গাজীপুর

গাজীপুরে বেপরোয়া গতির বাস ও তিন চাকার যান নিয়মিত কেড়ে নিচ্ছে মানুষের প্রাণ?

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুর অংশে বেপরোয়া গতির দূরপাল্লার বাস, যত্রতত্র তিন চাকার যান আর খানাখন্দের কারণে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। এর মধ্যে গত শনিবার এক দিনেই চারটি পৃথক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন চারজন। আহত হন অন্তত ৩০ জন। অথচ স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের দুই বছরও পেরোয়নি। ওই আন্দোলনের পর নতুন সড়ক আইন হলেও তার সুফল এখনো মিলছে না।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মহাসড়কটির আবদুল্লাহপুর থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত ১২ কিলোমিটারে খানাখন্দ আর তিন চাকার যান চলাচলে বিশৃঙ্খল অবস্থার সৃষ্টি হয়। এর বাইরে চান্দনা চৌরাস্তা থেকে পোড়াবাড়ি পর্যন্ত প্রায় ১২ কিলোমিটার সড়কে উল্টো পথে চলতে দেখা যায় ধীরগতির যানবাহনকে। এ এলাকার পর থেকে দূরপাল্লার বাসগুলোর বেপরোয়া গতিতে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে পুরো সড়ক। মুখোমুখি সংঘর্ষ বা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। এতে প্রায়ই সড়কে ঝরছে প্রাণ।

সাধারণ যাত্রী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, মূলত পুলিশের যথাযথ তদারকি বা নজরদারি না থাকায় পুরো সড়কে দেখা দিয়েছে এ বিশৃঙ্খলা। পুলিশের চোখের সামনেই আইন অমান্য করে চলছে তিন চাকার যানবাহন বা বেপরোয়া গতির যানবাহনগুলো। কিন্তু পুলিশ কোনো বাধা দিচ্ছে না বা যথাযথ আইন প্রয়োগ করছে না। এতে দুর্ঘটনাপ্রবণ হয়ে উঠছে পুরো সড়ক।

তাঁরা জানান, সড়কটিতে আবদুল্লাহপুরের পর থেকেই শুরু হয় ভোগান্তি। যত্রতত্র গাড়ি ঘোরানো, যেখানে–সেখানে যাত্রী নামিয়ে দেওয়াসহ বিভিন্ন কারণে ওই এলাকার পর বিশৃঙ্খল পুরো সড়ক। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দায়সারাভাবে কাজ করছে বলে তাঁরা অভিযোগ করেন।

২০১৮ সালের আগস্টে নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাস্তায় নেমেছিল স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। তাদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের বিভিন্ন মহল থেকে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানোর বিষয়ে বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। ২০১৯ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর নতুন সড়ক পরিবহন আইন পাস হয়। এর মধ্যে সম্প্রতি আইনটি কার্যকর হলেও বাস্তবে তার কোনো সুফলই দেখা যাচ্ছে না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে গাজীপুর বিআরটিএর সহকারী পরিচালক মো. এনায়েত হোসেন বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন সময় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে এসব বিশৃঙ্খলা কমানোর চেষ্টা করি। তবে আগামী মাস থেকে এ বিষয়ে আরও জোরালো পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

গত রোববার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, সড়কটির টঙ্গী বাজার এলাকা থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত ১২ কিলোমিটারের বিভিন্ন অংশ ভাঙা ও খানাখন্দে ভরা। রাস্তার দুই পাশে রয়েছে বড় বড় গর্ত। গাড়ি চলে হেলেদুলে, ঝুঁকি নিয়ে। এর বাইরে সড়কের ১৫-২০টি জায়গায় সড়ক বিভাজকের মাঝখানে রয়েছে কাটা। এসব কাটা বা ফাঁকা জায়গা দিয়ে যখন-তখন ইউটার্ন (ঘুরছে) নিচ্ছে বিভিন্ন যানবাহন। প্রতিবার ইউটার্নে তৈরি হচ্ছে যানজট এবং ঘটছে দুর্ঘটনা। এ ছাড়া রয়েছে যত্রতত্র যাত্রীদের নামিয়ে দেওয়ার অভিযোগ।

