বিপিএলের নতুন চ্যাম্পিয়ন রাজশাহী
গাজীপুর কণ্ঠ, খেলাধুলা ডেস্ক : আন্দ্রে রাসেলের শেষ বলটা ড্রাইভ করলেন শফিউল ইসলাম। মিড অফ ফিল্ডারকে ফাঁকি দিয়ে বল চলে গেল বাউন্ডারিতে। কিন্তু সেটা নিয়ে ভাবতে বয়েই গেছে রাসেলদের!
কেউ কেউ তুলে নিলেন স্টাম্প। ডাগ আউট থেকে মাঠে ছুটে এলেন অন্য খেলোয়াড়রা। এরপর মাঝ মাঠে চলল উৎসব। খুলনা টাইগার্সকে হারিয়ে বঙ্গবন্ধু বিপিএলের শিরোপা জিতেছে যে রাজশাহী রয়্যালস।
রাসেলের ওই বলের আগেই অবশ্য শিরোপা নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল রাজশাহীর। শেষ বলে তো আর ২৬ রান নেওয়া সম্ভব নয়! শফিউলের চারে শুধু পরাজয়ের ব্যবধানই কমাতে পারে খুলনা। ২১ রানের জয়ে প্রথমবারের মতো বিপিএল চ্যাম্পিয়ন হয়েছে রাজশাহী।
সপ্তমবারের চেষ্টায় প্রথমবারের মতো বিপিএলের ফাইনালে উঠেছিলেন মুশফিকুর রহিম। কিন্তু শিরোপার স্বাদ অধরাই রয়ে গেল তার। মিরপুর শের-ই-বাংলায় শুক্রবারের ফাইনালে আগে ব্যাট করতে নেমে ইরফান শুক্কুরের ফিফটি এবং রাসেল ও মোহাম্মদ নওয়াজের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে রাজশাহী করেছিলে ১৭০ রান। জবাবে খুলনা ১৪৯ রানের বেশি করতে পারেন।
লক্ষ্য তাড়ায় খুলনার শুরুটা হয় ভীষণ বাজে। শেষ দুই ম্যাচে সেঞ্চুরি ও ফিফটি করা নাজমুল শান্ত ফাইনালে খুলতে পারেননি রানের খাতা। মোহাম্মদ ইরফানের করা ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই পয়েন্টে লিটন দাসের দুর্দান্ত এক ক্যাচে ফেরেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। আরেক ওপেনার মেহেদী হাসান মিরাজও টেকেননি। পরের ওভারে তিনি ফেরেন বাজে এক শটে। তখন ১১ রানেই ২ উইকেট হারিয়ে চাপে খুলনা।
শুরুর ধাক্কা সামাল দেন শামসুর রহমান ও রাইলি রুশো। যদিও রুশো ফিরতে পারতেন ব্যক্তিগত ১৮ রানেই। শোয়েব মালিকের বল কাট করতে গিয়ে ক্যাচ দিয়েছিলেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। কাভার ও পয়েন্টের মাঝে ক্যাচটা নিতে পারেননি আবু জায়েদ।
জীবন পেয়ে শামসুরকে সঙ্গী করে দলকে এগিয়ে নেন রুশো। দুজনের পঞ্চাশোর্ধ জুটিটা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছিল। তখনই ৭৪ রানের জুটি ভাঙেন মোহাম্মদ নওয়াজ। বাঁহাতি স্পিনারকে ছক্কায় উড়াতে গিয়ে লং অনে রাসেলের হাতে ধরা পড়েন রুশো (২৬ বলে ৩৭)।
শামসুর তুলে নিয়েছিলেন ফিফটি, ৩৮ বলে। তবে ফিফটির পর ইনিংস আর টেনে নিতে পারেননি। কামরুল ইসলাম রাব্বীকে ডাউন দ্য উইকেটে খেলতে গিয়ে ক্যাচ দেন ডিপ পয়েন্টে। ৪৩ বলে ৪ চার ও ২ ছক্কায় ৫২ রান করেন ডানহাতি ব্যাটসম্যান। একই ওভারে ফিরে যান নজিবুল্লাহ জাদরানও।
