বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

‘ড্রোন নিবন্ধন ও উড্ডয়ন নীতিমালা-২০১৯’ চূড়ান্ত

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : ‘ড্রোন নিবন্ধন ও উড্ডয়ন নীতিমালা-২০১৯’ চূড়ান্ত করেছে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়। নীতিমালা অনুযায়ী যে কোনো শ্রেণির ড্রোন আকাশে উড্ডয়নের আগে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনকে লিখিতভাবে অবহিত করতে হবে। অনুমতি ছাড়া কেউ আকাশে ড্রোন উড়ালে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে প্রচলিত আইন অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা। যে কোনো স্থানে ভিভিআইপি মুভমেন্টের ৩ ঘণ্টা আগে থেকে শেষ না হওয়া পর্যন্ত সব ধরনের ড্রোন উড্ডয়ন বন্ধ রাখতে হবে। ড্রোন আমদানির আগে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ছাড়পত্র নিতে হবে সংশ্লিষ্ট আমদানিকারককে।

অন্যদিকে যারা ড্রোন পরিচালনা করবে তাদের কমপক্ষে এসএসসি বা সমমানের পাস হতে হবে। এ ছাড়া বয়স সর্বনিম্ন ১৮ বছর হতে হবে। ড্রোন আমদানি ও ব্যবহারে নীতিমালায় ১৭টি শর্ত দেওয়া হয়েছে। এই শর্তগুলো মেনেই ড্রোন আমদানি ও ব্যবহার করতে হবে। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মহিবুল হক গতকাল আমাদের সময়কে বলেন, আমরা নীতিমালাটি চূড়ান্ত করেছি। এখন চূড়ান্ত নীতিমালাটি সংশ্লিষ্টদের কাছে পাঠানো হবে। শিগগিরই তা প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করা হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।

নীতিমালায় বলা হয়েছে, নীতিমালার শর্ত ভেঙে অথবা বেবিচকের (বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ) পূর্বানুমতি ছাড়া ড্রোন উড্ডয়ন করা হলে পুলিশ স্ব-উদ্যোগে অথবা পুলিশের সহযোগিতায় বেবিচক অথবা অন্য যে কোনো আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ড্রোন উড্ডয়ন বন্ধ করতে পারবে। পাশাপাশি উড্ডয়নকারী সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারবে। এ ছাড়া অনুমতি ছাড়া ড্রোন উড্ডয়নের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা/গোপনীয়তা, জননিরাপত্তা, ব্যক্তিগত নিরাপত্তা/গোপনীয়তা এবং বিমান চলাচলের নিরাপত্তায় ব্যাঘাত সৃষ্টি করলে সুরক্ষা ভঙ্গকারী অপারেটর/ নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ দেশের প্রচলিত আইনে শাস্তিযোগ্য হবেন।

ড্রোন উড্ডয়নের কারণে জনসাধারণ ও প্রাণীর জীবন, জনসাধারণের সম্পত্তি ও গোপনীয়তা এবং রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা ও সম্পত্তির ক্ষয়-ক্ষতির অভিযোগে দেশের প্রচলিত আইনে দায়ী ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠান বিচারযোগ্য এবং দণ্ডনীয় হবেন। এ ছাড়া আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য থাকবে।

নীতিমালায় বলা হয়েছে, খোলা স্থানে ড্রোন উড্ডয়নের পূর্বে অপারেটরকে ওই এলাকার ৫ কিলোমিটারের মধ্যে কোনো ভিভিআইপি মুভমেন্ট রয়েছে কিনা এ বিষয়টি নিজ দায়িত্বে জানতে হবে। ভিভিআইপি মুভমেন্টের ৩ ঘণ্টা আগে থেকে ভিভিআইপি মুভমেন্ট শেষ না হওয়া পর্যন্ত সব ধরনের ড্রোন উড্ডয়ন বন্ধ রাখবে। তবে বিশেষ প্রয়োজনে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন ও এসএসএফের সঙ্গে সমন্বয় করে ড্রোন উড্ডয়ন করতে পারবে।

যে কোনো খোলা স্থানে সভা/সমাবেশ ও জাতীয়/আন্তর্জাতিক খেলা/ইভেন্ট চলাকালীন উক্ত স্থানের ৫ কিলোমিটারের মধ্যে শুধু উক্ত সভা/সমাবেশ ও জাতীয়/আন্তর্জাতিক খেলা/ইভেন্টের জন্য বেবিচকের অনুমোদিত ড্রোন ব্যতীত অন্য কোনো ড্রোন উড্ডয়ন করা যাবে না।

বিমানবন্দর ব্যতীত যে কোনো কেপিআই ও বিশেষ শ্রেণির কেপিআইয়ের ৩ কিলোমিটারের মধ্যে ড্রোন পরিচালনার জন্য সংশ্লিষ্ট কেপিআই সংক্রান্ত কমিটির অনুমোদন নিতে হবে। বিমানবন্দরের ৫ কিলোমিটারের মধ্যে ড্রোন পরিচালনার জন্য বেবিচক ও বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিতে হবে।

