পুলিশ বলছে ‘বন্দুকযুদ্ধ’, স্বজনদের অভিযোগ টঙ্গী থেকে ধরে নিয়ে হত্যা!
গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : রাজধানীর খিলক্ষেতে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত দুই যুবক শাহিন ও নাজমুল বিশ্ববিদ্যালয়ছাত্র মিজানুর রহমানকে খুনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে দাবি করছে পুলিশ।
তবে নিহতদের স্বজনদের দাবি, পুলিশের সঙ্গে শাহিন ও নাজমুলের কোনো বন্দুকযুদ্ধ হয়নি। ১৫ দিন আগে টঙ্গী থেকে পুলিশ তাঁদের ধরে নিয়ে আটকে রাখে। পরে তাঁদের গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার ভোরে খিলক্ষেতের ডুমনি আহাবপাড়ায় হাতিরঝিল থানা-পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন তাঁরা।
শুক্রবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে গিয়ে স্বজনেরা নিহত শাহিন ও নাজমুলের লাশ শনাক্ত করেন। শাহিনের ভাই বাচ্চু মিয়া বলেন, শাহিন পাখির ব্যবসা করতেন। তাঁর বিরুদ্ধে কোনো মামলা ছিল না। ১৫ দিন আগে টঙ্গীর হোন্ডা রোডের পাখির দোকান থেকে সাদা পোশাকের লোকেরা শাহীনকে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়। এর ভিডিওচিত্রও তাঁদের কাছে আছে। ডিবি অফিসসহ বিভিন্ন স্থানে খোঁজ করেও তাঁর সন্ধান পাননি। পত্রিকায় খবর দেখে আজ মর্গে এসে লাশ শনাক্ত করেছেন। বাচ্চু মিয়া অভিযোগ করে বলেন, বন্দুকযুদ্ধের নামে শাহীনকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। তাঁর শরীরের পাঁচ জায়গায় গুলি করা হয়েছে।
আরেক নিহত নাজমুল সপরিবারে টঙ্গীর গাজীপুরায় থাকতেন।
নাজমুল হুদার মা নাজমা বেগম সাংবাদিকদের বলেন, নাজমুল লেগুনা চালাতেন। ১৩ জানুয়ারি সাদা পোশাকে এসে তাঁকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর বিভিন্ন স্থানে খোঁজ করেও সন্ধান পাওয়া যায়নি। তিনি দাবি করেন, এত দিন আটকে রাখার পর পুলিশ নাজমুলকে গুলি করে হত্যা করেছে।
তবে পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার বিপ্লব বিজয় তালুকদার বলেছেন, নাজমুল ও শাহীন ছিনতাইকারী। তাঁরা কিছুদিন আগে কারওয়ান বাজারসংলগ্ন উড়ালসড়কে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মিজানুর রহমানকে যাত্রী হিসেবে অটোরিকশায় তুলে টাকা ও মুঠোফোন ছিনিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে হত্যা করে লাশ উড়ালসড়কে ফেলে দেন। মিজানুর ছাড়াও আরও তিনজনকে একই কায়দায় হত্যা করেন তাঁরা। এসব ঘটনায় গ্রেপ্তার তিন ছিনতাইকারীর জবানবন্দিতে নাজমুল ও শাহীনের নাম আসে।
পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, গত বুধবার ছিনতাইকারীদের সিএনজিচালিত অটোরিকশা ভাড়া দেওয়া জীবন মিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ জানতে পারে, বুধবার মধ্যরাতে নাজমুল ও শাহিন অটোরিকশা নিয়ে ছিনতাইয়ে বের হন। তাঁরা খিলক্ষেতের ডুমনি আহাবপাড়াসংলগ্ন (পূর্বাচল) ৩০০ ফুট সড়ক ও ফায়ার সার্ভিসের মাঝামাঝি স্থান দিয়ে অতিক্রম করছিলেন। রাত পৌনে চারটার দিকে নিরাপত্তা চৌকি এলাকায় হাতিরঝিল থানা-পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি চালান তাঁরা। পুলিশও পাল্টা গুলি চালালে নাজমুল ও শাহীন গুলিবিদ্ধ হন। তাঁদের উদ্ধার করে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁদের মৃত ঘোষণা করেন। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ছিনতাইয়ে ব্যবহৃত সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও একটি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করে। তাঁদের বিরুদ্ধে হাতিরঝিল থানায় দুটি এবং খিলক্ষেত ও ভাটারা থানায় একটি করে মামলা রয়েছে।
৬ জানুয়ারি ভোরে পুলিশ রাজধানীর কারওয়ান বাজারসংলগ্ন উড়ালসড়কের ওপরে অজ্ঞাতনামা হিসেবে বেসরকারি এশিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মিজানুর রহমানের গলায় ফাঁস লাগানো লাশ উদ্ধার করে। পকেটে থাকা এটিএম কার্ডের সূত্র ধরে মিজানুরের পরিচয় জানতে পারে পুলিশ।
সূত্র: প্রথম আলো