‘শিবির সন্দেহে’ ক্যাম্পাসে চার ছাত্রকে মারধর
গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি হলে ‘ইসলামি ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত সন্দেহে’ চারজন ছাত্রকে মারধরের পর তাদের পুলিশের হাতে তুলে দেবার ঘটনা ঘটেছে।
মারধরের শিকার হওয়া ছাত্রদের একজন এ জন্য সরকার-সমর্থক ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকে দায়ী করেছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে ওই ঘটনার সময় উপস্থিত একজন ছাত্রও বলেছেন, মঙ্গলবার রাতে সরকার-সমর্থক ছাত্রলীগের দু’জন নেতা ওই চারজনকে হলের গেস্টরুমে ডেকে নেবার পর তাদের মারধর করা হয়। এ ব্যাপারে ছাত্রলীগের হল শাখা বা কেন্দ্রীয় নেতাদের কোন বক্তব্য পাওয়া যায় নি।
মারধরের পর ওই ছাত্রদের পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হয় এবং ১২ ঘন্টা শাহবাগ থানায় থাকার পর তাদের ছেড়ে দেয়া হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক একেএম গোলাম রব্বানী জানিয়েছেন, ‘হল কর্তৃপক্ষের অনুরোধ অনুযায়ী’ ওই চার ছাত্রকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় দেবার ব্যবস্থা করা হয়।
তবে ছাত্রদের মারধর করার কোন অভিযোগ সম্পর্কে তিনি কিছু জানেন না বলে জানান মি. রব্বানী।
কী হয়েছিল?
সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে মঙ্গলবার রাতে ঐ ঘটনার সময় উপস্থিত ছিলেন এমন একজন বিবিসিকে জানিয়েছেন, শিবিরকর্মী সন্দেহে রাত ১১টার দিকে দ্বিতীয় বর্ষের দুইজন ছাত্র মুকিম চৌধুরী এবং আফসার উদ্দীনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গেস্টরুমে ডেকে নেয় হল শাখা ছাত্রলীগের দু’জন নেতা।
পরে তৃতীয় বর্ষের ছাত্র সানোয়ার হোসেন এবং মিনহাজউদ্দীনকেও ডেকে নেয়া হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই প্রত্যক্ষদর্শী জানান, তাদেরকে হলের বর্ধিত ভবনে নিয়ে গিয়ে প্রথমে চড়-থাপ্পড় মারা হয়, পরে রড ও ক্রিকেট স্টাম্প দিয়ে পেটানো হয়।
এক পর্যায়ে ছাত্রলীগের অন্য নেতৃবৃন্দ এবং হলের আবাসিক শিক্ষকেরা এসে পৌঁছালে ছাত্রদের শাহবাগ থানায় হস্তান্তর করা হয়।
‘কর্তৃপক্ষ মারধর সম্পর্কে জানেন না’
সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, ছাত্রদের মারধর বা পেটানো হয়েছে কিনা সে সম্পর্কে তিনি জানেন না, তবে এ বিষয়ে কেউ লিখিত অভিযোগ করলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে হল প্রশাসন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক রব্বানীও বিবিসিকে জানান, ছাত্রদের মারধর করার কোন অভিযোগ সম্পর্কে তিনি জানেন না।
চার ছাত্রকে পুলিশে দেবার কারণ কী?
ছাত্রদের পুলিশে হস্তান্তরের কারণ জানতে চাইলে অধ্যাপক রব্বানী বলেন, মঙ্গলবার রাতে হল কর্তৃপক্ষ তার কাছে চারজন ছাত্রকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় দেবার ব্যবস্থা করার অনুরোধ করে।
“অভিযোগ সম্পর্কে আমার কাছে কোন লিখিত আবেদন করা হয়নি। হল কর্তৃপক্ষের অনুরোধ অনুযায়ী ব্যবস্থা নিয়েছি। তবে পরে ওই চারজন ছাত্রের বিরুদ্ধে কোন ক্রিমিনাল চার্জ বা শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ না থাকলে ছেড়ে দেবার জন্য পুলিশকে আমি অনুরোধ করি।”
প্রায় ১২ ঘন্টা পর বিকেল চারটায় পুলিশ তাদের ছেড়ে দেয়। শাহবাগ থানা থেকে জানানো হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে কোন লিখিত অভিযোগ না পাওয়ায় চার ছাত্রকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর ছেড়ে দেয়া হয়।
এ সম্পর্কে অধ্যাপক হোসেন জানিয়েছেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ এবং ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠন সবাই মিলে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করেছে। যে কারণে ওই ছাত্রদের সেই সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ততা আছে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ করেছে কেউ কেউ।”
“তবে হল কর্তৃপক্ষকে জানানোর আগে তাদের কেউ মারধর করেছে এমন অভিযোগ সম্পর্কে আমি অবহিত নই। যদি ওই চার জন ছাত্রের কেউ লিখিত অভিযোগ করে, তাহলে তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেব আমরা।”
পরিবার উদ্বিগ্ন
দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মুকিম চৌধুরীর মা ফরিদা বেগম চট্টগ্রামের সাতকানিয়া থেকে সকালে ঢাকা এসে পৌছেছেন।
কথা বলার সময় তিনি কাঁদছিলেন, বলছিলেন ছেলেকে একা ঢাকায় রেখে যেতে তিনি ভরসা পাচ্ছেন না।
“আমার ছেলের নামে মিথ্যা অভিযোগ দেয়া হইছে। এমন অবস্থায় আমি কেমন একা রেখে যাবো তাকে।”
সূত্র: বিবিসি