আলোচিত

পাপিয়া রিমান্ডে, মামলায় নেই ‘ওয়েস্টিন’ হোটেলের কাহিনি?

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : গ্রেপ্তারের পর আলোচনায় আসা যুব মহিলালীগ নেতা শামিমা নূর পাপিয়ার বিরুদ্ধে তিনটি মামলা হয়েছে। ১৫ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে তাকে। তবে ওয়েস্টিন হোটেলের ‘আস্তানা’ নিয়ে একটি শব্দও নেই কোনো মামলায়।

পাপিয়াসহ আটক চারজনকে সোমবার হাজির করে পুলিশ তিন মামলায় ১০ দিন করে ৩০ দিনের রিমান্ড চাইলে ১৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত। আলোচনা চলছে পাপিয়ার সাথে যাদের ছবি রয়েছে, তাদের নিয়ে। ওইসব ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর প্রশ্ন উঠেছে, পাপিয়ার হাত কত বড় ছিল, কেনইবা তাকে শেষ পর্যন্ত আটক করা হলো? তিনি কি কোনো মহলের জন্য বিপজ্জনক হয়ে উছেছিলেন? নাকি স্বার্থের কোনো দ্বন্দ্বে তাকে বলি দেয়া হয়েছে?

মামলায় নেই আস্তানা প্রসঙ্গ

পাপিয়া ও তার সাবেক ছাত্রলীগ নেতা স্বামীসহ চার জনকে আটক করা হয় শনিবার। আটকের পর র‌্যাব সংবাদ সম্মেলন করে তার বিষয়ে তথ্য তুলে ধরে। সেখানে পাপিয়ার অনৈতিক কাজে জড়িত থাকার অভিযোগই প্রাধান্য পায়।

র‌্যাব-১-এর অধিনায়ক লে. কর্ণেল শাফী উল্লাহ বুলবুল জানান, ‘‘তিনি (পাপিয়া) মাসে শুধুমাত্র হোটেল ওয়েস্টিনে ১ কোটি ৩০ লাখ টাকার বিল পরিশোধ করেছেন। অথচ তার বছরে আয় দেখানো আছে ১৯ লাখ টাকা। ওয়েস্টিন হোটেলে প্রতিদিন শুধুমাত্র বারের খরচ বাবদ প্রায় আড়াই লাখ টাকা পরিশোধ করতেন পাপিয়া। ওয়েস্টিনে তার নিয়ন্ত্রণে সাত জন নারী কাজ করতেন। তাদেরকে প্রতি মাসে ৩০ হাজার করে মোট ২ লাখ ১০ হাজার টাকা পরিশোধ করতেন।’’ হোটেল ওয়েস্টিনে প্রেসিডেন্ট স্যুট পাপিয়ার নামে সবসময় বুকড থাকতো দাবি করে তিনি আরো বলেন, ‘‘পাপিয়া জোর করে নারীদের অনৈতিক কাজে বাধ্য করতেন।’’

যে মামলা এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই

পপিয়াসহ চার জনের বিরুদ্ধে বিমানবন্দর ও শেরেবাংলা নগর থানায় মোট তিনটি মামলা করেছে র‌্যাব। মামলা তিনটি অস্ত্র ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে করা হয়েছে।

নারী নির্যাতনের মামলা না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে লে. কর্নেল শাফী উল্লাহ বুলবুল বলেন, ‘‘যে নারীরা ভিকটিম হয়েছেন, তারা যদি মামলা করেন, তাহলে মামলা হতে পারে। আমরা তো মামলা করতে পারি না। আমরা ভিকটিম নারীদের সাথে কথা বলেছি, তারা ভয়ে মামলা করতে চান না।’’

মন্ত্রী এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাসহ সমাজের বিভিন্ন বিশিষ্ট ব্যক্তির সাথে পাপিয়ার ছবি এবং সেলফি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘সেলফি বা ছবি তোলা একটা রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। এখন কেউ যদি কোনো অনুষ্ঠানে গিয়ে কারুর সঙ্গে ছবি তুলতে চান, তাহলে তো না করা যায় না। তারা তো অভদ্রতা করতে পারেন না। যারা ভিআইপি, তাদের নিজস্ব সিকিউিরিটি আছে। তারা বাধা দিতে পারে। কিন্তু অন্যরা তো পারে না। আর সেই ছবি যদি কেউ ব্যবহার করে কোনো অনৈতিক কাজ করেন, সেটা তো ব্যবহারকারীর দায়।’’

পাঁচতারা হোটেল দি ওয়েস্টিন ঢাকাকেও দায়ী করার সুযোগ নেই বলে মনে করেন তিনি। তিনি বলেন, ‘‘তারা গুড ক্লায়েন্ট পেয়েছে, টাকা দিয়েছে, ভাড়া দিয়েছে।’’

চেষ্টা করেও এ সম্পর্কে ওয়েস্টিন হোটেল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

তবে সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ বলেছেন, ‘‘নারীদের জোর করে অনৈতিক কাজে বাধ্য করার অভিযোগে পাপিয়ার বিরুদ্ধে আলাদা মামলার কথা আইনেই আছে। আলাদা মামলা না হলে তা আইনের ব্যাত্যয় হবে। ওয়েস্টিন হোটেল তার এই কাজের সহযোগী। তারাও মামলার আওতায় আসে। কারণ, র‌্যাবই বলেছে হোটেলের প্রেসিডেন্ট স্যুট ভাড়া নিয়ে সে এসব বেআনি কাজ করতো।’’

সঙ্গে ছবি তুললেও কেউ কিছু জানতেন না?

