গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : সারা দেশে আগামী মার্চে শুরু হতে যাওয়া উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে এবারও জোটগতভাবে না লড়ে এককভাবেই লড়বে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। বিগত জাতীয় নির্বাচনের মতো উপজেলায়ও বিপুল বিজয় নিশ্চিত করতে চায় দলটি। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে গ্রামগুলোয় শহরের মতো নাগরিক সুবিধা পৌঁছে দেওয়ার যে প্রতিশ্রুতি রয়েছে তা বাস্তবায়ন করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকবে স্থানীয় সরকারের। ফলে স্থানীয় সরকারের সব নির্বাচনকেই গুরুত্ব দিয়ে দেখছে আওয়ামী লীগ।
দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা মনে করছেন, আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে বিএনপির দলীয়ভাবে অংশগ্রহণের সম্ভাবনা কম থাকলেও স্থানীয় পর্যায়ে নেতারা ব্যক্তিগতভাবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। সে জন্য আওয়ামী লীগ জনপ্রিয় প্রার্থী বাছাইয়ে সংগঠনের তৃণমূল থেকে নাম প্রস্তাব চেয়েছে। আর দলীয় কোন্দল নিয়ন্ত্রণ ও সংগঠনে ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষায় স্থানীয় সংসদ সদস্যের নিকটাত্মীয়দের মনোনয়ন না দেওয়ার বিষয়ে নীতিগত অবস্থান নিয়েছে আওয়ামী লীগ।
সদ্য সমাপ্ত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিক্ত অভিজ্ঞতার কারণে আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত নেয়নি বাম গণতান্ত্রিক জোটভুক্ত দলগুলো।
আওয়ামী লীগের কয়েকটি সূত্রে জানা যায়, আগের কয়েকবারের মতো এবারও উপজেলা নির্বাচনে ১৪ দলের শরিক দলগুলো যে যার মতো প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। এতে বিএনপি নির্বাচনে না এলেও নির্বাচন খানিকটা প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হবে বলে মনে করছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র পদে উপনির্বাচনেও এককভাবে লড়বে আওয়ামী লীগ।
সূত্র মতে, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে এবার সংসদ সদস্যদের নিকটাত্মীয়দের বিবেচনা করা হবে না। এরই মধ্যে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে এমন বার্তা দেওয়া হয়েছে দলীয় সংসদ সদস্যদের। টানা ১০ বছরের বেশি সময় ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়ে ক্ষমতার ভারসাম্য রাখতে এই উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকায় মূল্যায়ন পাওয়া না পাওয়া নিয়েও দলের অভ্যন্তরে বিরোধ দেখা দিচ্ছে। ফলে এবারের উপজেলা নির্বাচনে একই ব্যক্তি বা পরিবারকে মূল্যায়ন না করে যোগ্য, ত্যাগী, পরিশ্রমী অন্য নেতাদেরও মূল্যায়ন করতে চায় আওয়ামী লীগ। কিছু উপজেলায় প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে দলের এমন নেতাদের মূল্যায়ন করা হবে যাঁরা বিগত সংসদ নির্বাচনে ‘ছাড়’ দিয়েছেন। যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও যেসব নেতাকে জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী করতে পারেনি আওয়ামী লীগ, তাঁদের উপজেলায় মূল্যায়ন করা হবে। আবার মহাজোটের সমীকরণে আওয়ামী লীগের যেসব যোগ্য নেতা মনোনয়নবঞ্চিত হয়েছেন তাঁদেরও মূল্যায়ন করা হবে উপজেলা নির্বাচনে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও ১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘স্থানীয় সরকারের নির্বাচনগুলো ১৪ দলের শরিকরা যে যার মতো করে করবে। এটি জোটগতভাবে হবে না।’ বিএনপির উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণের সম্ভাবনা প্রসঙ্গে নাসিম বলেন, ‘আমার মনে হয় না তারা উপজেলা নির্বাচনে আসবে। তারা না এলে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে তাদের নির্বাচনে আনার কোনো উদ্যোগ নেওয়া হবে না। যে যার মতো নির্বাচন করবে, না করলে সেটা তাদের বিষয়।’
জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘উপজেলা নির্বাচন কখনোই ১৪ দলগতভাবে হয়নি। আমরা দলীয় প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব।’
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘আমি মনে করি, প্রার্থী মনোনয়নে যোগ্যতা ও নীতি আদর্শের বিষয়ে তাঁদের আন্তরিকতা গুরুত্বপূর্ণ। তবে এমপিদের নিকটাত্মীয়দের মনোনয়ন না দেওয়ার বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ, এটিও দেখা উচিত।’
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান বলেন, ‘আওয়ামী লীগ অনেক বড় একটি পরিবার। ফলে এখানে অনেক যোগ্য প্রার্থী রয়েছেন। এ জন্য একই পরিবার থেকে বিভিন্ন নির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়াকে আমরা উৎসাহিত করতে চাই না। সংগঠনে ভারসাম্য রক্ষার জন্য এটা দরকার।’ তিনি বলেন, ‘কেন্দ্রীয় সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন করা স্থানীয় সরকারের মূল কাজ। ফলে এ নির্বাচনকে আমরা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছি।’
সূত্র: কালের কণ্ঠ