৩০ টাকার মাস্ক ১২০
গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : মোহাম্মদপুরের টাউন হল মার্কেটে তখন উপচেপড়া ভিড়। বেশ কয়েকটি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের আনাগোনায় মুখর। শিশুদের আকর্ষণ করতে নানা মুখরোচক খাবারের পসরা সাজিয়ে বসেছেন দোকানিরা। এসব ভ্রাম্যমাণ মুখরোচক খাবারের দোকানের পাশাপাশি শোভা পাচ্ছে মাস্কের দোকান। ছোট শিশুদের আকর্ষণ করার জন্য আছে ডোরেমন, পাবজি, বেনটেন, ব্যাটম্যান, স্পাইডারম্যানসহ নানা কার্টুনের ছবি সংবলিত মাস্ক। দোকানগুলোতে অন্যান্য দোকানের মতোই ভিড়।
মালিহা বিনতি শব্দ, দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী। তার মুখে শোভা পাচ্ছে মাস্ক, সঙ্গে থাকা মা মরিয়ম রহমানের মুখেও মাস্ক।
তিনি বলেন, আমাদের সবসময়ই মাস্ক ব্যবহার করা উচিত। ঢাকা শহরের বায়ু কী রকম দূষিত তা আমরা জানি। আর করোনাভাইরাসের জন্যও একটু বেশি সচেতনতা।
এই দোকানগুলোতে দেখা যায়, এন্টি পলিশন মাস্কগুলো বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকায় টাকায়। এই মাস্কগুলো করোনাভাইরাস ছড়ানোর আগে বিক্রি হতো ৩০ টাকায়। কাপড়ের তৈরি মাস্ক বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকায়। যা আগের মূল্য ছিলো ১০ টাকা। ফার্মেসিতে এন্টি পলিশন মাস্ক বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকায়।
দুপুর আড়াইটার দিকে ধানমন্ডি ৩২-এ আড্ডায় মত্ত একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তাদের প্রায় সকলের মুখে মাস্ক।
রেবেকা জাহান নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, আমার শ্বাসকষ্টের সমস্যা আছে। তাই আমি সবসময় মাস্ক সঙ্গে রাখি। কিন্তু ব্যবহার করা হয়না নিয়মিত। তবে এখন ব্যবহার করছি করোনাভাইরাসের আতঙ্কের কারণে।
আরেক শিক্ষার্থী জাহিদ হোসেন বলেন, আমাদের সচেতন হওয়া প্রয়োজন। করোনাভাইরাসের ভয়ে মাস্ক যেমন পড়া উচিত। ঠিক তেমনি ধুলাবালির হাত থেকে বাঁচতেও মাস্ক ব্যবহার করা উচিত। প্রায়শইতো দেখি ঢাকা বায়ুদূষনের মাত্রায় প্রথম হয়। মাস্ক ব্যবহারের এই সচেতনতা তৈরি হয়েছে অধিকাংশের মনে।
পঙ্কজ ফার্মেসির পঙ্কজ দেবনাথ বলেন, আগে মাস্ক আসতো চীন থেকে। কিন্তু এখন আর আসছে না। আগে এক বক্স মাস্ক কিনতাম (৫০ পিচ) ১১০ থেকে ১২০ টাকায়। এরপর করোনাভাইরাসের পর থেকে আর কোন মাস্ক আসছে না।
প্রশ্নের জাবাবে তিনি বলেন, আমার মনে হয়না কোন ব্যবসায়ী মজুত করেছে। কারণ এই করোনা ছড়িয়ে পড়ার পর খুব একটা সময় হাতে পাওয়া যায়নি। তবে যাদের কাছে আগে থেকে ছিলো তারাই ব্যবসা করেছে।
৩০শে জানুয়ারি বিদেশে রপ্তানির জন্য মাস্ক বিক্রি বন্ধ করতে জরুরি নোটিশ দেয় বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) ভবন দোকান মালিক সমিতি। বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসে সৃষ্ট পরিস্থিতির কারণে ফেস মাস্ক কোনো অবস্থায় মজুত এবং বেশি মূল্যে বিক্রি করা যাবে না বলে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়।
ফেস মাস্ক চীন থেকে না আসার কারণে মিলছে না বাজারে। কিন্তু বাংলাদেশে তৈরি হওয়া এসব মাস্কের দাম কেন বৃদ্ধি পেলো? এই প্রশ্নের জবাবে পান্থপথের মাস্ক বিক্রেতা আবুল মিয়া কাপড়ের মাস্ক দেখিয়ে বলেন, এই মাস্ক আগে বিক্রি করতাম ১০ টাকা করে। কী আছে মাস্কে? একটুকরো কাপড় সেলাই করে দিছে। আমরা আগে কিনে আনতাম ৬ টাকা করে। এখন এই মাস্ক কিনে আনি ২৫ টাকা করে। আর এই মাস্কগুলো (এন্টি পলিউশন মাস্ক) কিনতে হয় ৫০ টাকা করে।
একটি অনলাইন শপের ওয়েবসাইটে দেখা যায়, উইন্টার বাইক ফেস মাস্ক ১৩০ টাকা। যা আগে ছিলো ৪৫ টাকা। পলিস্টার ঘোস্ট মাস্ক ৮৯ টাকা। পূর্বের মূল্য ৩০ টাকা। সেফটি মাস্ক ১৮০ টাকা। এটি করোনাভাইরাস আসার আগে ছিলো ৬০ টাকা। পিট্টা মাস্ক ২১০ টাকা। পূর্বের মূল্য ৯০ টাকা। এই অনলাইনে আগে ফেস মাস্ক না থাকলেও এখন রেখেছেন তারা। ফার্মেসিগুলোতে না মিললেও এই অনলাইন শপে মূল্য রাখা হচ্ছে ৭০ টাকা। যা করোনার প্রভাব আসার আগে ছিলো মাত্র ৫ টাকা।
চিকিৎসক সাব্বির রহমান বলেন, ফেস মাস্ক ব্যবহার করতে হবে নিয়ম মেনে। মাস্কের নীল অংশটি ওয়াটার প্রুফ। তাই অসুস্থ অবস্থায় নীল অংশ বাইরের দিকে রাখতে হবে। যাতে জীবাণু মাস্ক থেকে বাইরে যেতে না পারে। আর সুস্থ অবস্থায় মাস্ক পড়তে হবে সাদা অংশ বাইরে দিয়ে। আর এসব মাস্ক কোন অবস্থাতেই ২৪ ঘণ্টার বেশি ব্যবহার করা যাবে না। আর কথা বলার সময় আমরা অনেকে মাস্ক থুতনিতে নামিয়ে রাখি। এর ফলে জীবাণু শরীরের অন্য অংশে ছড়িয়ে যায়। তিনি আরো বলেন, কাপড়ের বা বিভিন্ন মাস্ক এখন বাজারে পাওয়া যায়। এই মাস্কগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। আর ধোয়া সম্ভব না হলে, হেক্সিসল ব্যবহার করা যেতে পারে।