খেলাধুলা

বাংলাদেশের জয় নিয়েই মাঠ ছাড়লেন অধিনায়ক মাশরাফি 

গাজীপুর কণ্ঠ, খেলাধুলা ডেস্ক : কোনো স্ক্রিপ্ট কিংবা কল্পনার কোনো কাব্য নয়। যা ঘটেছে চোখের সামনে ঘটেছে। যা হয়েছে চোখের সামনে-ই হয়েছে। একেবারে পিকচার পারফেক্ট।

লিটন কুমার দাস ছক্কার পর ছক্কা মারছেন এরকমটা কবে দেখেছেন? কিংবা তামিম দেখছেন তার করা ওয়ানডের সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড ভাঙতে? সেটাও ২২ গজে থেকে। এরকমই একটি দিন কেটে গেল সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে।

আজ দিনটা তো ছিল মাশরাফি বিন মুর্তজার। বাংলাদেশের সফলতম অধিনায়কের শেষ ম্যাচ। সেই ম্যাচটি রাঙালেন লিটন আর তামিম। হয়তো বাংলাদেশের পাওয়া সেরা উদ্বোধনী জুটি। তাদের ২৯২ রানের জুটিতে বাংলাদেশ বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে ৩ উইকেটে ৩২২ রান তোলে। জবাবে জিম্বাবুয়ে আটকে যায় ২১৮ রানে।

নামের পাশে ৪৯ জয় নিয়ে নেমেছিলেন মাশরাফি। একটি জয় পেলেই ছুঁয়ে ফেলবেন পঞ্চাশের মাইলফলক। একে তো জিম্বাবুয়েকে হোয়াইটওয়াশের চ্যালেঞ্জ, আরেক দিকে নিজের মাইলফলক ছোঁয়ার পণ। মাশরাফি জিতেছেন। বাংলাদেশ জিতেছে আরেকটি হোয়াইটওয়াশ সিরিজ। দেশসেরা অধিনায়ককে এমন কিছুই উপহার দিতে চেয়েছিলেন সতীর্থরা। মাথা উচুঁ করে, জার্সির কলার ওপরে উঠিয়ে, শরীর নাড়িয়ে পেরিয়ে যাবেন সবুজ গালিচা। অধিনায়ক মাশরাফি শেষবারের মতো মাঠ ছাড়লেন এভাবেই।

কার্ল মুম্বার বল পয়েন্ট দিয়ে সীমানায় পাঠানোর সঙ্গে সঙ্গে তামিম সতীর্থ লিটনকে অভিনন্দন জানালেন। ১৫৪ থেকে লিটনের রান ১৬০। ওই ছক্কায় তামিমের দুদিন আগের করা ১৫৮ রান টপকে ওয়ানডেতে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড নিজের করে নেন লিটন। এরপর তার ব্যাটে উঠে ঝড়। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের তৃতীয় সেঞ্চুরি এগিয়ে যাচ্ছিল ডাবলে। কিন্তু ১৭৬ রানে তাকে থামতে হয়।

বৃষ্টিতে ২ ঘন্টা ৩৮ মিনিট ম্যাচ বন্ধ ছিল। বৃষ্টির পর মাত্র ২৪ বলে ৭৪ রান করেন লিটন। সব মিলিয়ে তার ইনিংস সাজানো ১৪৩ বলে। ১৬ চার ও ৮ ছক্কায় লিটনের ব্যাট থেকে আসে ১৭৬ রান। বিধ্বংসী এ ইনিংসে লিটন ভেঙেছেন একাধিক রেকর্ড। এক ইনিংসে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড ভেঙেছেন। উইকেট কিপার ব্যাটসম্যান হিসেবে করেছেন তৃতীয় সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রান।

লিটনের পাশাপাশি সেঞ্চুরি পেয়েছেন তামিমও। ঝড় তুলেছেন দেশসেরা ওপেনারও। ক্যারিয়ারের ত্রয়োদশ সেঞ্চুরির ইনিংসটি সাজান ১০৯ বলে ৭ চার ও ৬ ছক্কায়। লিটনের আউটে ভাঙে উদ্বোধনী জুটি। সেটা ২৯২ রানে। রেকর্ড রানের জুটিতে ওলটপালট রেকর্ডবুক।