জানা যায়, গত ১৫ অক্টোবর সড়কের মিলগেট এলাকায় ভাড়া নিয়ে কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে রাস্তার মাঝখানে এক কলেজছাত্রকে বাস থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়। পরে পেছন থেকে আসা অন্য একটি বাসের চাপায় মারা যায় সে। এর আগে ২০১৮ সালের ২৬ নভেম্বর কলেজগেট এলাকায় ট্রাকচাপায় মারা যান বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র। ওই দিন বেলা ১১টার দিকে রাস্তা পার হওয়ার জন্য টঙ্গী পৌরসভার সামনের ইউটার্নে অবস্থান করছিলেন তিনি। এ সময় একটি কাভার্ড ভ্যান হঠাৎ ডান দিকে ইউটার্ন নিতে গেলে চাকার নিচে পড়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান নাইম হাসান নামের ওই শিক্ষার্থী।

এ ছাড়া দেখা যায়, সড়কে অবাধে চলছে তিন চাকার যান। এর মধ্যে কামারপাড়া রোড, চেরাগ আলী, টঙ্গী পৌরসভা, কলেজ গেট, গাজীপুরা ২৭, বোর্ডবাজার, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়সহ চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত যত্রতত্র চলাচল করতে দেখা গেছে রিকশা ও প্যাডলচালিত রিকশাসহ ধীরগতির অন্যান্য যান। এতে পুরো সড়কে সৃষ্টি হচ্ছে বিশৃঙ্খলা।

একই দিন চান্দনা চৌরাস্তা থেকে রাজেন্দ্রপুর পর্যন্ত সড়ক ঘুরে দেখা যায়, চান্দনা চৌরাস্তার পর থেকে পোড়াবাড়ি পর্যন্ত প্রায় ১২ কিলোমিটার সড়কের অবস্থা আরও ভয়াবহ। এই সড়কটুকুতে ধীরগতির বিভিন্ন যানবাহন চলাচল করছে ব্যাপক হারে। যানগুলোর বেশির ভাগই চলছে উল্টো পথে। এতে সমস্যা হচ্ছে অন্যান্য যানবাহনের। আর সেখান থেকে সালনা পার হতে পারলেই শুরু হয় দূরপাল্লার গাড়িগুলোর বেপরোয়া গতি। এতে প্রায়ই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ঘটে দুর্ঘটনা।

এর মধ্যে গত শনিবার সড়কটির গাজীপুর অংশে চারটি পৃথক সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান চারজন। এর মধ্যে ওই দিন সকাল ১০টার দিকে রাজেন্দ্রপুর এলাকায় একটি যাত্রীবাহী বাস একটি কাভার্ড ভ্যানকে পেছন থেকে ধাক্কা দিলে মারা যান দুজন। একই সময়ে সড়কের জৈনাবাজার এলাকায় রাস্তা পার হওয়ার সময় একটি বেপরোয়া গতির পিকআপের ধাক্কায় মারা যান একজন। এর আগে সকাল আটটার দিকে সড়কের গিলাবেরাইদ এলাকায় রাস্তা পার হওয়ার সময় একটি বাসের ধাক্কায় মারা যান একজন। এর কাছাকাছি সময়ে রাজেন্দ্রপুর এলাকায় আরেকটি দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন ময়মনসিংহের বিভাগীয় কমিশনার খন্দকার মুস্তাফিজুর রহমান।

মহাসড়কটির রাজেন্দ্রপুর পর্যন্ত দায়িত্ব গাজীপুর মহানগর পুলিশের। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মহানগর পুলিশের কমিশনার মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘বেপরোয়া গতির বিষয়টি হাইওয়ে পুলিশ দেখছে। আর তিন চাকার যানগুলোর বিরুদ্ধে সব সময় আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। তবে অল্প দূরত্বের মানুষগুলোর যাতায়াতের কারণে যানগুলো একেবারে বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না। আমরা এর একটি বিকল্প দিক চিন্তা করছি। এ ছাড়া অন্য সমস্যাগুলো নিয়েও আমরা কাজ করছি।’

যোগাযোগ করা হলে গাজীপুর হাইওয়ে পুলিশ সুপার আলী আহমদ খান বলেন, ‘বেপরোয়া গতির ব্যাপারে আমরা চালকদের মৌখিকভাবে সতর্ক করছি। তবে এখন থেকে জরিমানাও করা হবে। আর তিন চাকার যান পেলেই সব সময় ডাম্পিংয়ে দেওয়া হচ্ছে।’

 

সূত্র: প্রথম আলো

এরকম আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button