আলোচিত

রাজাকারের তালিকা নিয়ে সংসদে সমালোচনার মুখে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : রাজাকারের তালিকা প্রকাশ নিয়ে সংসদে সমালোচনার মুখে পড়েছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। তবে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় এই তালিকা প্রকাশ করেনি উল্লেখ করে এসময় মন্ত্রী বলেন, ‘স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের থেকে পাওয়া তালিকা তারা হুবহু প্রকাশ করা হয়েছে।’ ওই তালিকায় ত্রুটি ছিল বলে দুঃখ প্রকাশ করে তা প্রত্যাহার করে নেওয়ার কথা জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘ভবিষ্যতে যাতে ভুলের পুনরাবৃত্তি না হয়, সবার সহযোগিতা নিয়ে সম্পূর্ণ যাচাই বাছাই করে তালিকা প্রকাশ করবো।’

বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) সংসদে সরকারি দলের সংসদ সদস্য ফরিদুল হক খান রাজাকারের তালিকা প্রণয়নে গাফিলতিদের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ বিষয়ে জানতে চান। তিনি অনুপস্থিত থাকায় প্রশ্নটি সংসদে তোলেন সরকারি দলের অপর সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন।

জবাবে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী বলেন, ‘রাজাকারের তালিকা মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে প্রণয়ন করা হয়নি। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও জননিরাপত্তা বিভাগ হতে ১০ হাজার ৭৮৫ জন রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস এবং স্বাধীনতা বিরোধীদের একটি তালিকা এই মন্ত্রণালয়ের প্রেরণ করেছে। প্রাপ্ত তালিকা হুবহু মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। যেহেতু মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় উক্ত তালিকা প্রস্তুত করেনি, সেহেতু প্রশ্নে উত্থাপিত বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে।’

গত বছর বিজয় দিবসের আগের দিন সংবাদ সম্মেলন করে ১০ হাজার ৭৮৯ জন ‘স্বাধীনতাবিরোধীর‘ ওই তালিকা প্রকাশ করেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী। ওই তালিকায় গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের নাম আসায় ক্ষোভ আর সমালোচনার সৃষ্টি হয়। এরই প্রেক্ষাপটে সংশোধনের জন্য তালিকাটি স্থগিত করা হয়।

পরে সংসদে মোয়াজ্জেম হোসেন রতন সম্পূরক প্রশ্নে বলেন, ‘স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই তালিকা দিয়েছে একথা বলে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব এড়ানো যায় না। কারণ এই মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে তা প্রকাশ হয়েছে; যার কাছ থেকেই আপনি তথ্য নেন, তা ঠিক আছে কি না, এটা দেখার দায়িত্ব এই মন্ত্রণালয়ের ওপরই বর্তায়। আজকে কিছু কিছু জায়গায় অসঙ্গতির কারণে আমরা প্রশ্নবিদ্ধ। আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি, আমরা অত্যন্ত ব্যথিত হয়েছি। এই বিষয়ে আমরা আহত হয়েছি। প্রকৃত রাজাকারের নামও এ তালিকায় আসেনি। এই বিষয়ে এই মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সবার সমন্বয়ের মাধ্যমে প্রকৃত রাজাকারদের তালিকা আগামী ২৬ মার্চের মধ্যে আপনারা প্রকাশ করবেন কিনা জানতে চাই।’

জবাবে মন্ত্রী মোজাম্মেল হক বলেন, ‘ভুল ত্রুটি ছিল বলেই দুঃখ প্রকাশ করে সেই তালিকা আমরা প্রত্যাহার করে নিয়েছি। ভবিষ্যতে যাতে ভুলের পুনরাবৃত্তি না হয়, সবার সহযোগিতা নিয়ে সম্পূর্ণ যাচাই বাছাই করে তালিকা প্রকাশ করবো।’

সম্পূরক প্রশ্ন করতে গিয়ে চাঁদপুরের রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম বলেন, ‘‘আমি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সদস্য। তাই এমন কিছু বলবো না যাতে মন্ত্রী অপ্রস্তুত হন। আমাদের সিদ্ধান্ত ছিল আমরা কোনও তালিকা তৈরি করব না। লক্ষ্য ছিল যারা স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছে, তাদের যে বিদ্যমান তালিকা আছে সেটা প্রকাশ করা হবে। মন্ত্রী বলেছেন- ‘মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় তালিকা প্রস্তুত করেনি। উত্থাপিত প্রশ্নে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা নিতে পারে।’ আমি বিনয়ের সঙ্গে এই বক্তব্যে দ্বিতম পোষণ করছি। কারণ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কী দিয়েছে তাকে, সেটা আমরা জানি না এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যেহেতু এটার মালিক, তারাই এটা প্রকাশ করতে পারতো। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী কেন সেটা প্রকাশ করলেন? উনি যেহেতু এটা প্রকাশ করেছেন, দায় দায়িত্ব তাকে নিতে হবে।’

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীকে উদ্দেশ করে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় কমিটির সদস্য রফিকুল ইসলাম আরও বলেন, ‘উনি তো এখন পর্যন্ত সঠিক রাজাকারের তালিকা সংগ্রহ করতে পারেননি। আমার ধারণা, উনি পারবেন না। কারণ গত পাঁচ বছর ধরে আমরা একই কথা শুনে আসছি। উনি এখন আর এটা পারবেন বলে মনে হয় না। ৯০৭ বা কিছু একটা সংখ্যা বিভিন্ন জেলা থেকে এসেছে রাজাকারের তালিকা, সে তালিকাটি প্রকাশ করা হয়নি। এটা একটা সঠিক তালিকা।’

জবাব দিতে মন্ত্রী মোজাম্মেল বলেন, ‘আমরা সংসদে বলেছিলাম- কোনও তালিকা প্রণয়ন করব না। প্রকাশ করব। ঘটনাও তাই হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও তালিকা প্রণয়ন করেনি। এটা তাদের কাছে সংরক্ষিত ছিল। আর যে তালিকা সংরক্ষিত ছিল, আমাদের সরবরাহ করেছে, সেটাই আমরা প্রকাশ করেছি। কোনও প্রশ্নে যাচ্ছি না। শুধু এটুকু বলতে চাই, তালিকায় যাদের নাম গিয়েছে তাদের নাম, সক্রিয় ছিল কি না, সেটা যাচাই করার ব্যাপার, তবে তালিকায় যে নাম আছে তাতে কোনও সন্দেহ নাই। সব ডকুমেন্টারি অ্যাভিডেন্স আছে। তবে আমার যেটা অভিজ্ঞতা হয়েছে, এগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে, যে তালিকা তখনকার মেম্বার চেয়ারম্যানদের কাছ থেকে চাওয়া হয়েছে- তারা কী করবে, তাদের অজ্ঞাতে অনেকের নাম দিয়ে দিয়েছে হয়তোবা। একারণেই এই বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। ভবিষ্যতে যাচাই বাচাই করে তালিকা প্রকাশ করা হবে।’

সম্পূরক প্রশ্ন করতে গিয়ে গণফোরামের সুলতান মোহাম্মদ মনসুর বলেন, ‘বিভক্তি সৃষ্টি না করলেই ভাল হতো। অনেক রাজাকার মুক্তিযোদ্ধাদের পথ দেখিয়েছিল। পিস কমিটিতে সম্মানিত অনেক ব্যক্তি ছিলেন। মুজিব বর্ষ পালনের এই শুভ লগ্নে এমন কিছু করতে যায়েন না যার মধ্য দিয়ে মানুষ বিভ্রান্ত হয়।’

এরকম আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button