বেড়েই চলেছে পুলিশি হেফাজতে মৃত্যু
গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংগঠনগুলোর সমালোচনার পরও বাংলাদেশে বিচার বর্হিভূত হত্যাকাণ্ড এবং আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনা কমছে না। তবে এক্ষেত্রে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হয় বলে দাবি করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
গত ১৯ জানুয়ারি রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার হাজতে আবু বক্কর সিদ্দিক বাবু (৩৫) নামে একজনের মৃত্যু হয়। বাবু বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএফডিসি) ফ্লোর ইনচার্জ হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
পুলিশের দাবি তিনি হাজতের গ্রিলের সঙ্গে চাদর পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। তবে তা মানতে নারাজ নিহত বাবুর সহকর্মীরা। বিচার চেয়ে তারা বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন। ঘটনাটি তদন্তে পুলিশের পক্ষ থেকে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
ঢাকা মেট্টোপলিটন পুলিশের কমিশনার মুহা. শফিকুল ইসলাম বলেছেন, ‘‘আমরা বলেছি, হেফাজতে মৃত্যুর দায় পুলিশ এড়াতে পারে না। আমরা সবগুলো ঘটনার তদন্ত করছি, অবশ্যই দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা হবে।”
আইন শৃঙ্খলা বাহিনী গ্রেপ্তার বা আটক করার পর হাজতে আসামি বা আটককৃত ব্যক্তির মৃত্যুর ঘটনা নতুন নয়। এই সংখ্যা প্রতিবছরই বাড়ছে।
মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র জানিয়েছে, ২০১৯ সালে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে মোট ১৮ জন মারা গেছেন৷ ২০১৮ সালে ১৭ জন ও ২০১৭ সালে ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছিল।
শুধু হেফাজতে বা হাজতে মৃত্যু নয় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর দাবি করা ক্রসফায়ার, বন্দুকযুদ্ধ, গুলিবিনিময়, এনকাউন্টারেও বছর বছর প্রাণ হারাচ্ছেন শতাধিক মানুষ৷ আইন ও সালিশ কেন্দ্রের হিসাবে, ২০১৯ সালে গ্রেফতারের আগে ‘ক্রসফায়ারেই’ মারা গেছেন ২৬৭ জন। এর মধ্যে পুলিশের হাতে ১২৯ জন ও র্যাবের হাতে মৃত্যু হয়েছে ৯৭ জনের। কোস্টগার্ড ও বিজিবির হাতে মারা গেছেন ৪৫ জন। ৮৯ জন ক্রসফায়ারের শিকার হয়েছেন গ্রেফতারের পরে। ২০১৮ সালে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ক্রসফায়ার, বন্দুকযুদ্ধ, গুলিবিনিময়, এনকাউন্টার এবং হেফাজতে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ৪৬৬। ২০১৭ সালে নিহত হয়েছেন ১৬২ জন।
এই ধরনের মৃত্যু কেন বন্ধ হচ্ছে না এই প্রশ্নের জবাবে, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান বলেন, ‘‘আমাদের বিচার ব্যবস্থার মাধ্যমে অপরাধীদের বিচার করা যাচ্ছে না। এই ধরনের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ার কারণে এটা বাড়ছে। তবে বর্তমান পুলিশ কমিশনার সদ্য একটা কথা বলেছেন, যেটা আমাদের খানিকটা আশ্বস্ত করে। তিনি বলেছেন, হেফাজতে মৃত্যুর দায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কোনভাবেই এড়াতে পারে না। এর আগে কোন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা এমন কথা বলেননি।’’
আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর নির্যাতনের প্রতিরোধে একটি আইন ২০১৩ সালে প্রণয়ন করা হলেও, এর প্রয়োগ নেই বললেই চলে। নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন ২০১৩ অনুযায়ী কেউ নির্যাতনের শিকার হলে আদালতে অভিযোগ করতে পারেন। শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন প্রমাণিত হলে শাস্তি হিসেবে ন্যূনতম ৫ বছরের কারাদণ্ড অথবা ৫০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। এছাড়া নির্যাতনের ফলে মৃত্যু হলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড অথবা অর্থদণ্ড হতে পারে।
কিন্তু এইসব ক্ষেত্রে যারা বিচার চান তারা আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতা ও সুরক্ষা পান না বলে অভিযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক শীপা হাফিজা বলেন, ‘‘পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনে মৃত্যুর ঘটনায় যারা বিচার চাচ্ছেন, সরকারের উচিত তাদেরকে আইনি সুরক্ষা দেওয়া। আমাদের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী যে কাজটুকু তাদের করার কথা, সেই কাজটুকু যেন করেন। কেন তারা আগ বাড়িয়ে মানুষকে মেরে ফেলার মত ঘটনা ঘটাবেন? এ কাজটুকু কিন্তু অত্যন্ত মানবাধিকার লঙ্ঘনের কাজ হয়েছে। যারা এর বিচার চাইছেন, তাদেরকে সরকার যেন যথাযথ সুরক্ষা দেন। আমরা চাইলেও তারা আমাদের সহযোগিতা করেন না।’’
আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনা প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, ‘‘যে ঘটনাগুলো ঘটে আমরা সবগুলো ঘটনারই তদন্ত করে ব্যবস্থা নেই। তবে কতগুলো ঘটনায় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে সেই সংখ্যাটি এখনই বলা সম্ভব নয়।’’
সূত্র: ডয়চে ভেলে