দুই পথে দুই নেত্রী
গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : বাংলাদেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আর বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার রাজনীতি প্রায় একই সূত্র গাঁথা ছিল। আশির দশকে রাজনীতিতে আসা এই দুই নেত্রীকে প্রায় পাশাপাশি এবং সমার্থকভাবেই উচ্চারণ করা হতো। রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হলেই বলা হতো, দুই নেত্রী। কিন্তু ওয়ান ইলেভেন রাজনীতিতে শেখ হাসিনা এবং খালেদা জিয়ার দুটি পথ করে দেয়।
আজ বেগম খালেদা জিয়া দুর্নীতির অভিযোগে কারান্তরীণ। অন্যদিকে শেখ হাসিনা ১১ বছর ধরে ক্ষমতায় রয়েছেন। দল এবং দেশের সর্বময় ক্ষমতা প্রায় তার হাতে। দুই নেত্রীর এই দুটি পথ তৈরি করার পেছনে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে ওয়ান ইলেভেন। এমনটাই মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
ওয়ান ইলেভেন সরকার এসে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি দুটোতেই সংস্কার চেয়েছিল। দুই দল থেকেই শেখ হাসিনা এবং খালেদা জিয়াকে সরিয়ে দিতে চেয়েছিল। এই সরিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের যেমন একটি পক্ষ সংস্কার প্রস্তাবের পক্ষে ছিল, বিএনপিতেও তেমনটা হয়েছিল। আওয়ামী লীগে সংস্কার প্রস্তাবের পক্ষে যারা ছিলেন তাদের মধ্যে ছিলেন আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, প্রয়াত আবদুর রাজ্জাকের মতো নেতারা। অন্যদিকে বিএনপিতে খালেদা জিয়াকে সরিয়ে দেওয়ার পক্ষে ছিলেন তৎকালীন বিএনপি মহাসচিব মান্নান ভূঁইয়া, প্রয়াত অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানসহ প্রায় সিংহভাগ নেতা-কর্মী।
আজ দুই নেত্রীর দুটি পথ হওয়ার প্রধান কারণ ছিল দল। আওয়ামী লীগের মধ্যে সিনিয়র নেতারা সংস্কার প্রস্তাবের পক্ষে থাকলেও দলের তৃনমূলসহ লাখ লাখ নেতা-কর্মী এই প্রস্তাবকে প্রতিহত করে। শেখ হাসিনা ছাড়া কোনো নির্বাচন নয়, এই দাবিতে তারা দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখে। ফলে সংস্কারপন্থীরা দলে কোণঠাসা এবং ‘মীর জাফর’ হিসেবে পরিগণিত হন।
অন্যদিকে বিএনপি’তে শীর্ষ নেতাদের প্রায় সবাই সংস্কার প্রস্তাবের পক্ষে ছিলেন। তৃণমূল তাদের বিরুদ্ধে সেভাবে রুখে দাঁড়াতে পারেনি। যার ফলে দল দুর্বল হয়ে পড়ে। ২০০৮ এ যখন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, তখন বিএনপি ছিল বিভক্ত, কর্মীরা ছিল হতাশ। ওই নির্বাচনে ভরাডুবির মাধ্যমেই রাজনীতিতে খালেদা জিয়ার প্রথম মৃত্যু ঘটে।
ওয়ান ইলেভেন শেখ হাসিনাকে শিখিয়েছিল দলকে সংঘবদ্ধ রাখতে। দেশ পরিচালনার ক্ষেত্রে আমলাদের অংশীদারিত্বকে তিনি স্বীকৃতি দিয়েছেন। ২০০৯ সাল থেকে আওয়ামী লীগ যেভাবে এগিয়ে চলেছে, তাতে রাজনৈতিক সরকারের পাশাপাশি এই সরকারে বিভিন্ন আমলা এবং বিভিন্ন প্রভাবশালী গোষ্ঠীর সুস্পষ্ট প্রভাব রয়েছে।
অন্যদিকে বেগম খালেদা জিয়া ২০০৮ সালের নির্বাচনে সেই পুরোনো পথেই হাঁটতে চেয়েছিলেন। খণ্ডিত রাজনীতি নির্ভর থাকার কারণে তার রাজনৈতিক জীবনের দ্বিতীয় মৃত্যু ঘটে গেছে। ওয়ান ইলেভেন সরকার পরবারতন্ত্রের বিরুদ্ধে কথা বলেছিল। শেখ হাসিনা ২০০৯ সাল থেকে টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় তিনি কখনই তার পরবারের কাউকে মন্ত্রিত্ব বা কোনো পদ দেননি। অন্যদিকে বেগম খালেদা জিয়া তার পুত্র ত্রেক জিয়াকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পদ দিয়েছেন। পরিবার বেষ্টনীর মধ্যে থাকা বেগম খালেদা জিয়া রাজনীতিতে শেখ হাসিনার কাছ থেকে বহুদূরে ছিটকে পড়েছেন।
আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওয়ান ইলেভেনের ভালো ভালো বিষয়গুলো গ্রহণ করেছেন। ভোটার তালিকা সংস্কার, জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদানসহ ওয়ান ইলেভেন সরকার যেসব ভালো উদ্যোগ নিয়েছিল, সেগুলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এগিয়ে নিয়ে গেছেন। অন্যদিকে বেগম খালেদা জিয়া সবসময় ওয়ান ইলেভেনের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করে কার্যত নিজেকে নিঃশেষ করেছেন। এসব কারণেই রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন যে, দুই নেত্রীর দুটি পথরেখা তৈরি করে দিয়েছে ওয়ান ইলেভেন।