আলোচিত

ট্রেনকর্মীদের ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক হচ্ছে

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : নিরাপদ ও সাশ্রয়ী বাহন ট্রেন অনেকটাই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে। ট্রেন পরিচালনায় সংশ্লিষ্ট কর্মীদের অবহেলা কিংবা মাদকাসক্তি এবং পর্যাপ্ত তদারকির অভাবে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এর অংশ হিসেবে মাদক পরীক্ষা (ডোপ টেস্ট) বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। বিশেষ করে চালক, সহকারী চালক, পরিচালক (গার্ড) ও স্টেশনমাস্টারদের ডোপ টেস্টের ব্যাপারে নির্দেশনা আসছে।

ট্রেন দুর্ঘটনার দুটি কারণ থাকে। একটি কারিগরি, অপরটি মানবিক ভুল। মানুষের ভুল বা অবহেলাজনিত দুর্ঘটনা ঠেকাতেই ডোপ টেস্টের সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে বলা হচ্ছে।

সম্প্রতি একটি গোয়েন্দা সংস্থা তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, মানুষের ভুলের মধ্যে রয়েছে লাইন পরিবর্তনের জোড়া (পয়েন্টস) ভুলভাবে স্থাপন ও ভুল সঙ্কেত দেওয়া। এ কাজগুলো সাধারণত স্টেশনমাস্টার ও তার অধীনের ব্যক্তিরা করে থাকেন। কারিগরি ত্রুটির মধ্যে লাইনের ত্রুটি, ইঞ্জিন-কোচের ত্রুটি উল্লেখযোগ্য। কারিগরি ত্রুটি মোকাবিলায় পর্যাপ্ত বরাদ্দ ও লোকবল দেওয়া হলেও যথাযথ ব্যয় হচ্ছে না বলে প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়।

রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, ট্রেনের দুর্ঘটনা এড়াতে বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। পুরনো রেললাইন ও ব্রিজের ব্যাপক সংস্কার প্রয়োজন। আছে সিগন্যাল ফেইলিউরের সমস্যা। ৩ হাজার কিলোমিটার সিঙ্গল লাইন রয়েছে। এগুলোকে পর্যায়ক্রমে ডাবল লাইন করা হবে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় বেশকিছু উদ্যোগ ও প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। আশা করি, শিগগির এর সুফল পাওয়া যাবে।

ট্রেন পরিচালনার বিষয়ে রেলভবনে রেলমন্ত্রীর সভাপতিত্বে গত সপ্তাহে বৈঠক হয়। সেখানেও গোয়েন্দা সংস্থা এবং জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে পাঠানো সুপারিশ নিয়ে আলোচনা হয়। ওই বৈঠকে জানানো হয়, গত ৫ বছরে ৮৬৮টি দুর্ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে লাইনচ্যুতির সংখ্যা ৬৩৯টি। এসব দুর্ঘটনায় ১১৪ জন নিহত ও ২৯৮ জন আহত হয়েছেন। একই বৈঠকে জানানো হয়, গত ১১ বছরে প্রায় ৬৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করেছে রেল। জনবল নিয়োগ হয়েছে সাড়ে ১৩ হাজারের বেশি।

সংশ্লিষ্টরা জানান, রেলে অব্যবস্থাপনার দুটি কারণ। কর্মকর্তাদের একটি অংশের মনোযোগ লাভজনক উন্নয়ন প্রকল্পে। সেখানে আর্থিক সুবিধার বিষয় আছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কয়েক বছর ধরে বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি করছে মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে। রেলের সঙ্গে করা চুক্তি অনুযায়ী, প্রতিটি কর্মীকে বছরে অন্তত ৬০ ঘণ্টা প্রশিক্ষণ নেওয়ার কথা। বর্তমানে রেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে ২৫ হাজার। কিন্তু ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশের ভেতরে মাত্র ৫৭৯ জনকে প্রশিক্ষণকে দেওয়া হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে এগুলো সভা-সেমিনার ধরনের প্রশিক্ষণ। রেল পরিচালনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মীরা রানিং স্টাফ নামে পরিচিত। তাদের প্রশিক্ষণের জন্য জোর দেওয়া হচ্ছে।

রেললাইনের অবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্য রেল ডিটেক্টর মেশিন অত্যাবশ্যকীয়। অথচ এ ধরনের মেশিন নেই। রেললাইন মাঠপর্যায়ে পর্যবেক্ষণের জন্য কি-ম্যান নামে পরিচিত রেলকর্মী আছে। একেকজন কি-ম্যান দিনে ৫-৬ কিলোমিটার রেলপথ পায়ে হেঁটে পরিদর্শন করে। রেললাইনের প্রতি ইঞ্চি নিজ চোখে দেখে ত্রুটি ধরা ও তা মেরামতে মেট (মিস্ত্রি) ডাকার বিধান রয়েছে। এ ব্যবস্থা যথেষ্ট নয়। ট্রেনে ডেডম্যান প্যাডেল বলে একটা ব্যবস্থা আছে। ব্রেক কিংবা গতি বাড়ানোসহ চালকের যদি কিছু করার না থাকে, সে ক্ষেত্রে চালককে একটি নির্দিষ্ট বাটন চাপতে হয়। মূলত চালকরা ঘুমিয়ে পড়লে দুর্ঘটনা এড়াতে এ ব্যবস্থা। অধিকাংশ ট্রেনে ডেডম্যান প্যাডেল সচল নয় বলে প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে।

 

সূত্র: আমাদের সময়

এরকম আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button