অর্থনীতিআলোচিত

ব্যাংক কর্মকর্তারাই ‘জাল নোট’ বাজারে ছড়িয়ে দেন!

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : জাল নোট বাজারে ছড়ানোর কাজে সরাসরি জড়িত কয়েকটি প্রাইভেট ব্যাংকের কিছু কর্মকর্তা। এসব কর্মকর্তা জালনোট প্রস্তুতকারীদের কাছ থেকে নেন লাখে ৭০ হাজার টাকা (ব্যাংক কর্মকর্তা ৭০ ও জাল নোট সরবরাহকারী ৩০ হাজার)। সম্প্রতি জাল নোটসহ আটক হওয়া প্রতারকরা এমন তথ্যই দিয়েছেন র‌্যাবকে।

প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব কড়া নজরদারিতে রেখেছে জাল নোট প্রতারক চক্রের সঙ্গে জড়িত ব্যাংক কর্মকর্তাদের। এদেরকে আইনের আওতায় আনা এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।

র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) জানায়, সাত দিন আগে রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকা থেকে প্রায় চার কোটি টাকারও বেশি মূল্যের জাল নোট জব্দ করা হয়েছে। এ সময় জাল নোট তৈরির বিভিন্ন সরঞ্জামসহ দুই জাল নোট প্রস্তুতকারককে আটক করা হয়। জব্দকৃত সরঞ্জামাদি দিয়ে আরো কোটি কোটি টাকার সমপরিমাণ জাল নোট তৈরি করা যেত।

আটককৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সংস্থাটি বলছে, এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে এ বিপুল জাল টাকা বাজারে ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল তাদের। আর জাল নোট কারবারিদের এ কাজে সহযোগিতা করতেন বেসরকারি কতিপয় ব্যাংক কর্মকর্তা। জাল টাকা তৈরির কারবারিরা লাখে ৩০ হাজার টাকা করে পেতেন। ২০০৪ সাল থেকে চক্রটি এভাবেই বাজারে জাল টাকা ছড়াচ্ছে।

এ অভিযানে নেতৃত্বদানকারী র‌্যাব কর্মকর্তা মেজর শাহারিয়ার ইফতি বলেন, জাল টাকা তৈরির চক্রগুলো তিন ধরনের নোট তৈরি করে। উন্নত মানের জাল নোটকে তারা এক নম্বর বলে। যা বানাতে তাদের খরচ বেশি হয়। তুলনামূলক দুর্বল কাগজ দিয়ে দুই নম্বর ও তিন নম্বর জাল নোট তৈরি করা হয়।

র‌্যাব সূত্র বলছে, শুধু এক নম্বর জাল নোট ব্যাংক কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় বাজারে ছড়ানো হয়। আলোচনা সমঝোতার ভিত্তিতে চক্রের এক সদস্য তার ব্যাংকের হিসাবে টাকা জমা করে। টাকা জমা হবার পরে ওই কর্মকর্তা ৭০ হাজার টাকা পান। চক্রটি কোনো নির্দিষ্ট ব্যাংকে এক মাসে একবারের বেশি টাকা জমা করে না। আর টাকার অংক পাঁচ লাখের মধ্যেই থাকে।

দ্বিতীয় শ্রেণিভুক্ত অপেক্ষাকৃত নিম্নমানের জাল নোটগুলো সাধারণত কয়েক ধাপে বাজারে ছাড়া হয়। প্রথম ধাপে পাইকারি হিসেবে এক লাখ জাল টাকার একটি বান্ডল ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। দ্বিতীয় ধাপে পাইকারি কারবারিরা আবার এসব টাকা খুচরা কারবারির কাছে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকায় বিক্রি করেন। তৃতীয় ধাপে খুচরা কারবারিরা এসব টাকা নিজস্ব লোকজনের মাধ্যমে সুকৌশলে রাজধানীসহ সারা দেশে ছড়িয়ে দেন।

নিম্নমানের টাকাগুলো চক্রের সদস্যরা নিজেরাই সময় সুযোগ বুঝে বাজারে ছড়ান। প্রতিদিন প্রতি সদস্যের ১০ হাজার টাকা বাজারে ছড়ানোর টার্গেট থাকে।

মেজর শাহারিয়ার ইফতি আরও বলেন, আমরা এ চক্রের সব সদস্যকে নজরদারিতে রেখেছি। পাশাপাশি অসাধু ব্যাংক কর্মকর্তাদের সম্পর্কেও আরো তথ্য সংগ্রহ করছি। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাব।

জাল টাকা চক্রের সঙ্গে ব্যাংক কর্মকর্তাদের জড়িত থাকার বিষয়টি নিয়ে কথা হয় বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, এ ধরনের অভিযোগ আমরাও শুনেছি। বিষয়টি নিয়ে কাজ করা হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) সকালে ধানমণ্ডি ৭/এ এলাকার এক বাড়ির তৃতীয় তলায় এ অভিযান চালানো হয়।

অভিযান শেষে ঘটনাস্থল থেকে র‌্যাব-১০ এর অধিনায়ক (সিও) অতিরিক্ত ডিআইজি কাইমুজ্জামান খান জানান, রাজধানীতে জাল টাকা তৈরি চক্রের সন্ধান পেয়ে র‌্যাবের গোয়েন্দারা নজরদারি শুরু করে। এরই সূত্র ধরে ৯ জানুয়ারি গভীর রাতে রাজধানীর কদমতলী থেকে ১ লাখ ৯০ হাজার টাকার জাল নোটসহ শাহ আলমকে আটক করা হয়। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ধানমন্ডিতে অভিযান চালিয়ে সাইফুলকে আটক করা হয়। আটক দু’জনকেই আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আর জব্দ করা জাল টাকাগুলো মামলার আলামত হিসেবে আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে।

এদিকে, শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) রাতে রাজধানীর কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদ এলাকা থেকে এ চক্রের আরেক সদস্য আবু তাহের সাগরকে (৪২) আটক করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সাগর র‍্যাবকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিচ্ছেন বলেও জানা গেছে।

 

 

সূত্র: বার্তা২৪

এরকম আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button