নির্বাচন কমিশনের ইউটার্ন; হতবাক আওয়ামী লীগ
গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : নির্বাচন কমিশন নিয়ে অভিযোগের অন্ত নেই। সাধারণ মানুষ মনে করে যে, নির্বাচন কমিশন যতটা নিরপেক্ষ ও সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করা উচিত ছিল, তা করে না। বিশেষ করে ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের পর নির্বাচন কমিশন নানা সমালোচনায় বিদ্ধ। কিন্তু নির্বাচন কমিশন যেন তাদের ইমেজ পুনরুদ্ধারের জন্য বেছে নিয়েছে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনকে। সিটি কর্পোরেশনের শুরু থেকেই নির্বাচন কমিশন ইউটার্ন নিয়েছে। আগের সেই নির্বাচন কমিশন নেই। নির্বাচন কমিশন যেন অচেনা হয়ে গেছে।
নির্বাচন কমিশন বরং কিছুটা বিএনপির প্রতিই পক্ষপাতপূর্ণ আচরণ করছে এমন কথা নাগরিক সমাজে আলোচনা হচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো বলছে যে, নির্বাচন কমিশন নিজেরাও জানে যে, তারা ইমেজ সংকটে ভুগছে। বিশেষ করে ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচন এবং তার পরবর্তী কয়েকটি নির্বাচনে রীতিমতো ভোটারবিহীন হওয়ার কারণে নির্বাচন কমিশনের ওপর মানুষের বিশ্বাসযোগ্যতা এবং আস্থা নষ্ট হয়ে গেছে। নির্বাচন কমিশন এই অবস্থা পুনরুদ্ধার করতে চায়। আর এই পুনরুদ্ধার করার জন্য এবার নির্বাচন কমিশন ইউটার্ন নিয়েছে। নির্বাচনের প্রচারণার শুরু থেকেই নির্বাচন কমিশন নির্বাচন আচরণবিধি এবং নিয়মনীতিগুলো যেন মানা হয় এবং নির্বাচন যেন অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ হয় সে ব্যাপারে উঠেপড়ে লেগেছে। এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট বার্তাও দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
নির্বাচন প্রচারণার নির্ধারিত সময়ের আগেই আতিকুল ইসলাম প্রচারণায় নেমে পড়ার অভিযোগে আতিকুল ইসলামকে শোকজ করা হয়েছিল। এই শোকজের পর আতিকুল ইসলাম ক্ষমা প্রার্থনা করেন। এরপর নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আওয়ামী লীগ দু-দফায় সাক্ষাৎ করেছিল। একটা সাক্ষাতেও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা তাদের কাঙ্খিত ফলাফল পায়নি। এইচ টি ইমামের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল প্রথম নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন। ওই সাক্ষাতে আশ্বস্ত করার মত কিছু আওয়ামী লীগকে দেয়নি। নির্বাচন কমিশন আজ সিদ্ধান্ত নেয় যে, সংসদ সদস্যরা নির্বাচন সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করতে পারবে না। এই সিদ্ধান্ত আওয়ামী লীগের জন্য যেন এক বড় ঝটকা। তোফায়েল আহমেদের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ নেতারা নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাতে নির্বাচন কমিশনকে এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের অনুরোধ জানান। কিন্তু নির্বাচন কমিশন স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেয়, এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের সুযোগ তাদের নেই। নির্বাচন আইন অনুযায়ী বর্তমান নির্বাচিত এমপি এবং মন্ত্রীরা নির্বাচনী প্রচারণায় অংশগ্রহণ করতে পারবে না। সমন্বয়কের দায়িত্বও নির্বাচন প্রচারণার একটি অংশ। এটি আওয়ামী লীগের জন্য একটি বড় আঘাত।
শুধু তাই নয়, এরপর ১০ দলের এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেই ১৪ দলের বৈঠকে নেতৃত্ব দেন আওয়ামী লীগের দক্ষিণের দায়িত্বে থাকা উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য এবং হেভিওয়েট নেতা আমির হোসেন আমু। সেই বৈঠকে ১৪ দলের পক্ষ থেকে এই আইন বাতিলের দাবি জানান হয়।
শুরুতেই আওয়ামী লীগ যেন অচেনা মাঠে খেলতে নেমেছে। এতদিনের যে পরিচিত মাঠ এবং প্রেক্ষাপট তা পাল্টে গেছে। বরং নির্বাচন কমিশনের অতি নিরপেক্ষতা এবং কিছুটা বিএনপির প্রতি সহানুভূতিশীল আচরণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে এক অচেনা মাঠে নামিয়েছে। যেখানে আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দই হতবাক।
আওয়ামী লীগের একজন নেতা বলেছেন, আমরা প্রথমে মনে করেছিলাম সিটি নির্বাচন একটি আনুষ্ঠানিকতাই হবে। আওয়ামী লীগের দু-জনেই সহজে বিজয়ী হবে। কিন্তু যতই নির্বাচনের সময় এগিয়ে আসছে। বিশেষ করে প্রচারণার শুরুতেই দেখা যায় যে, নির্বাচন কমিশন এবার একেবারেই নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করতে চায়। বিশেষ করে নির্বাচনী প্রচারণায় কোন রকম অনিয়ম এবং আচরণবিধি লংঘন তারা সহ্য করবে না। এরফলে শুরু থেকেই নির্বাচন কমিশনের এই অচেনা রুপে আওয়ামী লীগ হোঁচট খাচ্ছে বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করেন। এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে এই নির্বাচন হতে পারে একটি টার্নিং পয়েন্ট যে নির্বাচনে জনগনের ভোটের অধিকার আবার প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।