘর্ষের ফলে চাঁদের সৃষ্টি বলে মনে করা হয়। সংঘর্ষের পর ভগ্নবস্তুগুলো পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করতে শুরু করে এবং ধীরে ধীরে একসঙ্গে মিলিত হয়ে চাঁদের সৃষ্টি হয়।
* চাঁদে মানুষের বেঁচে থাকা কঠিন : পাতলা বায়ুস্তর এবং পানীয় জলের স্বল্পতার কারণে চাঁদে মানুষের স্থায়ী আবাস গড়ার কথা চিন্তাও করা যায় না। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, চাঁদের পৃষ্ঠে ঘনীভূত পানির বরফ রয়েছে। চন্দ্রপৃষ্ঠের বরফ থেকে পানি পাওয়া সম্ভব, যেটি একসময়ে চাঁদে মানুষের অভিযান এবং সেখানে অবস্থানকালে ব্যবহার্য হতে পারে এবং এটি চন্দ্রপৃষ্ঠের তলদেশের পানির চাইতে সহজে ব্যবহার্য বলে মনে করেন নাসার কর্মকর্তারা।
* চাঁদে মানুষ বাঁচতে না পারার আরো কিছু কারণ রয়েছে : নাসার অবসরপ্রাপ্ত নভোচারী পেগি হুইটসনের মতে, চাঁদের ধূলিকণার কারণে অ্যাপোলো মিশনকে অনেক বেশি সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। চাঁদের ধুলিকণাগুলোকে ‘রিগোলিথ’ বলা হয়, যেগুলো সঙ্গে থাকা সরঞ্জামগুলোকে নষ্ট করে দিতে পারে। এছাড়া চাঁদের তাপমাত্রাও অনেক বেশি। চাঁদ তার নিজ অক্ষের উপর একবার আবর্তন করতে সময় নেয় ২৭ দিন। অর্থাৎ এর একদিকে পৃথিবীর ১৩ দিন ও আধা ঘণ্টার সমান একটানা সূর্যের আলো থাকে এবং পরবর্তীতে একইরকমভাবে একটানা রাত থাকে। চাঁদে যখন সূর্যের আলো বিরাজ করে, তখন তাপমাত্রা থাকে ২৪০ ডিগ্রি ফারেনহাইট। অন্যদিকে যখন একটানা রাত বিরাজ করে তখন এর তাপমাত্রা -২৪০ ডিগ্রিতে নেমে যায়।
* ভূমিকম্পের ন্যায় চন্দ্রকম্পনও আছে : সত্তর দশকের প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে ২০০৬ সালে প্রমাণিত হয় যে, চাঁদেও কম্পন হয়ে থাকে। নাসার বক্তব্য অনুযায়ী, সমগ্র উপগ্রহটির কিছুটা বিচ্যুতির ফলে সেখানে অনেক বড় চন্দ্রকম্পন সংঘটিত হয়। উল্কাপিন্ডের পতনের ফলেও কম্পন অনুভূত হয় এবং দীর্ঘসময় যাবত প্রচন্ড ঠান্ডা রাত থাকার পর যখন সূর্যের আলো পতিত হয় তখন হিমশীতল কঠিন চন্দ্রপৃষ্ঠের সম্প্রসারণের ফলে চন্দ্রকম্পন সংঘটিত হয়। চাঁদের কম্পন সাধারণত চন্দ্রপৃষ্ঠ থেকে চন্দ্রগর্ভের ১২ থেকে ১৯ মাইল নিচে সংঘটিত হয় এবং এটি প্রায় ১০ মিনিটকাল স্থায়ী হয়।
(আগামী পর্বে সমাপ্য)
তথ্যসূত্র : বিজনেস ইনসাইডার