আলোচিত

নদী দখল ও দূষণকারীদের অন্তত পাঁচ দিনের জন্য হলেও কারাগারে পাঠাতে হবে

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : নদ-নদী দখল ও দূষণ রোধে সরকারের প্রতিষ্ঠান ও দপ্তরগুলো আইনের প্রয়োগ করে না বলেই দেশের নদ-নদী বিপন্ন হতে চলেছে। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের একার পক্ষে এ অবস্থার পরিবর্তন সম্ভব নয়। এ জন্য দরকার দৃঢ় রাজনৈতিক সদিচ্ছা।

মঙ্গলবার দুপুরে নয়াপল্টনে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় এমন মত দিয়েছেন বিশিষ্টজনেরা।

তবে কমিশন বলছে, নদ-নদী রক্ষায় সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছা আছে। কিন্তু দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থার মধ্যে কিছু কীট আছে, যারা নদ-নদী দখল ও দূষণ করছে। এই দখল ও দূষণকারীদের শুধু জরিমানা না করে অন্তত পাঁচ দিনের জন্য হলেও কারাগারে পাঠাতে হবে।

কমিশনের ২০১৮ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে নদী রক্ষায় দেওয়া সুপারিশগুলো বিশিষ্টজনদের জানাতে এবং সুপারিশগুলো প্রয়োগ ও বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তাঁদের পরামর্শ নিতেই সভাটির আয়োজন করা হয়।

এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ১ জুলাই হাইকোর্ট নদী দখল ও দূষণকে ফৌজদারি অপরাধ গণ্য করে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেন। এতে দেশের সব নদ–নদীকে জীবন্ত সত্তা এবং এগুলো রক্ষায় জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনকে আইনগত অভিভাবক ঘোষণা করা হয়। এরপর গত সেপ্টেম্বরে সারা দেশে নদ-নদী দখলদারদের তালিকা প্রকাশ করে কমিশন। তালিকায় ৪৯ হাজার ১৬২ জনের নাম আছে। এসব দখলদারের বেশির ভাগকেই এখনো উচ্ছেদ করা হয়নি। কমিশন বলছে, এক বছরের ‘ক্রাশ প্রোগ্রামের’ মাধ্যমে সব দখলদার উচ্ছেদ করতে জেলা প্রশাসনকে বলা হয়েছে। কিন্তু কারিগরি ও আর্থিক সমস্যার কারণে তা হয়নি। এ জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় ও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের কাছে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ চেয়েছে কমিশন। কমিশন টাকা পেলে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে উচ্ছেদ করে নদী দখলমুক্ত করতে পারবে।

তবে বাস্তবতা হচ্ছে জেলা প্রশাসনসহ দেশের নদ–নদী দখল ও দূষণ রোধের দায়িত্বে থাকা সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর চোখের সামনেই দীর্ঘ সময় ধরে এই দখলগুলো হয়েছে। গতকালের সভায় জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান হাওলাদারও জানান, এই প্রতিষ্ঠানগুলো আইনের বাস্তবায়ন না করাই নদী রক্ষার ক্ষেত্রে মূল চ্যালেঞ্জ।

সভায় জানানো হয়, নদী রক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে আছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড, পরিবেশ অধিদপ্তর, শিল্প মন্ত্রণালয়, ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর এবং জেলা প্রশাসন।

মুজিবুর রহমান হাওলাদার বলেন, নদী রক্ষায় উচ্চ আদালত যে আদেশগুলো দিয়েছেন, সেগুলো আইনের অংশ, অলঙ্ঘনীয়। সেটিকে অবজ্ঞা করে চলেছেন নদী রক্ষার দায়িত্বে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলো।

সভার শুরুতে দুটি ভিডিও চিত্রের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন নদ-নদী দখল ও দূষণের চিত্র তুলে ধরা হয়।

নদ-নদী রক্ষায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সদিচ্ছা আছে উল্লেখ করে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের সভাপতি ও মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল বলেন, ‘এই সদিচ্ছা বাস্তবায়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী যাঁদের ওপর নির্ভরশীল, তাঁরা কতখানি দায়িত্ব পালন করছেন এবং না করলে তার জবাবদিহি প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাচ্ছে কি না, সে ব্যাপারে আমরা প্রশ্ন তুলতে বাধ্য হচ্ছি।’

সভায় গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধূরী বলেন, নদীদূষণ বন্ধ করতে পারলে সেটি হবে মুজিব জন্মশতবর্ষে বঙ্গবন্ধুর প্রতি সবচেয়ে বড় শ্রদ্ধার্ঘ্য।

লেখক ও কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, ডিসিদের সাহায্য ছাড়া কিছু করা যাবে না, কিন্তু ডিসিদের রক্ষা করবে কে? বিষয়টির সঙ্গে সাংসদ, উপজেলা চেয়ারম্যানও জড়িত। সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছাড়া নদী কমিশন একা কিছুই করতে পারবে না।

এর জবাবে কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, ‘রাজনৈতিক সদিচ্ছা নেই, এটি আমরা বলব না। গভীর রাজনৈতিক সদিচ্ছা আছে। কিন্তু এই রাজনৈতিক পদ্ধতির মধ্যে কিছু কীট আছে। কীটগুলো নিজেরা, তাদের আত্মীয়স্বজন নদ-নদী দখল করেছে। প্রধানমন্ত্রীসহ অনেক মন্ত্রীই চান নদ-নদী রক্ষা করা হোক।’

সভায় বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বালু ও পাথর মহালের কারণে নদীগুলো মরে যাচ্ছে উল্লেখ করে এটি নিয়ন্ত্রণে নদী রক্ষা কমিশনকে ভূমিকা রাখার সুপারিশ করেন।

কমিশনের সর্বক্ষণিক সদস্য মো. আলাউদ্দিনের সঞ্চালনায় সভায় জয়েন্ট রিভার কমিশন বাংলাদেশের সাবেক সদস্য মীর সাজ্জাদ হোসেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক মহাপরিচালক এ এইচ মোজাদ্দেদ আল ফারুক, বাংলাদেশ নদী বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি আনোয়ার সাদাত, বুয়েটের অধ্যাপক মুশফিক সালেহীন, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল, পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের চেয়ারম্যান আবু নাসের খান প্রমুখ বক্তব্য দেন।

এরকম আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button