আওয়ামী লীগের কমিটিতে থাকতে নির্ধারণ ৫ যোগ্যতা, দায়িত্বে গোয়েন্দা সংস্থা
গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : আওয়ামী লীগ ঢাকা মহানগরের দুই কমিটি এবং অঙ্গসহযোগী ও ভাতৃপ্রতীম সংগঠনের কমিটি গঠনের কাজ শুরু করেছে। আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে যে, মুজিববর্ষ শুরুর আগেই অর্থাৎ এই ১৭ মার্চের আগেই এই কমিটিগুলো গঠন করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কমিটিতে যারা থাকতে ইচ্ছুক, তাদের নামের তালিকা ইতিমধ্যে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার কাছে দেওয়া হয়েছে তাদের খোঁজখবর নেওয়ার জন্য।
আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে যে, বিগত সময়ে যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ বিভিন্ন অঙ্গসহযোগী সংগঠনগুলোর নেতৃত্বের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছিল। এজন্য এবার কমিটি গঠনের অনেক সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের একজন নেতা বলেছেন, ওবায়দুল কাদের অসুস্থ না হলে ইতিমধ্যে কমিটি গঠনের কাজ আরো এগিয়ে যেত। এখন সাধারণ সম্পাদককে বাদ দিয়েই কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া চলছে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই এই কমিটি গঠনের প্রক্রিয়াগুলো তদারকি করছেন বলে বিভিন্ন দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে। আওয়ামী লীগের একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেছেন যে, এবার কোনো কমিটিতেই বিতর্কিত কাউকে রাখা হবে না। কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে যে ৫টি যোগ্যতা নির্ধারণ করা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে-
১. ক্যাসিনো বাণিজ্য, মাদক, টেন্ডারবাজি থেকে মুক্ত:
আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগরীর দুই কমিটিতে এবং অঙ্গ সহযোগি ও ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনের কমিটিতে থাকতে গেলে তাদেরকে অবশ্যই ক্যাসিনো, মাদক ব্যবসা বা টেন্ডারবাজীর অভিযোগ থেকে মুক্ত রাখতে হবে। যারা এ ধরণের অভিযোগে অভিযুক্ত বা যাদের বিরুদ্ধে এই ধরণের অভিযোগের তদন্ত চলছে বা যারা গ্রেপ্তার হয়েছেন, যাদের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে তাদেরকে এইসব কমিটিতে রাখা হবে না।
২. অন্যদল থেকে আসা নয়:
২০০৯ সাল থেকে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় রয়েছে। এই দীর্ঘ ১১ বছরের বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় থাকার কারণে বিভিন্ন দল থেকে, বিশেষ করে বিএনপি জামাত থেকে অনেক অনুপ্রবেশ ঘটেছে। এরাই বিভিন্ন অঙ্গ সহযোগি সংগঠনে প্রবেশ করে দলের বদনাম করছেন বলে আওয়ামী লীগের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে। এজন্যই এবার কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে যারা অন্য দল থেকে এসেছে তাদেরকে বাদ দেওয়া হবে। আওয়ামী লীগ থেকে যাদের রাজনীতির শুরু এবং শেষ তাদেরকেই এই কমিটিতে রাখা হবে।
৩. দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেনি:
এটা নিশ্চিত যে যারা বিভিন্ন সময় বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে ছিলেন, তারা কমিটিতে থাকছেন না। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি ঠিকই, কিন্তু যারা নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে কাজ করেছেন তাদেরকে দলীয় কোন কমিটিতে না রাখার ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে আছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে যারা বিভিন্ন সময় কাজ করেছেন, বিশেষ করে নির্বাচনে কাজ করেছেন তাদেরকে এবার কমিটিতে রাখা হবে না।
৪. ওয়ান ইলেভেন ও ২১ আগস্টের ভূমিকা
এবার আওয়ামী লীগে থাকা উত্তর দক্ষিণ এবং সারাদেশের কমিটির ক্ষেত্রে ওয়ান ইলেভেনের এবং ২১ আগস্টের ভূমিকাটাকে বড় করে বিবেচনা করা হবে। বিশেষ করে যারা ঐ সময় দল এবং দলের প্রধান নেতা শেখ হাসিনার পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছিলেন। কিন্তু গত ১১ বছর তেমন কোনো কিছু পাননি তাদের এবার প্রধান্য দেওয়া হবে বলে দলের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
এছাড়া ২১শে আগস্টের গ্রেনেড হামলায় যারা আহত বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন তাদেরকেও এবারের কমিটিগুলোতে প্রাধান্য দেওয়া হবে বলে আওয়ামী লীগের সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে।
৫. পারিবারিক পরিচিতি
শুধু নিজে আওয়ামী লীগ করলেই হবে না পরিবারের অন্যান্যদের অবস্থানও তদন্ত এবং অনুসন্ধান করা হবে। অনেকেই দেখা গেছে পরিবারের একজন আওয়ামী লীগ করে কিন্তু তার পরিবার বা নিকট আত্মীয়ের মধ্যে কেউ বিএনপি বা জামাতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এ ধরনের ব্যক্তিরা কমিটিতে অগ্রাধিকার পাবেন না। যারা পারিবারিক ভাবে আওয়ামী লীগ করে এবং পারিবারিক ঐতিহ্য রয়েছে আওয়ামী লীগ করার তারাই কমিটি গঠন করার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন।
আর এই বিষয়গুলো যাচাই বাছাই শেষে আওয়ামী লীগের অঙ্গ সহযোগী এবং ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর কমিটি এবং ঢাকা মহানগর উত্তর এবং দক্ষিণে কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হবে বলে আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে।
সূত্র: বাংলা ইনসাইডার