গাজীপুর

মাল্টিফ্যাবস গার্মেন্টসে নামাজ বাধ্যতামূলক করে নোটিশ জারি

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : মহানগরের কাশিমপুরের নয়াপাড়া এলাকার একটি পোশাক কারখানায় সকল কর্মকর্তা, কর্মচারীদের জন্য অফিস চলাকালীন প্রতিদিন মসজিদে গিয়ে যোহর, আসর ও মাগরিবের নামাজ পড়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

এই মাসের ৯ তারিখে জারি করা একটি নোটিশে লেখা রয়েছে, এই তিন ওয়াক্ত নামাজ পড়তে যাওয়ার সময় পাঞ্চ মেশিনে পাঞ্চ করতে হবে।

তাতে আরও লেখা রয়েছে, “যদি কোন স্টাফ মাসে সাত ওয়াক্ত পাঞ্চ করে নামাজ না পড়েন তবে সেক্ষেত্রে উক্ত ব্যক্তির বেতন হতে একদিনের সমপরিমাণ হাজিরা কর্তন করা হইবে।”

মাল্টিফ্যাবস লিমিটেড নামের ওই ফ্যাক্টরিতে এমন নোটিশ জারি করা হয়েছে।

ফ্যাক্টরিটির অপারেশন্স বিষয়ক পরিচালক মেসবাহ ফারুকী জানিয়েছেন, এটি শুধু উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের জন্য যদিও এই নোটিশের যে কপি কাছে রয়েছে তাতে লেখা, ‘সকল স্টাফ’।

কেন এই নির্দেশ
কেন এই নির্দেশ- এই প্রশ্নে মেসবাহ ফারুকী বলেন, “সবাই আমরা নামাজ পড়ি। আমরা ইসলাম ধর্মের অনুসারী, আমাদের নামাজ পড়া ফরজ। এখানে মুসলমান যারা আছে তারা সবাই নামাজ পড়ে। কিন্তু তারা নামাজ পড়ে বিক্ষিপ্তভাবে।”

তাছাড়া, তিনি আরও বলছেন, কর্মীদের মধ্যে মতভেদ-দূরত্ব কমানোর একটি উপায় হিসাবে কারখানায় নামাজ বাধ্যতামূলক করার এই সিদ্ধান্ত তিনি নিয়েছেন।

“আমাদের এখানে বিভিন্ন মতভেদের লোক আছে। এখানে একটা টিম হিসেবে কাজ করতে হয়। এখানে ফেব্রিক ডিপার্টমেন্টের সাথে নিটিং সেক্টরের হয়ত একটা সমস্যা থাকে। একেকজন একেকজনের উপর দোষারোপ সারাদিন চলতেই থাকে। তো আমি এটার সমাধান হিসেবে চিন্তা করলাম তাদের যদি একসাথে বসানো যায়, একসাথে কিছু সময় যদি তারা কাটায়, তাদের মধ্যে দূরত্বটা কমবে।”

তিনি বলছেন, তার কাছে মনে হয়েছে মসজিদ ছাড়া একসাথে বসানোর কোন পন্থা তিনি খুঁজে পাননি।

মেসবাহ ফারুকী তাদের সিদ্ধান্তের বিষয়ে স্বাস্থ্যগত একটি ব্যাখ্যাও দিয়েছেন। তিনি বলছেন, সারাদিন বসে বসে কাজ করায় কোলেস্টেরল বাড়ছে, ডায়াবেটিস বাড়ছে। “মসজিদ চারতলায় হওয়াতে কিছুটা ব্যায়ামও হচ্ছে।”

নোটিশে যেভাবে একদিনের বেতন কাটার কথা বলা হয়েছে সেয়ে তিনি বলছেন, “এ এপর্যন্ত কারোর বেতন কাটা হয়নি।”

রপ্তানির জন্য সরকারের দেয়া জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত কোম্পানিটির ওয়েবসাইটে দেয়া তথ্য অনুযায়ী জাপান, রাশিয়া ও আমেরিকা অঞ্চলের বেশ কিছু দেশে তাদের ব্যবসা। ২০১৬ সালে তাদের রপ্তানি আয় ছিল ৯০ মিলিয়ন ডলার।

মূলত গেঞ্জি কাপড়ের নানা ডিজাইনের পোশাক তৈরি হয় এখানে। প্রতি মাসে তাদের রপ্তানি ১৮ লাখ পিস পোশাক।

মেসবাহ ফারুকী বলছেন, বিষয়টি তাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার, তারা অন্য কোন ধর্মাবলম্বীকে নামাজ পড়তে বাধ্য করছেন না।

কী বলছে সরকার
তবে এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে এ ধরণের নির্দেশনাকে দেশের সংবিধান বিরোধী বলে মন্তব্য করেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি বলেছেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।

তিনি বলেছেন, “বাংলাদেশের আইন কেন সংবিধানেই তো বলা আছে ধর্ম কারো উপর চাপিয়ে দেয়া যাবে না। কোন আইন দিয়েই এটা বাধ্যবাধকতা দেয়া যায় না। ইসলাম ধর্মও বলে না কারো উপরে ধর্ম চাপিয়ে দেয়া যাবে। আপনি যেমনটি বলছেন, তেমনটি হলে তো এটা খতিয়ে দেখতে হবে।”

গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফোরামের সভাপতি মোশরেফা মিশু বলছেন, কর্মীদের বাধ্যতামূলক নামাজ পড়ানোর ঘটনা বিদেশী ক্রেতাদের মধ্যে বাংলাদেশ সম্পর্কে নেতিবাচক ইমেজ তৈরি করতে পারে।

“বাংলাদেশে পোশাক শিল্পে অনেক সমস্যা থাকার পরেও ক্রেতারা এখনো মুখ ফিরিয়ে নেয়নি। তাজরিন ও রানা প্লাজায় ঘটে যাওয়া ভয়াবহ ঘটনার আগে বিদেশি ক্রেতাদেরও এতকিছু জানা ছিল না। কিন্তু কারখানার ভেতরে এরকম আইন যদি তারা করেন, তাহলে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। বাংলাদেশ একটি সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত হবে।”

 

 

সূত্র: বিবিসি

এরকম আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button