আলোচিত

আওয়ামী লীগে করোনা’র আদলে ‘পাপিয়া ভাইরাস’!

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : কামিনী, কাঞ্চনের সাথে নেশার আয়োজন যে খুব প্রভাবশালী তা এই উপমহাদেশের ইতিহাস দেখলেই পাওয়া যায়, এই বাংলা তো তার বাইরে না। তাই কামিনী দিয়ে কাঞ্চন এনে তার প্রবাহ ঠিক রাখতে বা বাড়াতে এর সাথে নেশার যোগান দেওয়া হয়। হালের অবস্থা দেখে মনে করার যথেষ্ট কারণ আছে যে, যারা বাংলাদেশের গোটা রাজনীতিকে নিজের কব্জায় বন্দি করেছে তাঁদের আছে শত শত কামিনী। নজরুলের গানের ভাষায়, ‘পিয়া গেছে কবে পরদেশ পিউ কাহা ডাকে পাপিয়া’। ঘরে বৌ রেখেই উনারা ছুটে যান পাপিয়াদের কাছে। তাই তো বাংলার শহরে বন্দরে এখন পাপিয়াদের মহা-দাপট।

যাদের টাকা নেই তারা হয় সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি বা চুরি করে না হয় আদিম ব্যবসার সাথে জড়িত হয়েই মূলধন তৈরি করে। এর প্রমাণ ভুরি ভুরি। আর এক শ্রেণির পুরুষ মানুষের হাতে যখন অসৎ পয়সা আসে সে তখন নিজেকে সম্রাট মনে করে। তাঁরা যায় পাপিয়াদের কাছে, কারণ তারা প্রতিদিন নতুন নতুন পাপিয়ার জন্ম দেয় টাকার লোভ দেখিয়ে বা অন্য বিপদে ফেলে। আর দেশের বিভিন্ন খাতে যারা সম্রাট, তারা সম্রাট হলেই সে নতুন নতুন হেরেমখানা খুঁজে ফেরেন। অতৃপ্তি তাকে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ায় ‘বেদি থেকে বেদিতে দিতে পূজার অর্ঘ্য’। তাই তারা সাহায্য নেয় ““ পাপিয়াদের মত দালালদের “।

টাকা বা কাঞ্চনের লোভ নাই, এমন মানুষ পাওয়া দুষ্কর। কিন্তু এমন মানুষ প্রায়ই দেখা যায় যে টাকা হলেই তারা সুরা আর সাকীতে আসক্ত হয়ে পড়েন। সুরা আর সাকী এমন নেশার দ্রব্য যাতে কেউ কোন দিন তৃপ্ত হয় না। তাই সুবিধাবাদীরা ক্ষমতাধর সুরা আর সাকী আসক্তদের কাজে লাগিয়ে টাকা আয় করে। অনেকে মন্তব্য করেন যে, জাতীয় পার্টির এক মহা ক্ষমতাধর ব্যক্তির সাকীর আসক্তি পার্টির পতনের অন্যতম কারণ। যারা জাতীয় পার্টির শাসনামল দেখেছে, তারা এই কথার সত্যতা উপলব্ধি করতে পারবেন। জাতীয় পার্টির এক বড় নেতার কত সেট গয়না ছিল জাতীয় সংসদে! যা নিয়ে তখনকার দিনে পত্রিকায় খবর বেরুতো।

বিএনপির শাসনামলে সুরা আর সাকীতে আসক্ত এক যুবক প্রধানমন্ত্রীর প্রায় সমান ক্ষমতাধর ছিলেন। সেই ক্ষমতাধর যুবকের কাছ থেকে অনৈতিক আর্থিক সুবিধা নিতে সুবিধাবাদীরা সারা দেশের বিভিন্ন এলাকায় সেই যুবকের জন্য বালাখানা তৈরি করে। যারা ঐ যুবকের সঙ্গী ছিলেন তারা হয়ে পড়েন অপ্রতিরোধ্য। লুটপাটে মেতে উঠলেও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী কিছুই করতে পারেন নি বা করেন নি। ফলাফল পতন, মহা পতন।

মতিয়া চৌধুরী, সাহারা খাতুন ও মুন্নুজান সুফিয়ানদের মতো নেত্রী তৈরির আশায় পাপিয়াদের দলে নেওয়া হলেও তারা ক্যাসিনো সেলিমদের সহযোগী হয়ে উঠেছে টাকার মোহে, ক্ষমতার মোহে। পাপিয়াদের মতো মনোরঞ্জনকারীদের যদি আওয়ামী লীগ, তার অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন থেকে ছেঁটে ফেলা না হয় তা হলে ভবিষ্যৎ যে খুব অন্ধকার তা বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ইতিহাস থেকেই জানা যায়। মানুষ যেভাবে জাতীয় পার্টি বা বিএনপি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে, একইভাবে তারা আওয়ামী লীগের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে না তার গ্যারান্টি কই। আমাদের মনে রাখতে হবে যে আওয়ামী লীগের ত্যাগী কর্মী সমর্থকরাও অনেকে কিন্তু এবার নগরীর মেয়র নির্বাচনে ভোট দিতে যান নি। এত এত উন্নয়নের পরেও এটা আওয়ামী লীগের জন্য একটা বিশেষ সতর্ক বার্তা।

এদিকে গত রোববার মির্জা ফখরুল বলেছেন, ‘গণতন্ত্রের যিনি মাতা, তাঁকে কারাগারে আটক করে রাখা হয়েছে।’ তিনি মুক্তিযুদ্ধ, স্বৈরাচার-বিরোধী আন্দোলনসহ বিভিন্ন সময়ে খালেদা জিয়ার নানা ভূমিকার কথা স্মরণ করে বলেন, ‘স্বাধীনতার ৪৮ বছর পরে গণতন্ত্র ও গণতন্ত্রের মায়ের জন্য আমাদের এখানে দাঁড়াতে হয়। এ লজ্জা রাখার জায়গা নেই আমাদের। দেশনেত্রী শুধু একজন নেতা নন। তিনি এই বাংলাদেশের সত্যিকার অর্থেই গণতন্ত্রের মাতা।’ এর পরে লাইনে উনি যা বলতে গিয়েও বলতে পারেন নি তা হলো, ‘গণতন্ত্রের পিতার ছেলে আজ নির্বাসিত। তিনি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন, ‘তাঁদের আমলের মত করে পাপিয়াদের ব্যাপক বিস্তার হউক। নেশায় বুদ হয়ে ফুর্তিতে মেতে উঠুক বড় বড় আমলা, রাজনীতিক, ব্যবসায়ী সবাই। ‘করোনা ভাইরাস’এর মত পাপিয়া ভাইরাস আওয়ামী লীগের তৃনমূলে থাকা মূল দল, তার অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন ছড়িয়ে পড়ুক। যাতে করে বাংলার মানুষের মনে ভালো মন্দের বিচারের কোন সুযোগ না থাকে। বলতে না পারে যে, অমুক ভালো আর অমুক খারাপ।

 

 

সূত্র: বাংলা ইনসাইডার

এরকম আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button