নির্বাচনের আগে পুলিশের অভিযান, পাল্টাপাল্টি অভিযোগ
গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : ঢাকার দু’টি সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আগ মুহুর্তে বহিরাগতদের বিরুদ্ধে পুলিশ র্যাবের বিশেষ অভিযান নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বিরোধীদল বিএনপি।
নির্বাচন কমিশনে ক্ষোভের কথা তুলে ধরে দলটির নেতারা বলেছেন, এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিরোধী নেতা-কর্মীদের টার্গেট করে এমন অভিযান চালানো হচ্ছে।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
দুই দলই একে অপরের বিরুদ্ধে ঢাকায় সন্ত্রাসীদের জড়ো করার অভিযোগ তোলায় তা নিয়ে আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
আইন শঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গত কয়েকদিনে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে রাজধানীতে আসা লোকজনকে ঢাকায় অবস্থান না করার পরামর্শ দিয়েছে।
হঠাৎ করেই আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গত বুধবার ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়েছে।
ঢাকায় ভোটার নন, কিন্তু গত কিছুদিনের মাঝে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে এসেছেন, তাদের বহিরাগত হিসেবে উল্লেখ করে এই অভিযান অব্যাহত রাখার কথা বলা হয়েছে।
বিএনপির অভিযোগ
বিএনপি অভিযোগ করেছে, প্রথমদিনের অভিযানেই দেড়শ জনের মতো আটক করা হয়েছে, তাদের অনেকেই বিএনপির নেতা কর্মী।
দলটির একটি প্রতিনিধি দল প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সাথে দেখা করে এই অভিযান নিয়ে তাদের ক্ষোভের কথা তুলে ধরেছে।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সরকারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত থেকে বিএনপি নেতা কর্মিদের টার্গেট করে এই অভিযান চালানো হচ্ছে বলে তারা মনে করছেন।
“এটা সম্পূর্ণ তাদের অপকৌশল। তাদের মতো করে পুলিশ অভিযান চালাবে। আমাদের নেতাকর্মিদের মনোবল ভেঙ্গে দেবে। ইতিমধ্যেই গত রাতে ঢাকায় আমাদের যাদের বাসা, তাদের অনেকের বাড়িতে বাড়িতে পুলিশ গেছে। অনেককে গ্রেফতার করেছে। অনেকে বাসায় থাকছেন না।”
“নির্বাচন কমিশন ক্ষমতাসীনদের সহযোগিতা করছে। এই নির্বাচনকে ২০১৮ সালের মতো প্রহসনের নির্বাচনে পরিণত করছে। তারা একেবারে দলীয় নিয়ন্ত্রণে নিচ্ছে সবকিছু।”
মি: আলমগীর অভিযোগ করেছেন, “আওয়ামী লীগ সারাদেশ থেকে অনেক লোক ঢাকায় এনেছে।”
আওয়ামী লীগের পাল্টা অভিযাোগ
সরকার বা আওয়ামী লীগের নেতারা এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ বলেছেন, নির্বাচনের আগে এ ধরণের অভিযান হয়ে থাকে।সেই অভিযান নিয়ে বিএনপির প্রশ্ন তোলার পিছনে রাজনৈতিক চিন্তা রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেছেন।
“অন্যান্য নির্বাচনের মতো এই নির্বাচনেও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বহিরাগতদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর ঘোষণা দিয়েছে। এটা সব দলের জন্যই প্রযোজ্য। কিন্তু বিএনপি এনিয়ে কেন প্রশ্ন তুলেছে বা আতংকিত হচ্ছে? ধরে নেয়া যায় বিএনপি বিভিন্ন জেলা থেকে তাদের ক্যাডার এবং নেতাকর্মিদের ঢাকায় এনেছে। যাদেরকে দিয়ে ভোট কেন্দ্রকে প্রভাবিত করতে চায় বা দখল করতে চায়। তাদের এমন ষড়যন্ত্র বানচাল হতে পারে, সেজন্যই তারা এসব প্রশ্ন তুলছে।”
আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির সিনিয়র নেতারা কয়েকদিন ধরেই ঢাকায় সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের জড়ো করার পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করছেন। এমন অভিযোগ পাল্টা অভিযোগের কারণে উত্তেজনা ছড়াচ্ছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।
তবে প্রধান দুই দলেরই অনেক নেতাকর্মির সাথে কথা বলে মনে হয়েছে, উভয়েরই নেতা কর্মিরা দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ঢাকায় এসে তাদের স্ব স্ব দলের প্রার্থীর প্রচারণায় অংশ নিয়েছিলেন।
এমন প্রেক্ষাপটে বিশেষ অভিযান চালানো হলে তাতে বিরোধী দলের অনেক নেতাকর্মির বাসায় হানা দেয়ার অভিযোগ তোলা হয়েছে।
রাজনৈতিকভাবে কাউকে গ্রেফতারের অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার শফিকুল ইসলাম।
তিনি অভিযান সম্পর্কে বলছিলেন, “হোটেলগুলোতে এবং কিছু মেসে আমরা অভিযান চালাচ্ছি। আমরা কিছু মানুষের কাছ থেকে ফোন পাচ্ছি যে, হঠাৎ করে অপরিচিত অনেক লোক এই বাসায় উঠছে, তখন সেখানে আমরা তাদের সাথে কথা বলছি। অনেকে ঢাকায় বসবাস করেন, কিন্তু এখানকার ভোটার না। তাদের কোনো সমস্যা নাই।”
তিনি আরও বলেছেন, “যিনি ঢাকার ভোটার নন, আবার এখানে বসবাসও করেন না। তারা দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে এসেছেন দলের প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচারণার জন্য। যেহেতু প্রচারণা শেষ হয়ে গেছে, সুতরাং আমরা তাদের বলবো, তারা যেনো ভোটকেন্দ্র এলাকায় না যান। অথবা তারা যেনো কোনো সভা সমাবেশে না যান।এটা আমরা তাদের সতর্ক করে দেবো। আমরা তাদের গ্রেফতার করছি না।”
কিন্তু এই অভিযানে নিরীহ মানুষ হয়রানির মুখে পড়ছে, এমন অভিযোগও উঠছে। একজন নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানমের বক্তব্য হচ্ছে, তারা এই সিটি নির্বাচন নিয়ে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করছেন।
তিনি বলছিলেন, “ঢাকা শহরতো বাংলাদেশের রাজধানী। এখানে অনেক মানুষ প্রতিদিন অফিশিয়ালসহ নানান কাজে এসে থাকেন। ফলে নির্বাচন কমিশন থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে যে, বহিরাগত অন্য কোনো উদ্দেশে এসেছে কিনা-তা অবশ্যই আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দেখতে পারে। কিন্তু নিরীহ বা সাথারণ মানুষ যেনো হয়রানির শিকার না হয়।”
আওয়ামী লীগের নেতাদের অনেকে মনে করছেন, বিএনপি জেলা উপজেলা থেকে নেতা কর্মিদের ঢাকায় এনেছে এবং তারা ভোটের দিনে ভোটকেন্দ্রে তাদের জমায়েত করে কোনো একটা রাজনৈতিক পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করতে পারে।
বিএনপির নেতাদেরও অনেকে ভাবছেন, আওয়ামী লীগ তাদের নেতাকর্মি বা জমায়েত দিয়ে ভোটকেন্দ্রগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে রাখতে পারে।
দু’পক্ষই বক্তব্যেও এসব প্রকাশ করছেন। ফলে তাদের মাঝে এক ধরণের উত্তেজনা থাকছে।