ছাড় পাচ্ছে না নদী দখলদারদের কেউ
গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : বুড়িগঙ্গা তীরে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে এবারের অভিযানটি এরই মধ্যে ব্যাপক আলোচনার তৈরি করেছে। ঢাকা-৭ আসনের সংসদ সদস্য হাজী মোহাম্মদ সেলিম, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বিটিসিএল- কারও অবৈধ দখলদারিত্ব বাদ যাচ্ছে না। এতে দখলদারদের এই বার্তা পৌঁছে গেছে যে, এবার হয়তো পার পাওয়া যাবে না।
এই উচ্ছেদ অভিযান এবং নদীকে কেন্দ্র করে গৃহীত প্রকল্পের জন্য সাড়ে আট হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। আর প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে নদীর জায়গা দখল করে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হচ্ছে গত তিন দিন ধরে।
বড় বড় বুলডোজারসহ ভারী বিভিন্ন যন্ত্রপাতি দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে দ্বিতল, তিনতলা বা তার চেয়ে বড় স্থাপনা। দিনভর ঘিরে রেখে স্থানীয় জনতা দেখছেন এই অভিযান।
এই অভিযানে কাউকেই ছাড় দেওয়া হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। বৃহস্পতিবার অভিযানের তৃতীয় দিনেও ভেঙে ফেলা হয়েছে সরকারি জায়গায় গড়ে ওঠা বসতবাড়ি, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান ও বহুতল ভবন। উচ্ছেদের মধ্যে রয়েছে সরকারি প্রতিষ্ঠান এবং ধর্মীয় স্থাপনাও। মঙ্গলবার থেকে শুরু হওয়া বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) এই অভিযান চলবে ৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
উচ্ছেদ অভিযানের প্রথম তিন দিনে অবৈধ দখলমুক্ত করা হয়েছে প্রায় এক কিলোমিটার জায়গা। তৃতীয় দিনে উচ্ছেদ শুরু করা হয় খোলামুড়া ঘাটের পূর্ব দিকের নাসিরাবাদ এলাকায়। এ সময় আল-হেরা কমিউনিটি সেন্টারের বিপরীতে থাকা প্রায় ২৩টি স’মিল ভেঙে দেয় বিআইডব্লিউর কর্মকর্তারা।
স্থানীয় বাসিন্দা বশির বলেন, ‘কাল দেখলাম ঘাটের পশ্চিম দিকে ভাঙে। এত তাড়াতাড়ি এই দিকে আইয়া পরব ভাবতে পারি নাই। বুঝলে তো মালছামানা সরাইয়া ফালাইতাম।’
দ্বিতীয় দিনের উচ্ছেদে ভাঙা পড়েছে ঢাকা-৭ আসনের সাংসদ হাজী সেলিমের সিমেন্টের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান। রাজনৈতিক নেতার স্থাপনা উচ্ছেদের হাত থেকে রেহাই পায়নি। তাই প্রথম দুই দিন সরকারি জায়গাগুলো দখল করে বসবাস ও ব্যবসা পরিচালনা করে আসছিলেন তাদের থেকে উচ্ছেদের বিষয়ে আপত্তির রব শোনা যায়নি।
উচ্ছেদে বসতবাড়ি ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান ভাঙা পড়েছে এমন কয়েকজনের সঙ্গে গণমাধ্যমকর্মী পরিচয়ে কথা বলার চেষ্টার করলে তারা কথা বলতে রাজি হয়নি।
উচ্ছেদের বিষয়ে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) চেয়ারম্যান এম মোজাম্মেল হক জানান, বর্তমানে তারা ৭৬টি ভবনের তালিকা হাতে নিয়ে কাজ করছেন যার প্রতিটি নদীর জায়গা দখল করে স্থাপনা করা হয়েছে। আর এ স্থাপনার মধ্যে সরকারি প্রতিষ্ঠানও রয়েছে।
নদী যারা দখল করে ব্যবসা পেতেছেন তাদের অনেকেই প্রভাবশালী। তাদের তরফ থেকে কোনো রকম বাধা আসছে কি না, জানতে চাইলে বিআইডব্লিউটিএর প্রধান বলেন, ‘আমাদের কাছে এর ব্যাকগ্রাউন্ডে কে আছে সে ব্যাপারে খোঁজখবর নিতে যাচ্ছি না। আমরা দেখছি নদীর অংশ যেটা সেটা নদীকে ফিরিয়ে দিতে হবে। এখানে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এখানে কাউকে ছাড় দেওয়া হচ্ছে না। নদীর অংশে জনগণের জন্য ক্ষেত্র সৃষ্টি করা হবে।’
কামরাঙ্গীরচরের খোলামোরা ঘাট এলাকায় সাড়ে তিন কিলোমিটার জায়গা রয়েছে যা বুড়িগঙ্গা নদীর জন্য যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। সেই লক্ষ্যে জায়গাটি বিআইডব্লিউটিএ নিজেদের আয়ত্তে নিতে চায় এবং পরিকল্পনা অনুযায়ী সেখানে কাজ করতে চায়। সরকারের পক্ষ থেকে এ জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে সাড়ে আটশ কোটি টাকা।
উদ্ধার করা জায়গা মুক্ত রাখতে বিশেষ উদ্যোগ
নদীতীরের অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদে এর আগেও নানা সময় অভিযান চালানো হয়েছে। কিন্তু দখলদাররা বারবার ফিরে এসেছে। তবে এবারের উদ্যোগটি ব্যর্থ হতে দেওয়া হবে না বলে জানাচ্ছে বিআইডব্লিউটিএ।
প্রকল্পের আধীনে নদীর সৌন্দর্যবর্ধন ছাড়াও ১০ হাজার নদী রক্ষা পিলার স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এর বাইরে ৫০ কিলোমিটার হাঁটার রাস্তা এবং ১২টি সেগমেন্ট নির্মাণ করা হবে। তার মধ্যে খোলামুড়া একটি। আরও ১১টি সেগমেন্ট বিভিন্ন স্থানে রয়েছে।
এর আগে ২০১৬ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ঢাকা মহানগরীতে ৫০টির বেশি উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এবং রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। যদিও একটি নির্দিষ্ট সময় পর হাতেগোনা কয়েকটি জায়গা বাদে প্রায় সবগুলোই পুনরায় দখল হয়ে যায়।
বিআইডব্লিউটিএর পরিচালিত অভিযান সেরকমই কোনো রূপ নেবে কিনা কিংবা উচ্ছেদের পর কোনো পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে কিনা সে বিষয়ে জানতে চাইলে সংস্থাটির চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা ঢাকাবাসীর জন্য একটি বিনোদন ক্ষেত্রে করতে চাই। মানুষ এখানে বেড়াতে আসবে সেরকম একটা পরিবেশ সৃষ্টি করা আমাদের লক্ষ্য। নদীর পানি ব্যবহার করবে, গোসল করবে, পান করবে সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি।’
‘আমরা যদি উচ্ছেদ করে চলে যেতাম তাহলে সে জন্য সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু আমরা চলে যাচ্ছি না। সঙ্গে সঙ্গে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে। এখানে হাঁটার রাস্তা থাকবে, সবুজায়ন করা হবে, লাইটিংয়ের ব্যবস্থা থাকবে।’
কামরাঙ্গীরচর ছাড়াও আরও ৪২ কিলোমিটার এলাকাতে নদী তীরে এ রকম অসংখ্য অবৈধ স্থাপনা আছে জানিয়ে তার সবগুলো ভেঙে দেওয়া হবে বলেও জানিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ।