ধর্ষণকারীদের ‘ক্রসফায়ারে’ হত্যা করার দাবি সংসদে
গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : ধর্ষণকারীদের ‘ক্রসফায়ারে’ হত্যা করার দাবি জানিয়েছেন জাতীয় সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির (জাপা) দুজন সাংসদ।
মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে অনির্ধারিত আলোচনায় এই দাবি জানান জাপার সাংসদ কাজী ফিরোজ রশীদ ও মুজিবুল হক।
সরকারদলীয় জ্যেষ্ঠ সাংসদ তোফায়েল আহমেদ এবং অন্য একজন সাংসদ জাপার দুই সাংসদের বক্তব্যকে সমর্থন করেন।
অনির্ধারিত আলোচনায় জাপার সাংসদ কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘এই মুহূর্তে সমাজকে ধর্ষণমুক্ত করতে হলে “এনকাউন্টার মাস্ট”। ধর্ষককে গুলি করে মারতে হবে। একমাত্র ওষুধ পুলিশ ধরার পর ধর্ষককে গুলি করে মেরে ফেলা।’
ফিরোজ রশীদ আরও বলেন, সাম্প্রতিক কালে ধর্ষণ মহামারি রূপ নিয়েছে। ছাত্রী, শিশু, নারী শ্রমিক, প্রতিবন্ধী নারী ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন। কেউ রক্ষা পাচ্ছেন না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অনেক ‘ক্লুলেস’ ঘটনায়ও ধর্ষককে গ্রেপ্তার করেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী মর্মান্তিক ধর্ষণের শিকার হলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ধর্ষণকারীকে গ্রেপ্তার করতে পেরেছে। প্রত্যেক জায়গায় ধর্ষকদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।
কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, ধর্ষণের ঘটনায় বিচার হয় ১৫ থেকে ২০ বছর পর। মানুষ এটা মনে রাখে না। শাজনীন হত্যার পর ১৬ বছর লেগেছে সেই একটি বিচার করতে। শাজনীনের বাবা এ দেশের স্বনামধন্য একজন শিল্পপতি। তাঁর মেয়ের এই ধর্ষণ হত্যার বিচার নিয়ে কোর্ট–কাছারি করতে করতে ১৬ বছর পার করছেন। একজনের মাত্র ফাঁসি হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনা প্রসঙ্গে কাজী ফিরোজ বলেন, ‘ধর্ষণকারী ধরা পড়েছে। ওই ছাত্রী তাকে শনাক্ত করেছেন। ধর্ষক পুলিশের কাছে আছে। জিজ্ঞাসাবাদের নামে তাকে নিয়ে গিয়ে গুলি করে মারা হোক।’
গুলি করে মারার পক্ষে যুক্তি দিয়ে ফিরোজ রশীদ বলেন, ধামরাইয়ে বাসে ধর্ষণ করে হত্যা করা হলো। বাসের চালককে গ্রেপ্তার করা হলো। কী বিচার হবে? কোনো সাক্ষী নেই। এখন পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেবে। যখন মামলায় যাবে, সাক্ষী থাকবে না। তাহলে কী করতে হবে?
ফিরোজ বলেন, ‘এই মুহূর্তে যদি এই সমাজকে ধর্ষণমুক্ত করতে চান, তাহলে এনকাউন্টার মাস্ট। তাকে গুলি করে মারতে হবে।’
এ সময় কাজী ফিরোজের পাশ থেকে একজন সাংসদ আইন করার কথা বলেন। ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘আইন লাগে না। পুলিশের আইন আছে তো। মাদকের আসামি পরশুদিনও মারা হয়েছে, কোন আইনে মারা হয়েছে? এই যে বাসে ধর্ষণ করে যে মেয়েটিকে মেরে ফেলল, ধর্ষক ধরা পড়ল। তাকে কী করব আমরা?’
কাজী ফিরোজ বলেন, মানবাধিকার সংগঠন আইনের শাসনের কথা বলে। এই ধর্ষকদের কোনো ফাঁসি হবে না, জেলও হবে না। একসময় বেরিয়ে যাবে, কেউ খবরও রাখবে না।
কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘আমি মানবাধিকারকর্মীদের বলব, আপনারা যদি ধর্ষণের শিকার হতেন, আপনার স্ত্রী, আপনার মা, আপনার বোন, আপনার কেউ যদি ধর্ষণের শিকার হতো, কী হতো?’
ফিরোজ রশীদ বলেন, বগুড়া থেকে বাসে ফেরার পথে রূপাকে ধর্ষণ করে হত্যা করা হয়। পুলিশ পাঁচ ধর্ষণকারীকে গ্রেপ্তার করেছে। সেদিন পুলিশ যদি ওই পাঁচজনকে মধুপুর নিয়ে গিয়ে গুলি করে মেরে ফেলত, তাহলে টাঙ্গাইলের পথে আর ধর্ষণের ঘটনা ঘটত না।
কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘এখান থেকে এই মেসেজটা দিতে চাই, আর কোনো ধর্ষক যেন সাহস না পায়। কারও যদি ফাঁসি হয়, কেউ খবর রাখে না। এখনই যদি এক সপ্তাহ, দুই সপ্তাহ, তিন সপ্তাহের মধ্যে বিচার করতে পারি, বিচার কী? একমাত্র শাস্তি এনকাউন্টারে মেরে ফেলা। ১০টা–২০টা মারা হোক, ধর্ষণ বন্ধ হয়ে যাবে।’
এর আগে অনির্ধারিত আলোচনায় ধর্ষণ নিয়ে জাতীয় সংসদে আলোচনার সূত্রপাত করেন জাপার মুজিবুল হক। তিনি বলেন, যে হারে ধর্ষণ বেড়েছে, সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়ে তা ‘কন্ট্রোল’ হচ্ছে না। অনুরোধ থাকবে ধর্ষণের দায়ে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার ব্যবস্থা করার।
মুজিবুল হক বলেন, ‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলব, আপনার সরকার, মন্ত্রণালয় এত ঘটনা ঘটছে মাদকের জন্য, এত ক্রসফায়ার হচ্ছে, সমানে বন্দুকযুদ্ধে মারা যায়, ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধ, জঘন্য ঘটনার জন্য কেন একটা বন্দুকযুদ্ধে মারা যায়নি, আমি জানি না। সরকারের কাছে অনুরোধ থাকবে, এই বিষয়টা সরকার যদি গুরুত্ব দিয়ে ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে কোনোক্রমেই এটা কন্ট্রোল হবে না।’
মুজিবুল হক বলেন, ধর্ষণ নিয়ে সারা দেশের মানুষ উদ্বিগ্ন। নারীসমাজ উদ্বিগ্ন। পুলিশ সদর দপ্তরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছর ১৭ হাজার ৯০০ নারী নির্যাতনের মামলা হয়। এর মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৫ হাজার ৪০০ জন। ১৮৫টি শিশু ধর্ষণের শিকার হয়। ২০১৮ সালে ধর্ষণের সংখ্যা ছিল ৭২৭। গত বছর ধর্ষণের পর ১২ শিশু মারা যায়। ২৬ জন নারীর মৃত্যু হয়। এ বছর ধর্ষণের শিকার হয়ে মারা যায় ১৪টি শিশু। তার মানে বিগত বছরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ২০১৯ সালে।
মুজিবুল হক বলেন, ‘এ বিষয়টা যদি আমরা গুরুত্ব না দিই, জাতির সামনে প্রশ্নের জবাব দিতে পারব না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে যে ধর্ষণ করা হলো, যদিও সরকার জরুরি ব্যবস্থা নিয়ে গ্রেপ্তার করেছে, এরপরও জনমনে গ্রেপ্তার নিয়ে প্রশ্ন আছে, নানা কারণে মানুষ বিশ্বাস করছে না। এরপরই সাভারে ঘটনা ঘটে—ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়। ধামরাইতে একই ঘটনা হয়।’
অনির্ধারিত আলোচনায় জাপার দুই সাংসদের বক্তব্যে সমর্থন জানান সরকারি দলের সাংসদ তোফায়েল আহমেদ। তিনি বলেন, ভারতে একজন চিকিৎসক মেয়ে বাস থেকে নামার পর চারজন জোর করে ধরে নিয়ে গিয়ে তাঁকে ধর্ষণ করে। দুদিন পর ক্রসফায়ারে তাদের হত্যা করা হয়। এ ঘটনার পর ভারতে আর কোনো ঘটনা ঘটেনি।
ফিরোজ রশীদের বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করে তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘এখানে দরকার কঠোর আইন করা। আর দ্বিতীয়ত হলো, যে এই কাজ করেছে, তার আর এই পৃথিবীতে থাকার কোনো অধিকার নেই।’
তরিকত ফেডারেশনের সাংসদ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারি বলেন, ‘আল্লাহকে হাজির-নাজির জেনে বলছি, এদের (ধর্ষকদের) ক্রসফায়ার করলে কোনো অসুবিধা নাই।’