বাংলাদেশস্থ কোনো বিদেশি মিশনে কর্মরত ব্যাক্তি/কূটনৈতিক ড্রোন উড্ডয়নের ক্ষেত্রে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আবেদন করতে হবে।

ড্রোন উড্ডয়ন/পরিচালনার বিষয়টি সরকারি/বেসরকারি সম্পত্তি/ব্যক্তি/রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও গোপনীয়তার জন্য হুমকি কিংবা ক্ষতির কারণ হতে পারবে না। নীতিমালায় নির্ধারিত নির্দিষ্ট শ্রেণির ড্রোন বেবিচকের নির্ধারিত পদ্ধতি অনুসরণপূর্বক নিবন্ধিত হবে। এ ছাড়া প্রতিটি ড্রোনের ক্ষেত্রে আলাদা আলাদা নিবন্ধন নম্বর বা পরিচিতি নম্বর ড্রোনের গায়ে লিখতে হবে।

নীতিমালা অনুযায়ী, কোনো ড্রোন উড্ডয়নকালে বেবিচক কর্তৃক প্রদত্ত অনুমোদনের কপি এবং যে মোবাইল সিমের মাধ্যমে ড্রোনটি নিবন্ধন করা হয়েছে, সেটি ড্রোন অপারেটরকে সার্বক্ষণিক সঙ্গে রাখতে হবে। তিনি বেবিচকসহ অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে দেখাতে বাধ্য থাকবেন।

সম্ভাব্য যে কোনো ধরনের জটিলতা এড়াতে ড্রোন অপারেটরকে ড্রোন উড্ডয়নের পূর্বেই স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনকে লিখিতভাবে অবহিত করতে হবে। ড্রোন উড্ডয়ন অনুমোদন প্রদান কার্যাদি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো একটি ড্রোন উড্ডয়ন সমন্বয় সেল স্থাপন করবে। উক্ত সেল স্ব-স্ব সংস্থা/বাহিনীর পক্ষ থেকে ড্রোন পরিচালনা/উড্ডয়নের তথ্যাদি সমন্বয় করবে।

ড্রোন উড্ডয়নের অনুমতি প্রদানের সুবিধার্থে ড্রোন ব্যবহারের ভিত্তিতে ড্রোনকে ৪টি শ্রেণি নীতিমালায় বিভক্ত করা হয়েছে। ক শ্রেণি : শুধু বিনোদনের জন্য ব্যবহার। খ শ্রেণি : শিক্ষা ও গবেষণার মতো অবাণিজ্যিক কাজে সরকারি/বেসরকারি সংস্থা/ব্যক্তি কর্তৃক ব্যবহার। গ শ্রেণি : সার্ভে, স্থিরচিত্র, চলচ্চিত্র নির্মাণ, উন্নয়ন প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই ইত্যাদি বাণিজ্যিক ও পেশাদার কাজে ব্যবহার। ঘ শ্রেণি : রাষ্ট্রীয়/সামরিক প্রয়োজনের ব্যবহার।

ড্রোন অপারেশনের ক্ষেত্রে গ্রিন জোন, ইয়েলো জোন এবং রেড জোন এই ৩টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যে কোনো ড্রোন ইয়েলো ও রেডজোনে উড্ডয়নের ক্ষেত্রে বেবিচক নির্ধারিত নিয়মাবলি অনুসরণ করতে হবে। বেবিচকের অনুমতি ব্যতীত বেসামরিক ড্রোন রাতে (সূর্যাস্ত ও উদয়ের মধ্যবর্তী সময়ে) উড্ডয়ন করা যাবে না।

সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ড্রোন আমদানি করতে হবে। ক, খ ও গ শ্রেণির ৭ কেজি ওজনের ড্রোন আমদানির পূর্বেই ড্রোনের বিস্তারিত বিবরণ ও সংখ্যা উল্লেখ করে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে অনাপত্তি ছাড়পত্র গ্রহণ করতে হবে। অনাপত্তি ছাড়পত্র গ্রহণের ৬ মাসের মধ্যে প্রদত্ত বিবরণ মোতাবেক ড্রোন আমদানি করতে হবে। এ ছাড়া লাগবে কাস্টমসের ছাড়পত্র।

ড্রোন আমদানির পর বেসামরিক বিমান চলাচল (বেবিচক) কর্তৃপক্ষের কাছে নির্ধারিত ফরমে আবেদন করে নিবন্ধন গ্রহণ করতে হবে। ক শ্রেণির ড্রোন ১০০ ফুটের বেশি উচ্চতায় উড্ডয়ন ক্ষমতাসম্পন্ন হলে অথবা ৭ কেজির বেশি ওজনের হলে ড্রোনের নিবন্ধন বাধ্যতামূলক। ড্রোন নিববন্ধনের জন্য আবেদন করতে বেশকিছু বিবরণ দাখিল করতে হবে বেবিচকে। এর মধ্যে রয়েছে ড্রোন ব্যবহারের উদ্দেশ্যে, স্পেসিফিকেশনের কপি, ড্রোন ক্রয়ের রসিদ, বিটিআরসির প্রত্যয়নপত্র, মোবাইল ফোন নম্বর।

এরকম আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button