বাংলাদেশের ওপেনিং জুটি এবং যেকোনো উইকেটে সর্বোচ্চ রানের জুটি এটি। ওপেনিং জুটিতে অপি ও বিদ্যুতের ১৭০ রানের জুটি ভেঙেছেন তারা ২১ বছর পর। এছাড়া তাদের ২৯২ রানের জুটি বিশ্ব ক্রিকেটে ওপেনিং জুটিতে তৃতীয় সর্বোচ্চ। ব্যাট হাতে ঝড় তুলে দুজন ইনিংসে হাঁকিয়েছেন ১৪ ছক্কা যা এক ইনিংসে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ।

বৃষ্টিতে ম্যাচ বন্ধ হওয়ায় বাংলাদেশের ইনিংস নেমে আসে ৪৩ ওভারে। বৃষ্টি আইনে সমান ওভারে জিম্বাবুয়ে ৩৪২ রানের টার্গেট পায়। বিশাল লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুতেই উইকেট হারায় অতিথিরা। আর অতিথি শিবিরে আঘাতটি করেন অধিনায়ক মাশরাফি।

শুরু থেকেই মাশরাফি আউট সুইং পাচ্ছিলেন।তিনাসে কামুনহকামউয়ি তাতেই কাবু। সিমের ওপর বল পিচ করে হাল্কা সুইং পায়। ব্যাটের কানায় লেগে বল যায় উইকেট কিপারের হাতে। দলে ফেরা সাইফউদ্দিন টিকতে দেননি ব্রেন্ডন টেলরকে। ৩ চারে ভালো কিছুর ইঙ্গিত দিয়েছিলেন অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান। কিন্তু সাইফউদ্দিনের গতিতে পরাস্ত হয়ে টেলর ক্যাচ দেন শর্ট মিড উইকেটে।

সেখান থেকে ৪৬ রানের জুটি গড়ে প্রতিরোধ গড়েন চাকাবা ও শন উইলিয়ামস। অভিষিক্ত আফিফ নিজের প্রথম ওভারে এসে ভাঙেন এ জুটি। ডানহাতি অফস্পিনারের বল মিস করে জিম্বাবুয়ের অধিনায়ক বোল্ড হন ৩০ রানে। সেখান থেকে সিকান্দার রাজা, ওয়েসলি মাধবেরেরা চেষ্টা চালিয়ে বড় কিছু করতে পারেননি। পুরো সিরিজে দুর্দান্ত খেলা ওয়েসলি আজ করেন ৪২ রান। সিকান্দার রাজার ব্যাট থেকে আসে ৬১ রান।

অধিনায়কত্বের শেষ ম্যাচে মাশরাফির বোলিং ফিগার ৬-০-৪৭-১। ৪ উইকেট নিয়ে সেরা বোলার মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। তাইজুল ও মুস্তাফিজের পকেটেও গেছে একটি করে উইকেট। শেষ স্পেলের এসে দ্বিতীয় ওভারে পরপর দুই বলে উইকেট নিয়ে জয় নিশ্চিত করেন সাইফউদ্দিন।

এরপর মাশরাফির বিদায়ক্ষণ। জিম্বাবুয়ের ড্রেসিংরুমের সামনে থেকে নিজেদের ড্রেসিংরুমে ফেরা পর্যন্ত তামিম নিজ কাঁধে চড়ালেন বাংলাদেশের সেরা অধিনায়ককে। মিরাজ, মুস্তাফিজ, সৌম্য, লিটনরা সবাই মাশরাফিকে ঘিরে। ড্রেসিংরুমের সামনে বিশাল জটলা। সেই জটলা পুরোটাই মাশরাফির জন্য।

কিংবদন্তিদের বিদায় মনে হয় এরকমই হয়। শ্রীলঙ্কান গ্রেট কুমার সাঙ্গাকারার কথা ভুলবার নয়। সাঙ্গাকারা তিন ফরম্যাট খেলে যেদিন বিদায় নিলেন সেদিন কেঁদেছিল আকাশও। মাশরাফি ২০১৭ সালে টি-টোয়েন্টি থেকে অবসর নেন। সেদিন কেঁদেছিল কলম্বো। আজ সিলেটে অধিনায়কত্বের ইতি টানলেন। কাঁদল আজ সিলেটও। ধন্যবাদ মাশরাফি। আপনার হাত ধরে আসা ৫০ জয়ে নিশ্চিতভাবে বাংলাদেশ দেখেছে এ যাবৎকাল পর্যন্ত সেরা সাফল্য। আপনি পথ দেখিয়েছেন। সাফল্যর সীমানা দেখিয়েছেন। সেই সীমানা অতিক্রম করার দায়িত্বটা এখন লিটন, তামিম, আফিফ, সৌম্যদের।

এরকম আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button