যুব মহিলা লীগের নরসিংদী জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন পাপিয়া। আটক হওয়ার পর তাকে সংগঠন থেকে বহিস্কার করা হয়েছে।

সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অপু উকিল বলেন, ‘‘আমরা নরসিংদী জেলার পুরো কমিটিই ভেঙে দিচ্ছি। আমরাও তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। আমরা জানতে চাই যে, সংগঠনকে কিভাবে ব্যবহার করেছে, কারা তাকে সহায়তা করেছে, তার কারণে সংগঠনের ইমেজ কতটা নষ্ট হয়েছে।’’

পাপিয়ার সঙ্গে অপু উকিলেরও ছবি আছে। পাপিয়াকে তিনি ভালোভাবেই চেনেন। তারপরও সে এতদিন এই বেআইনি কাজ কিভাবে করল জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘আমরা কিছুই জানতাম না। এখন জানছি। আর একটি জেলার সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সে আমাদের কাছে আসতো। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যেতো। আমাদের সঙ্গে ছবি তুলেছে। আমরা সংগঠনের নেতা-কর্মীদের তো আর আমাদের সঙ্গে ছবি তুলতে বাধা দিতে পারি না।’’

এদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সোমবার সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘‘পাপিয়ার অপরাধের সঙ্গে যাদের সম্পৃক্ততা রয়েছে, তদন্তে তাদের নাম বেরিয়ে আসবে এবং তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

পাপিয়ার সম্পদ

আদালতে দেয়া রিমান্ড আবেদনের প্রতিবেদনে বিমানবন্দর থানার ইন্সপেক্টর মো. কায়কোবাদ কাজী পাপিয়ার অস্ত্র, মাদক ব্যবসা, প্রতারণা, চোরাচালান, জাল নোটের কারবার, চাঁদাবাজি, তদবির বাণিজ্য, জমি দখল-বেদখল ও অনৈতিক ব্যবসার কথা উল্লেখ করেছেন।

পাপিয়ার সাথে আটক হওয়া তার স্বামী মফিজুর রহমান ওরফে মতি সুমনের বিরুদ্ধে এর আগে নরসিংদী মডেল থানায় হত্যাসহ দু’টি মামলা থাকার কথাও প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। সুমন আগে নরসিংদী শহর ছাত্রলীগের আহ্বায়ক ছিলেন।

পুলিশ বলছে, পাপিয়া ও তার স্বামীসহ চারজনকে শনিবার রাতে বিমানবন্দরের বহির্গমন টার্মিনালের ৬ নাম্বার গেটের কাছ থেকে আটক করা হয়। তাদের কাছ থেকে তখন বড় অঙ্কের দেশি, বিদেশি মুদ্রা, পাসপোর্ট, জাল নোট, ক্রেডিট ও ডেবিট কার্ড জব্দ করা হয়।

পরে তাদের নিয়ে পাপিয়ার ইন্দিরা রোডের বাসায় অভিযান চালিয়ে একটি বিদেশি পিস্তল, দু’টি ম্যাগাজিন, ২০ রাউন্ড গুলি, ৫ বোতল বিদেশি মদ, ৫৮ লাখ ৪১ হাজার টাকা, ৫টি পাসপোর্ট, ৩টি চেক, বেশকিছু বিদেশি মুদ্রা ও বিভিন্ন ব্যাংকের ১০টি এটিএম কার্ড উদ্ধার করা হয়।

র‌্যাবের দাবি, পাপিয়ার ঢাকায় দু’টি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট, নরসিংদী শহরে দু’টি ফ্ল্যাট, চারটি বিলাসবহুল গাড়ি এবং গাড়ি ব্যবসায় প্রায় দেড় কোটি টাকা বিনিয়োগের তথ্য পাওয়া গেছে। এছাড়া বিভিন্ন দেশের ব্যাংকে নামে-বেনামে অনেক অ্যাকাউন্টে বিপুল পরিমাণ অর্থ আছে বলেও দাবি করা হয়েছে।

লে. কর্নেল শাফী উল্লাহ বুলবুল বলেন, ‘‘পাপিয়া বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচারও করেছে। তার বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং আইনে আরো একটি মামলা করবে সিআইডি।’’

মূল হোতা কারা?

বিমানবন্দর থানার ইন্সপেক্টর মো. কায়কোবাদ কাজী বলেছেন এই চক্রের মূল হোতাদের তারা আইনের আওতায় আনতে চান। চক্রের সাথে আরো অনেককে জড়িত বলে ধারণা করা হচ্ছে। অবৈধ কাজের মাধ্যমে বিপূল অর্থ-সম্পদের মালিক হয়েছে চক্রটি। পাপিয়াসহ আটকদের জিজ্ঞাসাবাদে চক্রের মূল হোতা এবং অন্য সদস্যদের সম্পর্কে জানা যাবে বলে তিনি আদালতকে লিখিতভাবে বলেছেন।’’

এরকম আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button