খুলনার শেষ আশা ছিল তখন মুশফিককে ঘিরে। তার সঙ্গী ছিলেন ফ্রাইলিঙ্ক। ১৭তম ওভারের শেষ দুই বলে দুই চার হাঁকিয়ে আশার পালে জোর হাওয়া লাগিয়েছিলেন মুশফিক। তবে শেষ তিন ওভারে ৪০ রানের সমীকরণটা মেলাতে পারেননি খুলনার অধিনায়ক।
১৮তম ওভারে রাসেলের ইয়র্কারে মুশফিক বোল্ড হওয়ার পরই খুলনা ম্যাচ থেকে ছিটকে যায়। এরপর বাকি ছিল শুধু আনুষ্ঠানিকতা। সেই আনুষ্ঠানিকতা শেষেই উৎসবে মাতে রাজশাহী শিবির।
এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে রাজশাহীর শুরুটা ভালো ছিল না। তৃতীয় ওভারেই মেহেদী হাসান মিরাজের দুর্দান্ত ক্যাচে ফেরেন আফিফ হোসেন (১০)। দ্বিতীয় উইকেটে জুটি বেঁধে দলকে টেনেছেন লিটন দাস ও ইরফান শুক্কুর। লিটন অবশ্য থিতু হয়েও ইনিংস বড় করতে পারেননি। শহিদুল ইসলামের শর্ট বল পুল করতে গিয়ে ক্যাচ দেন ডিপ মিডউইকেটে। ২৮ বলে একটি করে চার ও ছক্কায় লিটন করেন ২৫ রান।
ঝড়ো ব্যাটিংয়ে শুক্কুর ফিফটি তুলে নেন ৩০ বলে। তবে ফিফটির পর ইনিংস আর বড় করতে পারেননি বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। ৩৫ বলে ৬ চার ও ২ ছক্কায় তিনি করেন ৫২ রান। তখন ৯৯ রানে ৪ উইকেট নেই রাজশাহীর।
এরপর ঝড় তোলেন আন্দ্রে রাসেল ও মোহাম্মদ নওয়াজ। রাসেল অবশ্য ফিরতে পারতেন ৭ রানেই। কিন্তু তার ক্যাচ ফেলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। পরে সেই রাসেলই হাঁকান এই বিপিএলের সবচেয়ে বড় ছক্কা। মোহাম্মদ আমিরকে ডিপ মিডউইকেটের ওপর দিয়ে উড়ানো তার ছক্কাটি ছিল ১১৫ মিটার!
কম যাননি নওয়াজও। রবি ফ্রাইলিঙ্কের একই ওভারে দুটি করে চার ও ছক্কায় নওয়াজ তোলেন ২১ রান। রাসেল ও নওয়াজের শেষের ঝড়েই ১৭০ স্পর্শ করে রাজশাহীর সংগ্রহ। শেষ ৩ ওভারে দুজন তোলেন ৫৪ রান। মাত্র ৩৪ বলে ৭১ রানের জুটিতে অবিচ্ছিন্ন ছিলেন দুজন। রাসেল ১৬ বলে ৩ ছক্কায় ২৭ ও নওয়াজ ২০ বলে ৬ চার ও ২ ছক্কায় ৪১ রানে অপরাজিত ছিলেন।
রাসেল পরে জ্বলে উঠলেন বল হাতেও। শিরোপা উৎসবে মাতল তার দল।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
রাজশাহী: ২০ ওভারে ১৭০/৪ (লিটন ২৫, আফিফ ১০, শুক্কুর ৫২, মালিক ৯, রাসেল ২৭*, নওয়াজ ৪১*; আমির ২/৩৫, ফ্রাইলিঙ্ক ১/৩৩, শহিদুল ১/২৩)।
খুলনা: ২০ ওভারে ১৪৯/৮ (শান্ত ০, মিরাজ ২, শামসুর ৫২, রুশো ৩৭, মুশফিক ২১, নজিবুল্লাহ ৪, ফ্রাইলিঙ্ক ১২, শহিদুল ০, শহিফুল ৭*, আমির ১*; ইরফান ২/১৮, রাসেল ২/৩২, নওয়াজ ১/২৯, রাব্বী ২/২৯)।