খাগড়াছড়িতে বিজিবি-গ্রামবাসী সংঘর্ষে নিহত ৫
গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলায় গ্রামবাসীর সঙ্গে বিজিবি সদস্যদের সংঘর্ষে নিহত ব্যক্তির সংখ্যা বেড়ে পাঁচজনে দাঁড়িয়েছে। নিহতদের মধ্যে এক বিজিবি সদস্যও আছেন।
এ ঘটনায় আহত দু’জনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
মঙ্গলবার (৩ মার্চ) দুপুরের দিকে উপজেলার গাজীনগর এলাকায় জ্বালানি কাঠ পরিবহনে বাধা দেওয়াকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত পাঁচজন হলেন- বিজিবি-৪০ এর সদস্য মো. শাওন (৩০), মাটিরাঙ্গার বাসিন্দা আহমদ আলী (২৫), আলী আকবর (২৭) ও তাদের বাবা মুছা মিয়া (৫৫) এবং মো. মফিজ (৬০) ।
অন্যদিকে স্বামী ও দুই সন্তানের মৃত্যুর খবর শুনে মা রঞ্জু বেগম হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা গেছেন বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
পুলিশ জানায়, একটি ট্রলিতে করে জ্বালানি কাঠ নিয়ে যাওয়ার সময় বিজিবি- ৪০ এর সদস্যরা বাধা দেয়। এ নিয়ে বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে গ্রামবাসীর সঙ্গে বিজিবি সদস্যরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এ সময় বিজিবির গুলিতে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান আহমদ আলী, আলী আকবর তাদের বাবা মুছা মিয়া। পরে গ্রামবাসীর পাল্টা হামলায় নিহত হন বিজিবি সদস্য শাওন।
নিহত মুছার ছোট ভাই মো. আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, আমার ভাতিজা (নিহত আলী আকবর) ট্রলিতে করে গাছ গাজীনগর থেকে পরিবহন করার সময় বিজিবির সদস্যরা বাধা দেন। তারা গাছগুলো বিজিবি ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়ার জন্য বলেন। এ সময় বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে বিজিবি সদস্যরা স্থানীয় লোকজনদের লক্ষ্য করে এলোপাথারি গুলি ছোড়ে। এ সময় আকবার আলী ও মুছা মিয়া ঘটনাস্থলে মারা যান। পরে আহত অবস্থায় বিজিবি সদস্য শাওন ও আহম্মদ আলীকে মাটিরাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে তাদের মৃত্যু হয়। চমেক হাসপাতালে পথে মফিজ মিয়া মারা যান।
এদিকে গুলিবিদ্ধ মো. হানিফকে (২৮) প্রথমে মাটিরাঙ্গা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে পরে তাকে চমেক হাসপাতালে পাঠানো হয়। এদিকে হানিফের পরিবারের সদস্যরা দাবি করেছেন বিনা উস্কানিতে বিজিবি সদস্যরা এ হামলা চালিয়েছেন।
খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রেজাউল করিমের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও বন বিভাগের কর্মকর্তা। তদন্ত রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মাটিরাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শামছুদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, চারজনের মরদেহ মাটিরাঙ্গা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রাখা হয়েছে। এছাড়া চমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন মো. মফিজ। এ ঘটনায় এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
এদিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন গুইমারা সেনা রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শাহরিয়ার জামান, খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস, পুলিশ সুপার (এসপি) আব্দুল আজিজসহ প্রশাসনের কর্মকর্তা।